E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বাংলাদেশে উত্তেজনা বেড়েছে

মার্কিন ভূমিকা, নির্বাচনের গতিশীলতা এবং শাসনের বৈধতা নিয়ে দার্শনিক বিতর্ক

২০২৩ ডিসেম্বর ০১ ১৬:৫৭:৩৫
মার্কিন ভূমিকা, নির্বাচনের গতিশীলতা এবং শাসনের বৈধতা নিয়ে দার্শনিক বিতর্ক

দেলোয়ার জাহিদ


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নানাভাবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, একদিকে ৭ জানুয়ারী, ২০২৪ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য বাইরের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। ১১ দিনের ছুটির পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশে ফিরে এখনো নীরব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  নির্বাচনের আগে, একটি নিঃশর্ত সংলাপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল। বস্তুতঃ এ প্রস্তাব আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ই প্রত্যাখ্যান বা পাশ কাটিয়েছে, একমাত্র  জাতীয় পার্টি ছাড়া । আওয়ামী লীগের  দাবি যে তারা আগেও সংলাপের চেষ্টা করেছিল,আর  বিএনপি ছিল প্রতিক্রিয়াহীন । ডোনাল্ড লু-এর সংলাপের বার্তাটিকে অকার্যকর করায়, সংলাপের উইন্ডোটি এখন বন্ধ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পরিবর্তন  করেছে  এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। যা নাকি ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদেও  ফুটে উঠেছে "বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ইতোমধ্যে ২৯৮ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, অনিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ"।(প্রথমআলো, নিউয়র্ক নভেম্বর ২৮, ২০২৩) বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন প্রক্রিয়া, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির আন্দোলনকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই পর্যবেক্ষণের ফলাফল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে যা দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন অস্বস্তি বা পরিণতির কারণ হতে পারে।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য তাদের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো শিগগিরই তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সুশীল সমাজের কিছু সদস্য নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে অনির্বাচিত শাসন কায়েম করতে চান। নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন জায়গায় দরবার করছে একটি মহল। বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশে একটি নির্বাচন হলে এবং এই নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিত থাকলে সে নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে কিনা এমন প্রশ্ন তাদের। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচন বাস্তবে কেমন হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা ও দেখার নীতি গ্রহণ করেছে। সুশীল সমাজের কিছু সদস্য গণমাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষ করে বিএনপি ছাড়া একতরফা নির্বাচন দেশকে সংকটে ফেলবে কিনা এ নিয়ে । উপরন্তু, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন নির্বাচনী অভিযোগের সালিশি করতে পুনরায় তৎপরতা শুরু করেছে।

একটি অনির্বাচিত শাসনব্যবস্থার দার্শনিক মাত্রা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে , বিশেষ করে গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে, শাসন, বৈধতা এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রকৃতির মৌলিক নীতিগুলির অনুসন্ধান করা জড়িত। জনগণের দ্বারা শাসন এবং একটি অনির্বাচিত কর্তৃপক্ষের দ্বারা শাসনের মধ্যে উত্তেজনা, রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং অনুশীলনের মধ্যে জটিল একটি আন্তঃক্রিয়ার উপর জোর দেয়। গণতান্ত্রিক তত্ত্বে, বৈধতা বিষয়টি প্রায়শই শাসিতদের সম্মতি থেকে উদ্ভূত হয়। একটি অনির্বাচিত শাসন, সংজ্ঞা অনুসারে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কর্তৃত্ব নেয়ায় জনগণের সরাসরি ম্যান্ডেটের অভাব রয়েছে। দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি এমন একটি শাসনের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতা যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন খুবই সংগত । একটি সরকার কি সত্যিই জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করতে পারে যদি এটি তাদের দ্বারা নির্বাচিত না হয়?

প্রতিবেশী দেশ ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের জাদুর কাঠি হলো নির্বাচনী জটিলতাগুলো নিজের নেভিগেট করা, গণতান্ত্রিক নীতিগুলোকে সমুন্নত রাখা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত নির্বাচন পরিচালনা করার সক্ষমতার মধ্যে নিহিত। ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্রমাগত প্রচেষ্টা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা বজায় রাখতে কমিশনের সাফল্য অবদান রাখে। ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়শই যাদুকরী ভূমিকা পালন করে। এর প্রাথমিক দায়িত্বগুলির মধ্যে রয়েছে সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং গণতন্ত্রের নীতিগুলিকে সমুন্নত রাখা। এখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার মূল দিকগুলি এবং কীভাবে এটি বিতর্কের বাইরে থাকার চেষ্টা করে তা খতিয়ে দেখা উচিত। এটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়ী, মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট (MCC) এর বাস্তবায়ন, ভোটার নিবন্ধন এবং শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার, নিরাপত্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়, নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তি, মিডিয়া ব্যবস্থাপনা এবং যোগাযোগ, নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতা, স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়াও জবাবদিহিতা এবং তদারকি এগুলোর কি নেই বাংলাদেশে তা নিয়ে বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

নির্বাচনের গতিশীলতা এবং তত্বাবধায়ক শাসনের বৈধতা নিয়ে দার্শনিক ও আইনি বিতর্ক হতে পারে . তবে বাংলাদেশ যখন তার রাজনৈতিক যাত্রায় একটি জটিল সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে, এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আন্ত প্রক্রিয়া, দেশীয় রাজনৈতিক গতিশীলতা এবং শাসনের বৈধতার দার্শনিক প্রতিফলন নিঃসন্দেহে আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল রূপ দেবে এবং জাতির ভবিষ্যত গতিপথকে প্রভাবিত করবে।

লেখক: একজন মুক্তিযোদ্ধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি সদস্য, সভাপতি, বাংলাদেশ উত্তর আমেরিকান জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক, ও কানাডার বাসিন্দা।

পাঠকের মতামত:

১১ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test