E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হতে চেয়েছিলেন নায়ক, হয়েছেন খল নায়ক

২০২৩ ডিসেম্বর ২৩ ১৭:০১:০৭
হতে চেয়েছিলেন নায়ক, হয়েছেন খল নায়ক

চৌধুরী আবদুল হান্নান


ইতিহাসের এক প্রাচীন রাজা, চীন দেশের। নাম ওয়াং চেং। নিজের সম্পর্কে তার অতি উচ্চ ধারণা। তিনি চাইতেন তার লোকেরা অতীত ভুলে যাবে; ইতিহাস শুরু হবে তার সময় থেকে। তার পূর্বে অনেক সফল রাজা ছিলেন, তাতে কী? আদেশ জারি করে উন্নতমানের বই পুড়িয়ে দেওয়া হলো; বিশেষ করে ইতিহাস ও মর্যাদাবান লোকদের নিয়ে যে সকল পুস্তক। অনেক পন্ডিত ব্যক্তি যারা তাদের প্রিয় বইগুলো লুকিয়ে রেখে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

খ্রিষ্টপূর্ব ২০৭ এ তার মৃত্যুর পরই তার সকল কর্মের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। তিনি নায়ক হতে চেয়েছিলেন কিন্ত ইতিহাস তাকে খল নায়ক হিসেবেই চিহ্নিত করেছে।

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খান কীভাবে “মীরজাফর” হলো তা আমদের জানা। এ নামটি বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তার বাড়িটি এখন “নিমক হারাম দেউরি” নামে পরিচিত। আজও বাংলা ভাষাভাষীরা অবিশ্বাসীকে মীর জাফরের সাথে তুলনা করে থাকে।

খন্দকার মোশতাকের মাথায় কালো টুপি, মোশতাক মার্কা টুপি; মাথার ভেতর ঘাপলা আর প্যাঁচ।

ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের নির্দেশে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের “জাতির সূর্য সন্তান” বলে আখ্যায়িত করেছিল খুনী মোশতাক। বঙ্গবন্ধু হত্যার আগের দিন তাঁর জন্য হাঁসের ভুনা মাংস পাঠিয়েছিল এই কুলঙ্গার।

ধর্মীয় ও প্রচলিত বিশ্বাস — সকল ফেরেস্তা আল্লাহর নির্দেশ পালন করেছিল, কেবল একজন বাদে; আল্লাহর অবাধ্য হয়ে সে পরিণত হয়েছিল ইবলিস বা শয়তানে। একদা ফেরেস্তা কূলের শিরোমণি অভিষপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছিল এবং এখন তার একমাত্র কাজ মানব জাতিকে নিরন্তর বিপদগামী করা। পৃথিবীতে যত খল নায়কের আবির্ভাব ঘটেছে, তাদের ওপর রয়েছে এই শয়তানের প্রভাব।

‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যারা বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাসকে মুছে দিয়ে নতুন ইতিহাস রচনায় ব্রতি হয়েছে তারাও একদিন খল নায়কে পরিণত হবে।

রাষ্ট্র ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ২১ বছর পাকিস্তানি ভাবাদর্শে দেশে অপসাশন চালালো। আমেরিকা প্রবাসী লেখক শিতাংশু গুহর ভাষায় — “বিজিতরা এখন বিজয়ী”।

নতুন প্রজন্মের সামনে বঙ্গবন্ধুর ছবি নেই; পাঠ্যপুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফলা হয়েছে। সেখানে একজন মেজরের আড়ম্বর উপস্থিতি কিন্ত স্বল্পবুদ্ধি অর্বাচীনেরা জানে না, মহামানবের কীর্তিগাঁথা মুছে ফেলা যায় না।

মেজর জিয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা সংগ্রামে সেক্টর কমান্ডার। অন্যান্য সেক্টর কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ যেভাবে দেশ শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধ করেছেন, তেমনি মেজর জিয়ারও যুদ্ধক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে এবং ইতিহাস সেভাবেই তাঁকে মূল্যায়ন করবে। কিন্ত অতি উৎসাহী স্বার্থান্বেষী মহল প্রচার শুরু করে যে মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরই মুক্তযুদ্ধ শুরু হয়েছিল অর্থাৎ ১৯৪৮ থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আর সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি-পর্বকে অস্বীকার করা। এভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে ছোট করে দেখার অপপ্রয়াস কেবল স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে সম্ভব। যারা মেজর জিয়াকে এভাবে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ বিবেচনা করার মতো ধৃষ্টতা দেখাতে সাহস করতে পারেন, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। এমন ডাহা মিথ্যা প্রচারণা করে ইতিহাস বদলানো যায় না।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সুস্থ ধারার রাজনীতির দিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিএনপির মধ্যে সংস্কার আনতে হবে, নতুন নেতৃত্ব আসতে হবে যারা পাকিস্তানি ভাবাদর্শ পরিত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে রাজনীতির হাল ধরতে পারেন।

সেক্ষেত্রে বিএনপিকে আঁকড়ে থাকা বাদবাকি বিষ পিঁপড়াগুলোকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

বর্তমানে বিএনপি দেশে যে নাশকতা, অস্থিরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে দলটি অচিরেই জনগণের কাছে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে আবার পূর্বের মতো জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জনে মরিয়া হয়ে কাজ করতে হবে।

৭৫ বছরের পুরাতন এই দলটি অন্যের দ্বারা চিরদিন শাসিত দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে দেশের জন্য আর একটি কাজ করতে হবে যা স্বাধীন দেশটির নাগরিকদের একান্ত প্রত্যাশা। আর তা হলো- মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ না করে এই দেশে কেউ ভবিষ্যতে আর রাজনীতি করতে না পারে, এমন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। অন্যথায় আমরা স্বাধীন ভূখন্ডটাই কেবল পেলাম, পূর্ণতা এলো না। দেশ গড়া, সোনার বাংলা গড়ার দায়িত্বটা এবার নতুন প্রজন্মের হাতে ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ এই কাজটিই করুক।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test