E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস 

স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অবদান 

২০২৩ ডিসেম্বর ১১ ১৭:৫১:০২
স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অবদান 

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


১২ ডিসেম্বরকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ এর পরিবর্তে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা করে। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সরকার ১২ ডিসেম্বরকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।গত এক যুগে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। অনলাইনে অনেক সেবা মিলছে। ভার্চুয়াল লেনদেন বেড়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সরকার এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রার কথা ঘোষণা করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশ হবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সরকার বলছে, দেশের তরুণ প্রজন্মই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে দক্ষ জনশক্তি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্যমতে, গত এক যুগে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্র্রসারণ করা হয়েছে অপটিক্যাল ফাইবার। সরকারের দাবি, ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টার ও ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মোবাইল সিম নিবন্ধন হচ্ছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে। ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।

সরকারি ওয়েবপোর্টাল তথ্য বাতায়নে যুক্ত আছে ৪৬ হাজারেরও বেশি সরকারি অফিস। ৪৬টি হাইটেক পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে। দেশে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে বলে দাবি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের। বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৮ লাখ। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬১ লাখে।

মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স খাত সম্প্রসারিত হয়েছে। স্কুল-কলেজে ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে হচ্ছে।তাই স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ও শ্লোগান যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম এই প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান দেন।

ইতিহাস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ই ডিসেম্বর ২০২২ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সর্বপ্রথম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আগামী ২০৪১’ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ।’এ স্মার্ট শব্দটি দেশ ও শহরের ক্ষেত্রে প্রথম ব্যবহার শুরু হয় ভারতে স্মার্ট সিটি প্রকল্প নামে।

পরিকল্পনা

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ভিত্তি চারটি। এগুলো হচ্ছে— > স্মার্ট নাগরিক > স্মার্ট অর্থনীতি > স্মার্ট সরকার > স্মার্ট সমাজ।

স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এ চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কোনো অবশিষ্ট থাকবে না।স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকার এর মাধ্যমে সব সেবা এবং মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। আর স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর আপন কর্মগুনে বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি মাইলস্টোন দিয়েছেন। প্রথম ২০২১ সালের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ, যা আজ অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দ্বিতীয় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তৃতীয় ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সালের জন্য।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সরকার ১২ ডিসেম্বরকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস' হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে ১২ ডিসেম্বরকে 'স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম এই প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান দেন। স্মার্ট রাষ্ট্র বলতে আমরা এতটুকু বুঝি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রে থাকবেনা কোন বৈষম্যও ভোগান্তি। বাংলাদেশকে সেই স্মার্ট রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য তাঁর সরকার বাংলাদেশের রূপরেখাকে চার ভাগে ভাগ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকনোমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি-এ শব্দগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান উনারা। তারা মনে করেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে এবং অর্থনীতির সব কার্যক্রম প্রুযুক্তি ব্যবহার করে করা হবে।

স্মার্ট গভর্নমেন্ট ইতিমধ্যে অনেকটা হয়ে গেছে বাকিটা করে নিতে হবে এবং গোটা সমাজটাই একদিন স্মার্ট সোসাইটি হবে। এ বিবেচনায় ২০২১ থেকে ৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গেছে অর্থাৎ '২১ থেকে '৪১ পর্যন্ত সময় কিভাবে বাংলাদেশ উন্নয়ন হবে, তার কাঠামো পরিকল্পনা বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্রণয়ন করেছে, যা জনগণের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে বলে বিজ্ঞজন মনে করেন। এজন্য শেখ হাসিনা ২১০০ সালেও এ বঙ্গীয় বদ্বীপ যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয়, দেশের মানুষ যাতে 'সুন্দর, সুস্থ ও স্মার্টলি' বাঁচতে পারে, সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দেওয়ার কথা বলেন। স্মার্ট বাংলাদেশ কি এবং কিভাবে তা অর্জন করা সম্ভব তা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত, কেননা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে,তাই দেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে হবে। আগামীতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে, তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য,আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্হায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারবে। দেড় যুগ আগে হাতে নেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনা এখন শতভাগ সফল। বিগত করোনা মহামারির ক্ষয়ক্ষতি অনেক উন্নত দেশের চেয়েও সুন্দরভাবে সামাল দিতে পেরেছে বাংলাদেশ, যার অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন।

ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে,দেশের সবকিছু উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা, যাকে এক কথায় ডিজিটালাইজেশণ বলা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি, একসময় আমাদের দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেক দেশেই কম ছিল, সেই পাসপোর্ট যখন সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে (ই-পাসপোর্ট)রূপান্তর করা হলো, তখন এর গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুণ বেড়ে গেল। সরকার সব নাগরিকের জন্য ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) চালু করেছে, যেহেতু এনআইডি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর একটি ডকুমেন্ট, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, দেশের বাইরেও অনেক বেশি। অথচ বিদেশিরা আগে আমাদের দেশের কাগজপত্র খুব সহজে বিশ্বাস করতে চাইত না। আবার বর্তমান যুগে সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর না করতে পারলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কি মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত আমাদের দেশের ব্যাংক খাত। দেড় যুগ আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা হলেও দেশের ব্যাংক খাত সেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি কিংবা প্রযুক্তিনির্ভর হলেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা।

তিনি বলেন, বিচ্চিন্নভাবে একেক ব্যাংক একেক রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রকৃত ডিজিটাল ব্যাংকিং থেকে আমাদের দেশের ব্যাংক খাত অনেক দূরে। আজ বিশ্বের নামকরা সব ব্যাংক যে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে তার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের ব্যাংকগুলোর পিছিয়ে থাকা। একারণে স্মার্ট বাংলাদেশ এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী এক কর্মপরিকল্পনা। অনেকেই হয়তো বলার চেষ্টা করবেন, দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ নামের স্লোগানের কি প্রয়োজন? প্রয়োজন অবশ্যই আছে। স্মার্ট বাংলাদেশ তো শুধু একটি স্লোগান নয়, আগামী দুই যোগ ধরে চলবে এমন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের নাম স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল গ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেন। সামান্য চোখ-কান খোলা রাখলেই ভবিষ্যতে যাদের যোগ্যতা থাকবে তারাই ভালো কাজ পেতে পারেন। অনেক বেশি কর্মসংস্হানের সৃষ্টি হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে। তখন বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানের চেয়ে ৫-১০ গুণও বাড়তে পারে । তাই এই দিকে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ,স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।এ সম্পর্কে কিছু অবতারণা করে তিনি বলেন, দেশকে "স্মার্ট বাংলাদেশে" পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ এবং "স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।আর তার অধিকাংশ এখন বিশ্বের মানুষের কাছে দৃশ্যমান হয়ে গেছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ প্রতিষ্ঠা ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশ রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ রোডম্যাপের চারটি পিলার- ১। স্মার্ট সিটিজেন, ২। স্মার্ট সোসাইটি , ৩। স্মার্ট ইকোনমিও ৪।স্মার্ট গভরন্যান্স। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে, ১। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ ভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই 'স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোরস' গঠিত হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ২। অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলা এবং পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসতে ডিজিটাল ইনক্লুশন ফর ভারনারেবল এক্সেপশন(ডাইভ) উদ্যোগের আওতায় আত্মকর্মসংস্হানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ। বাস্তবায়নের দায়িত্ব তথ্যপ্রযুক্তি বিভগের। ৩। শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম নিশ্চিতে 'ওয়ান স্টুডেন্ট,ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম' এর আওতায় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। যা বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, মাদ্রাসাও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৪। স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তুলতে ডিজিটাল লিডারশীপ অ্যাকাডেমি স্হাপন। বাস্তবায়ন করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৫। ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট,মাঝারি ব্যবসাগুলোর জিডিপিতে অবদান বাড়াতে এন্টারপ্রাইজভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী স্টার্টআপ হিসেবে প্রস্তুত করা। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তিবিভাগ। ৬। অন্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেশন অব টুমোরো(এসেট) প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এটি বাস্তবায়ন করবে। ৭। বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা। এটি বাস্তবায়নে থাকছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। ৮। সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ(ক্লিক) স্হাপন। বাস্তবায়নে থাকছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। ৯। এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠা। বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তিবিভাগ। ১০। সেলফ অ্যামপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড এন্টরপ্রেইনরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) প্লাটফর্ম স্হাপন। এটি বাস্তবায়ন করবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। ১১। কটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লিংকেজ ল্যাব(সেল)স্হাপন।তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ক করবে। ১২। সার্ভিস এগ্রিগ্রেটর ট্রেইনিং (স্যাট) মডেলে সরকারি সেবা ও অবকাঠামো নির্ভর উদ্যোক্তা তৈরি করা। বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। ১৩। সকল ডিজিটাল সেবাকে কেন্দ্রিয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডে নিয়ে আসা। এটি বাস্তবায়নে থাকবে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। ১৪। ডেটা নিরাপত্তা আইন,ডিজিটাল সার্ভিস আইন, শেখ হাসিনা ইন্সটিটিউট অব ফন্ট্রিয়ার টেকনোলজি (শিফট)আইন, ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ অ্যাকাডেমি (আইডিয়া)আইন, এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন(আকাশ)আইন, ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি আইনও জাতীয় স্টার্টআপ পলিসি প্রণয়ন। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিভাগ।

উল্লেখ করা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ মিলিওন মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে,যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৩ সালের মধ্যে আরও ২০ লাখ মানুষ বাড়তে পারে। বর্তমানে দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৬৩ শতাংশের বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহারের আওতায় আসবে।তাই স্বপ্ন যে বাস্তবায়ন হচ্ছে তা এখন আমরা অনুভব করতে পারছি। শেখ হাসিনা সরকারের শেষ সময় এখন। আসছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তিনি যদি আবার ক্ষমতায় আসেন তাহলে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে যে কাজ বাকী রয়েছে তিনি তা করবেন। এজন্য এবারের নির্বাচন এদেশের উন্নয়নের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

জনগণকে সঠিক চিন্তাভাবনা করতে হবে দেশের উন্নয়নের জন্য। উনাকে যদি ভোটের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসা না হয় তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশের অসমাপ্ত কাজ অন্ধকারে বিলীন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ভাবতে হবে আর কাজ করতে হবে দেশের জনগণকে এ বিষয়ে প্রত্যকের নিজস্ব অবস্হান থেকে। ইতিমধ্যে যারা আমাদের একদিন থলাবিহিন ঝুড়ির অপবাদ দিতেন তিনিরা আমাদের এই মাইলফলক উন্নয়ন দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরার মত অবস্হা হয়েছে। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক কথাই বলছেন উনারা । উনারা যা বলেন তিনিরা তা করেন না চাপিয়ে দিতে চান অন্যদের উপরে তা সবাই জানে এখন। কিন্তু এরা ক্ষমতার বাহাদুরি দেখাতে সদা ব্যস্ত থাকেন সব সময় । তাই আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এগিয়ে যেতে হবে আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তায়। আবার যখন আমরা কিছু করে ফেলি তখন উনারা কষ্ট পেয়েও তা মেনে নেন তা অতীতেও দেখা গেছে। এক কথায় এদেশের মানুষকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য কোন ছাড় দিলে চলবে না।

শেখ হাসিনা সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। আর তাই মহাকাশে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে পদ্মা সেতু, রাজধানীর নাগরিক জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে মেট্রোরেল। শিক্ষা, নারীশিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ সবকিছুতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। তাই বিশ্বাস এবং আস্থা রাখা যায় শেখ হাসিনার উপর। যদি উনি ক্ষমতায় থাকেন এবং দেশের জনগণ এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেন তবে 'স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন২০৪১' ও একদিন বাস্তবায়ন হবে। আর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এক শিক্ষার্থী, এক ল্যাপটপ, এক স্বপ্নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আওতায় সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে।ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

টাস্কফোর্স গঠন

বাংলাদেশ সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট “স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে। এ টাস্কফোর্সের চেয়ারপারসন হলেন প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বাকি ২৯ জন সদস্য।

টাস্কফোর্সের কার্যাবলী

* অগ্রসরমান তথ্য প্রযুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান;

* শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রমকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান;

* স্মার্ট এবং সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক বিধিবিধান প্রণয়নে দিক নির্দেশনা প্রদান। ইত্যাদি।

প্রথম সম্মেলন

স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার গত ৫ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ৭ অক্টোবর “স্মার্ট বাংলাদেশ সম্মেলন” শুরু করেছে। ২০২৩ সালে এ সম্মেলন প্রথম শুরু হয়।ব্যবসায়ীরা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে সম্মেলন করে থাকে।

পরিশেষে বলতে চাই, একটি দেশকে স্মার্ট বানাতে হলে দরকার হয় একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়কের। এই রাষ্ট্রনায়কের থাকতে হবে দেশকে নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং তার সফল বাস্তবায়নের সদিচ্ছা। সততা, সৎ সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি কাজ করে যাবেন আপন ইচ্ছায়। বিশ্বের স্মার্ট দেশও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে থাকতে হবে তার বিশাল অভিজ্ঞতা আর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি তৈরি করবেন তার আগামীর পথ। সফলতার জন্য তাকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে জেনেও তার কোন ক্লান্তি আসবেনা। তিনি যেন থামতে জানেন না। সব বাধা কে উড়িয়ে দেওয়ার মত দুর্নিবার চেতনা নিয়ে তিনি এগিয়ে যাবেন আপন গতিতে। দুর্নীতি আর বিলাসিতা তার জীবনে স্পর্শ করেনি।

নিজেকে সম্মান করার মত যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে তাঁর মাঝে। যিনি নিজেও আত্মনির্ভরশীল এবং তার জাতিকেও বানাতে চাইবেন আত্মনির্ভরশীল। আর সেই নেতা বা রাষ্ট্রনায়ক হলেন শেখ হাসিনা।তাই আমাদের বিশ্বাস আগামী ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ একই রকমভাবে তার উপরে বিশ্বাস রাখবে কারণ এই মুহূর্তে আমাদের সকলের মাথায় যে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি।

বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন। ফলে, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি এবং উন্নয়ন ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছেন। সাফল্য এসেছে নানা দিক থেকে। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামীর প্রযুক্তি বিপ্লবে নেতৃত্বের আসনেই থাকবে বাংলাদেশ।তাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা মারাত্মক অন্যায়। মিথ্যা কথা বলে তথ্য প্রকাশ করা ইসলাম নিষেধ করছে। একটি তথ্য উপস্থাপন করতে হলে অবশ্যই সুন্দর, সাবলীল, যুগোপযোগী মিষ্টি ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে।

লেখক : কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test