E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যক্ষ্মা আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন জনসচেতনতা

২০২৪ মার্চ ২৩ ১৭:২০:০৯
যক্ষ্মা আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন জনসচেতনতা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


২৪ মার্চ রবিবার ‘বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২৪। যক্ষ্মা রোগের ক্ষতিকর দিক বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই রোগটি নির্মূলে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। যক্ষ্মা সাধারণত টিবি নামে পরিচিত একটি গুরুতর ফুসফুসের রোগ। যক্ষ্মা একটি প্রাচীন রোগ। এটি মারাত্মক রোগ হিসেবে পরিচিত সম্ভবত প্রস্তরযুগ থেকে। মিসরে তিন হাজার বছরের পুরনো মমির ফুসফুসে যক্ষ্মার ক্ষত পাওয়া গেছে। গ্রিক স্বর্ণযুগে যক্ষ্মা ‘Phthisis’ নামে পরিচিত ছিল। সাধারণভাবে একে ‘ক্ষয়রোগ’ বলা হতো।

সপ্তদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সিসকাস সিলভিয়াস নামে নেদারল্যান্ডসের লিডেনবাসী এক ব্যক্তি মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ফুসফুসে গোটা আকৃতির ক্ষত দেখতে পেয়ে এর নাম দেন টিউবারসেল। জোহান শনলেইন ১৮৩৯ সালে এই রোগের নাম দেন টিউবারকুলোসিস।

যক্ষ্মার সঠিক চিকিৎসা না করালে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা শুরু করা হলে রোগীর কাছ থেকে খুব বেশিদিন যক্ষ্মা ছড়ায় না এবং সঠিক চিকিৎসায় সাফল্য প্রায় শতভাগ, কিন্তু কখনো কখনো টিবি ভালো হয়ে আবার আক্রমণ করতে পারে কিংবা মৃত্যু ঘটাতে পারে।

ড. রবার্ট কচ ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ জার্মানির বার্লিনে যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার করেন। এর পরই বিসিজি টিকা, টিউবারকুলিন টেস্ট, নানা প্রকার ওষুধ, ‘ডটস পদ্ধতি’ ইত্যাদি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ড. রবার্ট কচের যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কারকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর ২৪ মার্চ ‘বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।

আর এটি একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা হাঁচি এবং কাশির মাধ্যমে সংক্রামিত ফোঁটাগুলির মাধ্যমে একজন সংক্রামক ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

এই রোগটি একসময় খুব বিরল ছিল কিন্তু এটি ১৯৮৫ সালে এইচআইভি এইডস মামলার বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে শুরু করে (এটি একটি প্রধান কারণ ছিল কারণ সংক্রামিত ব্যক্তি ইমিউনোকম্প্রোমাইজড হয়ে যায় যা টিবি-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস করে)।

যক্ষ্মা কতটা সাধারণ?

যক্ষ্মা একটি প্রচলিত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা রয়ে গেছে, যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আরও সাধারণ যেখানে স্বাস্থ্যসেবার সীমিত অ্যাক্সেস এবং দরিদ্র জীবনযাত্রার অবস্থা। যাইহোক, এটি উন্নত দেশগুলিতেও বিদ্যমান, যদিও কম হারে।অবশ্যই! এখানে যক্ষ্মা (টিবি) রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সা পদ্ধতির একটি বিশদ বিভাজন রয়েছে।

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ

আমাদের দেহের টিবি-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের দেহের একটি ইমিউন সিস্টেম রয়েছে যা তাদের সনাক্ত করতে পারে এবং অসুস্থতা ধরা থেকে আমাদের প্রতিরোধ করতে পারে। এইভাবে, ডাক্তাররা যক্ষ্মা রোগের লক্ষণগুলির উপর নির্ভর করে টিবিকে দুটি ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন:

সুপ্ত যক্ষ্মা: এই ক্ষেত্রে, ব্যক্তি টিবিতে আক্রান্ত হলেও তার কোনো উপসর্গ নেই। এই রূপটি টিবি সংক্রমণ বা নিষ্ক্রিয় টিবি নামেও পরিচিত। এটি প্রকৃতির দ্বারা সংক্রামক নয় তবে এর চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পরবর্তী পর্যায়ে সক্রিয় টিবিতে রূপান্তরিত হতে পারে।

সক্রিয় যক্ষ্মা: এই বৈকল্পিক লক্ষণগুলি দেখায় এবং আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। এটি টিবি রোগ নামেও পরিচিত। এটি বাতাসের ফোঁটার মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি কয়েক সপ্তাহ পরে এবং এমনকি কয়েক বছর পরেও ব্যক্তি টিবি-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরেও হতে পারে!

যক্ষ্মা রোগের কিছু লক্ষণ ও লক্ষণের মধ্যে রয়েছে

* ক্ষুধামান্দ্য * রাতের ঘাম * চরম ক্লান্তি * বুকে ব্যথা * কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সাথে ব্যথা * ৩ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে অবিরাম কাশি * শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া * জ্বর * অনিচ্ছাকৃত বা অযাচিত ওজন হ্রাস * শ্লেষ্মা বা রক্ত কাশি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড বা কিডনিকে প্রভাবিত করতে পারে।

যক্ষ্মা রোগের কারণ

আমরা প্রায়শই বুঝতে পারি না যে আমরা যখনই কথা বলি, কাশি বা হাঁচি করি তখন আমরা বাতাসে মাইক্রো ফোঁটা ছেড়ে দিই। এই মাইক্রোড্রপলেটগুলি টিবি-সৃষ্টিকারী জীবাণুর বাহক হয়ে ওঠে। সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি যখন হাসে, কথা বলে, গান গায়, কাশি বা হাঁচি দেয়, তখন সে বাতাসে মাইক্রোড্রপলেটের সাথে টিবি-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ছেড়ে দেয়।

যদিও টিবি ছড়ানো সহজ কিন্তু ধরা কঠিন; কয়েকটি কারণ থাকতে পারে যা সহজেই যক্ষ্মা ছড়াতে পারে যেমন: আপোষহীন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

* এমন এলাকায় ভ্রমণ করা বা স্বাভাবিক যক্ষ্মা রোগের হার বেশি আছে এমন এলাকায় বসবাস করা

* প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ

* সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে বসবাস

* দুর্বল বায়ুচলাচল এবং অত্যন্ত ভিড়ের মতো এলাকায় কাজ করা মানসিক হাসপাতাল, কারাগার, নার্সিং হোম ইত্যাদি

টিউবার কুলোসিস এর প্রকারভেদ

* একিউট টিউবার কুলোসিস: ইহা মানুষকে হঠাৎ আক্রমন করে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অতিদ্রুত জীর্ন শীর্ন হয়ে যায়।

* নিউমোনিক থাইসিস: এতে সাধারণত: ফুসফুস আক্রান্ত হয় এবং নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

* হেমোরেজিক থাইসিস: ফুসফুস দিয়ে রক্ত উঠে ও মুখ দিয়ে নির্গত হয়।

* ফাইব্রয়েড থাইসিস: নিউমোনিয়া, প্লুরিসি প্রভৃতি রোগের পুরাতন অবস্থায় ইহা সৃষ্টি হয়।

* স্ক্রুফুলা থাইসিস: গন্ডমালা রোগ হতে ইহা সৃষ্টি হয়।

* ল্যারিনজিয়াল থাইসিস: রোগীর কণ্ঠনারীতে গুটিকা হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

টিউবারকুলোসিস এর কারণ ও উপসর্গ

* মাইকো ব্যাকটেরিয়াম টিউবার কুলোসিস নামক জীবাণু সংক্রমনই এর মুল কারণ। দেহের প্রতিরোধ শক্তি কমে গেলেই এরা রোগ সৃষ্টি করার সুযোগ পায়।

* অনিয়মিত আহার, পুষ্টিকর খাদ্য ও ভিটিামিন যুক্ত খাদ্যের অভাব, শৃংখলবিহিন জীবন যাপনের ফলে এই রোগ সৃষ্টি হয়।

* নোংরা পরিবেশ, স্যাঁত স্যেঁতে, আলোবাতাস হীন পরিবেশ, কঠোর পরিশ্রম । খাদ্যের অভাব, ক্রমাগত দারিদ্র, অভাব অনটন, দুশ্চিন্তা, প্রভৃতি আনুষঙ্গিক কারণে এই রোগ কৃষ্টি হয়।

* বংশগত পীড়া ভোগার ইতিহাস।

* নৈতিক অবনতি, পুন:পুন: গর্ভধারণ, একপাত্রে পানাহার প্রভৃতি।

জটিল উপসর্গ সমূহ

* যক্ষ্মার সঙ্গে প্লুরিসির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

* জীবাণুর আক্রমনে প্লরাতে ফুটা হইয়া যায়, প্লুরায় পুঁজ হয়।

* আন্ত্রিক যক্ষ্মার সৃষ্টি হতে পারে।

* দেহের বিভিন্ন স্থানে টিউবারকল দেখা যায়।

* দেহ জীর্ণ শীর্ন, দুর্বল, মস্তিস্ক ঝিল্লীর প্রদাহ, মুখ দিয়া রক্ত উঠা, অস্ত্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।

* বুকের রোগ হতে হাত, পা, পেট, পায়ু, কিডনী, ব্রেন প্রভৃতি আক্রান্ত হতে পারে।

* পায়ুতে ফিশ্চুলা বা ভগন্দর হয়।

রোগ নির্ণয়

মেডিকেল ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা: স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা আপনার চিকিৎসা ইতিহাস, উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করে এবং টিবি সংক্রমণের লক্ষণ যেমন লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া বা ফুসফুসে অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ চেক করার জন্য একটি শারীরিক পরীক্ষা করা শুরু করে।

টিউবারকুলিন স্কিন টেস্ট (টিএসটি): এই পরীক্ষায় আপনার হাতের ত্বকে অল্প পরিমাণে পিউরিফাইড প্রোটিন ডেরিভেটিভ (PPD) টিউবারকুলিন ইনজেকশন করা হয়। আপনার যদি টিবি সংক্রমণ থাকে, তাহলে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ইনজেকশন সাইটে একটি উত্থাপিত বাম্প (ইনডিউরেশন) দেখা দেয়।

রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষা যেমন ইন্টারফেরন-গামা রিলিজ অ্যাসেস (আইজিআরএ) টিবি সংক্রমণ সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান: ইমেজিং পরীক্ষা ফুসফুস বা শরীরের অন্যান্য অংশে টিবি সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে।

স্পুটাম টেস্ট: থুথুর একটি নমুনা (ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা কাশি) সংগ্রহ করা হয় এবং একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে বিশ্লেষণ করা হয় বা টিবি ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করতে কালচার করা হয়।

অন্যান্য টেস্ট: লক্ষণ এবং সংক্রমণের সন্দেহজনক অবস্থানের উপর নির্ভর করে, বায়োপসি, ব্রঙ্কোস্কোপি, বা অন্যান্য ইমেজিং স্টাডির মতো অতিরিক্ত পরীক্ষার সুপারিশ করা যেতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

আপনি যদি অবিরাম কাশি (তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী), বুকে ব্যথা, কাশিতে রক্ত বা থুতু, ব্যাখ্যাতীত ওজন হ্রাস, ক্লান্তি, জ্বর বা রাতের ঘাম অনুভব করেন তবে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।

ঝুঁকির কারণ

দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (এইচআইভি/এইডস বা অন্যান্য অবস্থার কারণে), জনাকীর্ণ পরিবেশে বসবাস বা কাজ করা, পদার্থের অপব্যবহার এবং স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ত অ্যাক্সেস সহ বেশ কয়েকটি কারণ টিবি-র ঝুঁকি বাড়ায়।

যক্ষ্মার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি : এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী, ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত ব্যক্তি, মাদকসেবী ও ঘন ঘন বিদেশ গমনকারী ব্যক্তি। দেখা গেছে, আফ্রিকা বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকা, আফগানিস্তান, চীন , রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর আমেরিকা, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের যক্ষ্মা হওয়ার প্রকোপ বেশি।

প্রতিরোধ

আপনি আর লোকেদের সংক্রামক না হওয়ার আগে এটি সাধারণত কয়েক সপ্তাহ ওষুধ গ্রহণ করে। এইভাবে, সংক্রামিত ব্যক্তিকে প্রিয়জনের মধ্যে রোগ ছড়ানো বন্ধ করতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিম্নরূপ:

ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন: একজন ব্যক্তির সক্রিয় টিবি ধরা পড়ার পর অন্তত ৩ সপ্তাহের জন্য মানুষের চারপাশে মুখোশ পরলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ কমে যায়।

সঠিক কক্ষ বায়ুচলাচল: টিবি-সৃষ্টিকারী জীবাণু খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে এমন জায়গায় যেখানে বাতাস চলাচল ভালো নয়। দরজা বা জানালা দিয়ে ঘরের বাইরের বাতাস ফুঁকতে সবসময় ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন।

মুখ ঢেকে রাখা: কাশি, কথা বলা, হাঁচি ইত্যাদির সময় মুখ ঢেকে রাখার জন্য একজনকে অবশ্যই একটি টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহৃত টিস্যুটি একটি জিপলক ব্যাগে সিল করে পরে ফেলে দিতে হবে।

গৃহে থাক: অন্তত সক্রিয় রোগ নির্ণয়ের প্রথম কয়েক সপ্তাহে মানুষের সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন।

হোমিও প্রতিবিধান

রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়,তাই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর রোগের পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ প্রাথমিক ভাবে যক্ষ্মা রোগীর জন্য যে সব মেডিসিন ব্যবহার করে থাকেন, একোনাইট, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, রাসটক্স, টিউবারকিউলিনাম, ক্যালি আয়োড, ষ্ট্যানাম, একালিফা ইন্ডিকা, ফসফরাস, ক্যালি আয়োড, আর্সেনিক এলবাম, কার্বোভেজ, ইপিকাক, সালফার সহ আরো অনেক ঔষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে, তাই যক্ষ্মা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে অভিজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পরিশেষে বলতে চাই, একসময় প্রবাদ ছিল যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভূত উন্নয়ন সাধন, বিশেষ করে দেশে বর্তমান সরকারের নেওয়া জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বা এনটিপির কারণে এখন যক্ষ্মা নিয়ে আর কোনো ভয় নেই। বর্তমানে দেশের প্রায় সব জায়গায় বিনা মূল্যে যক্ষ্মার চিকিৎসাব্যবস্থা করেছে সরকার। উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, পোশাককর্মীদের চিকিৎসা কেন্দ্র, তা ছাড়া ব্র্যাক থেকে বিনা মূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল টিবি প্রোগ্রামের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মার কারণে ৯০ শতাংশ মৃত্যুহার ও ৮০ শতাংশ প্রকোপ কমিয়ে আনার জন্য বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার সাহায্য ছাড়াও দেশজুড়ে বিনা মূল্যে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়, রোগী শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অঙ্গসংগঠন, মেডিকেল কলেজ, গ্রাম, উপজেলা, থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র কাজ করে আসছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আস্তে আস্তে টিবি বা যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে, যা প্রশংসনীয়। উপমহাদেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম যা এমডিআর যক্ষ্মার দ্রুত চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ সাফল্য লাভ করেছে। এভাবে চলতে থাকলে, আশা করা যায় একসময় যক্ষ্মামুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বাংলাদেশ।

তারপরও আমাদের দেশে যক্ষ্মা এখনো একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। এতে শুধু যে নিম্ন আয়ের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়, বরং এই রোগ যে কারোরই হতে পারে। সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাই যক্ষ্মা থেকে রক্ষা করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ছয় হাজার যক্ষ্মারোগী মারা যাচ্ছে। সারা বিশ্বে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিস বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা। অনিয়মিত ওষুধ সেবন, পুরো ওষুধ সেবন না করার কারণে এ রোগের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উপসর্গের উন্নতি ঘটলেও নির্দেশিত ওষুধের সম্পূর্ণ কোর্সটি সম্পূর্ণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অসম্পূর্ণ চিকিৎসা ওষুধ-প্রতিরোধী টিবি হতে পারে, এটি চিকিৎসা করা আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।

টিবি নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা এবং ওষুধের সাথে জড়িত একটি ব্যাপক পদ্ধতির প্রয়োজন। সফল চিকিৎসার ফলাফলের জন্য এবং রোগের বিস্তার রোধ করার জন্য সময়মত রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধের আনুগত্য এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভুল রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার কৌশলের জন্য সর্বদা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাছ থেকে নির্দেশনা নিন।তাই যক্ষ্মা সঠিক ওষুধ এবং সতর্কতার মাধ্যমে পরিচালনা করা যেতে পারে। সুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসরণ করা এবং রোগ ছড়ানো এড়াতে বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখক : চিকিৎসক,কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test