E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’-কে জাতীয় দিবসের অন্তর্ভুক্ত করা হোক

২০২৩ ডিসেম্বর ১৫ ১৬:৩৩:৩৫
‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’-কে জাতীয় দিবসের অন্তর্ভুক্ত করা হোক

শিতাংশু গুহ


অনেকে হয়তো খেয়াল করেননি যে, জাতীয় দিবসের লম্বা তালিকায় ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ নেই! ঢাকার দৈনিক ইত্তেফাক ১৩ই ডিসেম্বর ২০২৩ এ এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সরকারীভাবে দেশে এখন ৮৯টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে (৪ঠা ডিসেম্বর ২০২২ প্রজ্ঞাপন অনুসারে), এরমধ্যে জায়গা হয়নি ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’-এর। কারণ কি? এটি কি ভুল না ইচ্ছাকৃত? 

‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। এবছর (২০২৩) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী একসাথে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবার কনকনে শীতের মধ্যে সাড়ম্বরে দিবসটি পালন করেছে। সরকারি গেজেটে না থাকায় হয়তো নিউইয়র্কে কনস্যুলেট ও জাতিসংঘ মিশনে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালিত হয়নি।

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি আওয়ামী লীগের আমলে নির্মিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলেই এটি জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এটি ভুল তা ভাবার কারণ নেই, সিদ্ধান্ত নিয়েই এটি করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি কে বা কারা নিয়েছেন তা জানা দরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, তালিকায় থাকুক বা না থাকুক, দিবসটি পালিত হচ্ছে, এবং হবে। খুব ভাল কথা।

মানুষ ভাবতে পারে, ৮৯টি জাতীয় দিবস কি কি? আমার জানা নেই! তবে “ক” তালিকায় প্রধান প্রধান ২২টি দিবস আছে। “খ” তালিকায় ৩৩টি ঐতিহ্যগত দিবস আছে। “গ” তালিকায় দেখলাম ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ আছে। এটি দেশে পালিত হয় বলে শুনিনি, হয়তো এ কারণেই মানসিক সুস্থতার অভাবে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ বাদ পড়েছে?

দেশে এখন যাঁরা বুদ্ধিজীবী, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এদের ‘কর্পোরেট বুদ্ধিজীবী’ বলা যায়! এদের ক’জনার বক্তব্য হচ্ছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কারো কারো ভূমিকা ভালো ছিলোনা। এঁরা বলতে চাইছেন, ওঁরা (শহীদ বুদ্ধিজীবীরা) মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় ভালোই ছিলেন, চাকুরী করেছেন, বেতন নিয়েছেন। ১৪ই ডিসেম্বরের আগেই দেশে বেশ ক’টি অঞ্চল মুক্ত হয়, তাঁরা সেখানেও যাননি, যেতে পারতেন।

কেন তাঁরা মুজিবনগর বা মুক্তাঞ্চল যাননি, এ প্রশ্নের উত্তর কঠিন। সাড়ে ৫কোটি মানুষও দেশের ভেতরে ছিলো, এবং এঁরা সবাই রাজাকার ছিলোনা। এদের না যাওয়ার বহুবিধ কারণ থাকতে পারে, কারো কারো ক্ষেত্রে ‘পাকিস্তান প্রীতি’ থাকাও সম্ভব! কোন কোন বুদ্ধিজীবীর বিতর্কিত ভূমিকা হয়তো ছিলো, কিন্তু এজন্যে ঢালাও ভাবে সকল বুদ্ধিজীবীদের দায়ী করাটা কতটা সমীচীন?

এটি শহীদ পরিবারের প্রতি অবজ্ঞা। শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা। এটি ঠিক তাঁরা চাকুরী করেছেন, বেতন নিয়েছেন, এবং এটিও সত্য, স্বাধীনতার ঊষালগ্নে তাঁরা তাঁদের মূল্যবান জীবনটি দিয়ে গেছেন। প্রশ্ন ওটা স্বাভাবিক যে, পাকিস্তান প্রীতি-ই যদি তাঁদের দেশে থাকার একমাত্র কারণ হতো, তাহলে তারা রাজাকারের হাতে নিহত হবেন কেন? শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে এমনতর একটি সরল-রেখা টানা কি উচিত?

জাতীয় জীবনে কখনো কখনো ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে হয় বৈকি। একটি মীমাংসিত বিষয়কে বিতর্কিত করা ঠিক নয়। ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ বিতর্কিত করলে এক সময় সকল অর্জন বিতর্কিত হয়ে যেতে পারে। তাই অনতিবিলম্বে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’-কে জাতীয় দিবসের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test