E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করে যক্ষ্মামুক্ত দেশ গড়তে পারি

২০২৪ মার্চ ২৪ ১৬:৪৩:০১
আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করে যক্ষ্মামুক্ত দেশ গড়তে পারি

ডা. আহমদ পারভেজ জাবীন


আজ ২৪শে মার্চ ২০২৪ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। ১৮৮২ সালে এদিনে ডা. রবার্ট কক, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রো ব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিস্কার করেন।যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিস্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ, জীবাণু আবিস্কারের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪শে মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও সারা বিশ্বে ‘Yes! WE CAN END TB’ প্রতিপাদ্যটি সম্যুখে রেখে দিনটি উদযাপিত হচ্ছে।গত বছরের প্রতিপাদ্যের ধারাবাহিকতায় এবারেও বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‟হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি”।

আমরা সবাই জানি যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম।১৯৯৩ সালে পৃথিবীতে যক্ষ্মা রোগের প্রদুর্ভাব বেড়ে গেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সী ঘোষণা করে। তখন থেকে বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচলনা করছে।উক্ত কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশ সরকার দেশের সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগ সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান করে আসছে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

লক্ষ্য

• যক্ষ্মা রোগের সংক্রমণের হার ও যক্ষ্মা রোগের জন্য মৃত্যু এমন পর্যায়ে কমিয়ে আনা, যাতে যক্ষ্মা একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত না হয়।

উদ্দেশ্য

• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ২০১৫ সালের পর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন কৌশল গ্রহণ করে যা End TB Strategy নামে পরিচিত। এ কৌশলে উচ্চা ভিলাষী নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়, যাতে ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালের তুলনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে যক্ষ্মা রোগের মৃত্যু হার ৯৫% এবং নতুনভাবে সংক্রমিত যক্ষ্মা রোগীর হার ৯০% কমিয়ে আনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশে সকল প্রকারের নতুন যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রতি লাখে ২২১ জন, কফে জীবানুযুক্ত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১০০ জন হওয়ার কথা, যা আজও বহাল আছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি তথ্যানুসারে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে সকল প্রকারের যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয় ৩০১৬৪ সুস্থ হয় ৯৫% ও মৃত্যবরণ করে সংখ্যায় ৬৮২৪ জন ২.৫ % (২০২২) সালে সনাক্তকৃত যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে)। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে চিকিৎসায় নিরাময়ের হার গত ১০ বছর যাবৎ ৯৫ শতাংশের বেশী। গত দশকে দেশে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশ যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে যেমন-, জিন এক্সপার্ট ও ট্রো-নাট মেশিন, লিকুইড কালচার ও লাইন প্রুপ অ্যাসে (লপিএ), কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিতব জনযোগ্য ডিজিটাল এক্সরে ব্যবহার করছে। এছাড়াও ১টি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরীও ০৫টি রিজিওনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরীর যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ৪৪টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, ০৭টি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতল, সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের অর্ন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগ, এবং এনজিও ক্লিনিকে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

শহরাঞ্চলের বস্তিএলাকায়, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠি, গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে, জেলখানা ও দূর্গম এলাকায় বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরণ করা হচ্ছে। যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়কে বেগবান করার জন্য জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ব্র্যাকের সহায়তায় মোবাইল ভ্যানে স্থাপিত জিন এক্সপার্ট ও ডিজিটাল এক্সরে সাহায্যে নিয়মিত রোগ নির্ণয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

যক্ষ্মা রোগের হার কমাতে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ২০২২ সাল হতে TB Preventive Treatment (TPT) প্রদান করতে যাচ্ছে। একজন যক্ষ্মা রোগীর বাড়িতে বসবাসরত সকল প্রাপ্তবয়ষ্ককে প্রতিষেধক ট্যাবলেট সপ্তাহে একদিন করে তিন মাস খাওয়ানো হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে তারা যক্ষ্মায় আত্রান্ত না হয়। অপরদিকে শিশুদের প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে তিনমাস প্রতিষেধক ট্যাবলেট থাওয়ানো হচ্ছে সেও যেন যক্ষ্মায় আত্রান্ত না হয়। অবশ্যই যক্ষ্মা রোগীর বাড়িতে বসবাসকারীরা প্রতিষেধক ট্যাবলেট খাওয়ারযোগ্য কিনা ‘তাডাক্তারের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েই একজন যক্ষ্মা রোগীর বাড়িতে বসবাসরতকে প্রতিষেধক ট্যাবলেট সেবন শুরু করা হয়।

তৃনমূল পর্যায়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সহযোগী সংস্থা সমুহকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উদ্বুদ্ধকরন কর্মসূচি পালন করছে।এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে যক্ষ্মা ও যক্ষ্মার সেবা সম্পর্কিত সাধারন তথ্যগুলো জানানো হয়, যার সহায়তায় একজন সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তথাপি, যক্ষা নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচুর চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান যা হচ্ছে নিজস্ব আর্থিক যোগান বৃদ্ধি করা, শনাক্তের বাইরে থাকা যক্ষ্মা রোগীকে শনাক্ত করা, শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর শনাক্তকরণ বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি মলিকুলার ডায়াগস্টিক পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, তাৎক্ষণিক কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাথে রিপোর্ট করা বহনীয় এক্সরের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ সরকার জনসাধারণকে বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে যা বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত দেশ হিসাবে গড়ে তুলবে।

লেখক : জনস্বাস্থ্যবিদ।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test