E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পহেলা বৈশাখ কি আসলেই পহেলা !

২০১৫ এপ্রিল ১৪ ১৫:৩৭:২২
পহেলা বৈশাখ কি আসলেই পহেলা !

সালমান রিয়াজ : দেখতে দেখতে আরেকটা বৈশাখ এসে হাজির হয়েছে। শুরু হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছরকে আলিঙ্গন করে নেয়া। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান সূচিতে রাখা হয়েছে বাঙালীর আমোঘমানের যত অনুষ্ঠান। প্রস্তুত করা হয়েছে উল্লেখযোগ্য কিছু অনুষ্ঠানের লাইভ প্রচারণা।

এ উৎসব বাঙালীর উৎসব, তবুও অনেক বিদেশী এটাকে মনে প্রাণে লালন পালন করার চেষ্টা করে। রমনার বটমূলে গানের পসরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা শিল্পীদের মন মাধুরী চারুকারু আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বাংলাকে বরণ করে নেয়ার বিভিন্ন জোগসাজ সকলকে মুগ্ধ করে। আনন্দের অতিসাজ্যে অনেকে বাঙালী পোশাক পরে বেরেয়ে পড়ে।

দেখতে ভালোই লাগে। চারিদিকে পান্তা ইলিশের যোগসংযোগ আর সাথে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ। যেন, পুরো বাঙালীয়ানা। মনে পড়ে ভাতের প্লেটে পান্তা ভাত আর কাঁচা মরিচ ডলে কৃষকের সকালের নাস্তার কথা।

আমরা কি বাঙালী এক দিনের জন্য নাকি সবসময়? শুধু বৈশাখ আসলেই আমাদের বাঙালীয়ানা জেঁকে বসে। শুরু হয়ে যায় দাম বেড়ে যাওয়ার আগেই জাতীয় মাছ ইলিশ কিনে ফ্রিজ ভর্তি করার মহড়া। যার সুযোগ নিয়ে কিছু অসদুপায়ী জেলে জাটকা ইলিশে বাজার সয়লাভ করে।

বাংলা ভাষা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি। আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের অহংকার। সেই অহংকার অবশ্যই একদিনের জন্য নয়। মাতৃভাষা দিবস আর পহেলা বৈশাখ আসলেই বাঙালি ভাষা আর সংস্কৃতি নিয়ে আমরা আহ্লাদে আপ্লুত হই। কিন্তু সেই ভাষা আর সাংস্কৃতি রক্ষার কতটুকুই চেষ্টা করছি আমরা? বিদেশী সাংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের সমাজ ছেয়ে যাচ্ছে। সেটা নিয়ন্ত্রণে আমরা কতটুকু সজাগ?

বাংলাদেশের সিনেমা হলে ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পায় ভারতীয় ওয়ান্টেড ছবিটি। এছাড়া ধুম-২, তারে জামিন পার সহ অনেক ছবি এখনো অনেক সিনেমা হলে চলছে। যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি শাকিব খানের নেতৃত্বে একটি কাফন মিছিল হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকট ভারতীয় ছবি অনুপ্রবেশ বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা বন্ধের ব্যাপারে কোন আশার বাণী শোনাননি।

ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেল যেভাবে আমাদেরকে গ্রাস করছে তাতে সকলেই চিন্তিত। বউ ছেলে মেয়ে সবাই হিন্দী ভাষা চর্চা করছে। যাক সেটা ভালো । অন্য একটি ভাষায় তারা দক্ষ হচ্ছে। কিন্তু হিন্দী নাটক সিনেমার চরিত্রকে যখন নিজের চরিত্রে ফলানোর চেষ্টা করছে তখন বাধছে যত বিপত্তি। বাড়ছে আত্মহত্যা প্রবণতা, ঘটছে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেওয়ার ঘটনাও।

এভাবে যদি সাংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদেরকে গ্রাস করে তবে, চাপাইনবাবগঞ্জের হালিমা, গাইবান্ধার নুরজাহান, নওগার মিম এবং মানিকগঞ্জের সালেকাদের মত হিন্দী সিরিয়াল প্রেমী মেয়েদের প্রাণ যাবে অহরহ। যারা কিনা ভারতীয় সিরিয়াল বোঝে না সে বোঝে না এর চরিত্র পাখি’র নামের সাথে মিল রেখে প্রস্তুতকৃত পোশাকের জন্য জীবন দেয়। এছাড়া ২০ জুলাই, ২০১৪ সালে পাখি ড্রেস না কিনে দেওয়ায় খুলনা পাইকগাছার গৃহবধু শারমিন তার স্বামী সাইফুল ইসলামকে তালাক দেয়।

এভাবে চলতে থাকলে হারাবে বাঙালি সাংস্কৃতি, হারাবে বাঙালি ঐতিহ্য। যে বাঙালির ঐতিহ্যে মিশে আছে মসলিন, তাতী, জামদানী ও রেশমী কাপড়ের ন্যায় সমৃদ্ধ পোশাকের বাহার। সে বাঙালি কিনা মজা খুঁজে ফেরে অন্য পোশাকে?

যাই হোক, পহেলা বৈশাখ কিন্তু আসলেই পহেলা। সেটা তারিখেই পহেলা, বছরের পহেলা। কিন্তু সেটা যেন কখনোই চেতনায় পহেলা না হয়ে যায়। প্রত্যেকটা দিনকে যেন আমরা আমাদের ঐতিহ্যের আলোকে, সংস্কৃতির শিকড় যেন মজবুত ভাবে নোঙর ফেলাতে পারি আমাদের মনে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test