E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর উপহার ‘বাংলাদেশ’

২০২৪ মার্চ ১৯ ১৬:০৫:১৬
বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর উপহার ‘বাংলাদেশ’

চৌধুরী আবদুল হান্নান


মার্চ মাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম মাস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মাস। স্বাধীনতার মর্ম সেই জাতি ভালো বুঝে, যারা এক সময় পরাধীন ছিল, অন্যের দ্বারা শাসিত-শোষিত হয়েছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের এমন মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, পাকিস্তানিদের ২৩ বছরের শাসন বাঙালীদের শোষণ বঞ্চনার করুণ ইতিহাস।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু দ্বি-জাতি তত্ত্বের অসারতা অনুধাবন করেছিলেন এবং বাঙালি জাতিসত্তার স্বাধীন প্রকাশ ও বিকাশে তৎপর হয়ে ওঠেন।

অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতা দিয়ে বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন তিনি এবং উপযুক্ত সময়ে যাদুর বাঁশি বাজালেন, স্বাধীনতার ডাক দিলেন। শেখ মুজিবের হাতে একটি জালিম রাষ্ট্র পাকিস্তান বধ; সময় মাত্র ৯ মাস। জন্ম হলো একটি নতুন দেশের।

বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর উপহার স্বাধীন একটি দেশ— বাংলাদেশ। পাকিস্তান নামক একটি অমানবিক রাষ্ট্রের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেল বাঙালি। ব্রিটিশ পত্রিকা “দ্য টাইমস” ১৬ অগাস্ট (১৯৭৫) প্রকাশিত সংবাদে বলেছে, “বঙ্গবন্ধু সব সময় এ কারণে স্মরণে থাকবেন, তাঁকে ছাড়া বাঙালি জাতি তার নিজস্ব স্বাধীন, সার্বভৌম সত্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারতো না।”

আর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জোর দিয়ে বলেছে, “মুজিব না থাকলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না।”

কিন্ত বেদনাহত হতে হয় যখন ভাবি, অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কতদূর অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছি। অনেক সময় পার হয়ে গেছে, ৫৩ বছর তো কম সময় নয়।

নতুন প্রজন্ম কি কখনও জানতে পারবে, স্বাধীনতা অর্জনের মতো একটি বিশাল অর্জনের পিছনে রয়েছে কত গভীর আত্মত্যাগ আর আমাদের নাড়ি ছেঁড়া ক্রন্দনের ইতিহাস? কত মূল্যের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের এই শত্রুমুক্ত ভূখন্ড?

এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল সবার দেশ হয়ে ওঠার জন্য কিন্ত এক পর্যায়ে মূল সংবিধান সংশোধোনের মাধ্যমে একটি ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এর অনুপ্রবেশ ঘটানো হয় এবং এভাবে সামাজিক সম্প্রীতির পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বাহাত্তরের সংবিধান রচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু আদর্শ ও নীতিকে ধারণ করে। এই সংবিধানকে ধারণ করলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা হবে।”

এই বড় অর্জন মাটি হয়ে যাবে যদি দেশের একটি শিশুও কেবল ভিন্ন ধর্মে জন্ম নেওয়ার কারণে মনের মধ্যে চাপা ভয় নিয়ে বড় হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার অনুসারী ও প্রবর্তক।

বিশ্বের কয়েকটি মুসলিম দেশের বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করার অনুরোধের জবাবে বঙ্গবন্ধু পরিস্কার বলেছিলেন — হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাই বাংলাদেশ সকল ধর্মের মানুষের দেশ, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।

অকৃতজ্ঞ জাতি! ইতিহাস থেকে তাঁর অবদান মুছে ফেলারও চেষ্টা হয়েছে দীর্ঘ ২১ বছর। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছিল।উদ্দেশ্য ছিল একজন সৈনিক আর সোনার বাংলার জনক বঙ্গবন্ধুকে সমকক্ষ করার অপচেষ্টা।

উচ্চ আদালত ২০০৯ সালে এক পর্যবেক্ষণে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন— “পদক দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে।”

ওরা মূর্খ, জানে না, মহামানবের কীর্তি কখনও খাটো করা যায় না, মুছে ফেলাও যায় না; বরং সে কীর্তিগাঁথা কেবল আঁধার দূর করে আলো ছড়াতে থাকে।নিবিড় ঘন আঁধারেও ধ্রুবতারার মতো জ্বলবে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া অবিনাশী কীর্তি।

নিপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু থাকবেন ইতিহাসের নায়ক হয়ে, জাতির পিতার আসনে, কোনো শক্তিই তাঁকে আর ছোট করতে পারবে না।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা বিচকে “বঙ্গবন্ধু বিচ” নাম করণের জন্য যারা উৎসাহী তারা ভুল করছেন, এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে না, কারণ তিনি এমনিতেই অনন্য উচ্চতায় রয়েছেন। তাঁর কর্মই তাঁকে অমরত্ব দিয়েছে। অতি উৎসাহীদের মূল উদ্দেশ্য জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর চেয়ে শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসী নেতা বাংলাদেশে আর কখনও আসেনি, তিনি কখনও তাঁর ধারাবাহিক চিন্তা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর জীবন থেকে নেওয়া কর্ম আদর্শ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বাধ্যতামূলক করতে হবে, প্রতিটি সভা সমাবেশে তাঁর সাহস, ক্ষমাশীলতা, উদারতা, মানবিকতাবোধ, অসাম্প্রদায়িক বাণী বিরামহীন প্রচার করে যেতে হবে। এ কাজটি আওয়ামী লীগের একার দায়িত্ব নয়, সকলের দায়িত্ব; কারণ তিনি আর দলীয় বৃত্তে আবদ্ধ নেই, বঙ্গবন্ধু এখন সর্বজনীন।

ভারতের জাতির পিতা মাহাত্মা গান্ধী নেই কিন্ত তাঁর মানবতাবোধ, অহিংস নীতি আজও আলো দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর চেতনা, আদর্শ আমাদের বর্তমান এবং আগামীর দিক নির্দেশনা, এগিয়ে যাওয়ার প্ররণা যা কখনও নির্বাপিত হবে না। জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test