E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নাগরিক কমিটির উদ্যোগ কাজে লাগানো প্রয়োজন

২০১৫ এপ্রিল ২১ ১৭:৫৩:৪৪
নাগরিক কমিটির উদ্যোগ কাজে লাগানো প্রয়োজন

এম নজরুল ইসলাম : নানা সমস্যায় জর্জরিত বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত এলাকাগুলো। সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকরি কোন ভূমিকা নেই। প্রায় ২৫০কিলোমিটার কাঁচা ও ৫০কিলোমিটার পাকা রাস্তা চলাচলের অযোগ্য, বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে প্রায় একলাখ মানুষ, পৌর শহরের ২০শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ডের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

উপজেলা ও পৌরসভার অন্তভূক্ত এলাকার মানুষ সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছে, শিক্ষার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্রয়ের মহোৎসব সৃষ্টি হয়েছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে, পৌর শহরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কার্যকারি পদক্ষেপ নেই। নাগরিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এউপজেলার মানুষ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাঘাটের শোচনীয় অবস্থার জরুরি সংস্কার নেই। ২০শয্যা হাসপাতাল চালু হয়নি। খেলোয়ারদের জন্য স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রয়োজন শুধু স্বপ্নের মধ্যেই রয়েছে। সাংস্কৃতিমুখি এউপজেলায় বিনোদন পার্ক নেই, পৌর শহরে যাত্রী ছাউনীর সংস্কার ও নির্ধারিত বাস টার্মিণাল নেই, মহাসড়কে যানযট ও দূর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশও নেই। নন্দীগ্রাম উপজেলার এতগুলো সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেনি কেউ। সংবাদপত্র ও বিভিন্ন মিডিয়ার উল্যেখিত সমস্যাগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ কি? সমস্যাগুলোর সমাধানে জনপ্রতিনিধিরও অভাব নেই। তারপরেও থেমে থেমে চলছে নরবরে এই উপজেলা।


সম্প্রতি পৌর শহরের বাসষ্ট্যান্ডে হানিফের চা’ স্টলে বসে দুধ-মালাই দিয়ে এক কাপ গরম চা’র সাথে তিন টাকার একটি বিস্কিট ভিজিয়ে খাচ্ছিলাম। এসময় পাশে বসলেন আমার শিক্ষাগুরু শামছুল ইসলাম। চা রেখে সালামের সাথে আমার শিক্ষক শামছুল ইসলামের হাত ধরে বললাম’ স্যার কেমন আছেন। তিনি আবেকের সাথে বললেন’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাল নেই’ তাই আমিও ভাল নেই। স্যারের এমন কথায় নড়েচরে বসলাম। স্যার আমাকে বললেন, তুমি যে স্কুল থেকে সু-শিক্ষার জ্ঞান অর্জন করেছো’ সেই প্রতিষ্ঠান বিক্রয়ের পায়তারা চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছেনা। পৌর শহরের কলেজপাড়ার কেজি একাডেমীতে ৫শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক ছিলেন শামছুল ইসলাম। আমরা (ছাত্র-ছাত্রীরা) এই স্যারের আদর্শে গড়া আজকের প্রতিষ্ঠিতরা। আমি হয়েছি সাংবাদিক, কেউবা ডাক্তার, কেউ শিক্ষক, আবার অনেকে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। স্যারের কথ্যায়, শিক্ষার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্রয়ের মহোৎসব সৃষ্টির কথা শুনে আমার বিবেকে প্রতিবাদের জন্ম নিল। একইসাথে আমারমত সমাজের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও এলাকার শিক্ষাণূরাগীরা এগিয়ে এলেন। শিক্ষা বিরোধীদের হাত থেকে ক্ষণিকের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা পেলেও বন্ধ হয়নি শিক্ষা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র।


গত ২০এপ্রিল বেলা ১১টায় নন্দীগ্রাম উপজেলাকে আদর্শ গড়ার প্রত্যয়ে’ ১০দফা কর্মসূচির ঘোষনা দিয়েছেন নন্দীগ্রাম উপজেলা নাগরিক কমিটি। ‘অবহেলিত জনগণের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা এলএলবি এঘোষনা দেন। শিক্ষার মৌলিক অধিকার, চিকিৎসা, মাদকমুক্ত উপজেলা প্রতিষ্ঠা, পৌর শহরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাঘাটের শোচনীয় অবস্থার জরুরি সংস্কার, ২০শয্যা হাসপাতাল চালু, স্টেডিয়াম নির্মাণ, বিনোদন পার্ক, পৌর শহরে অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনী, সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাড়াতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলা নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ পুরো উপজেলাব্যাপী সভা-সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কৃষক ও ভোক্তাদের সুবিধার্থে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, ফার্মার্স মার্কেট স্থাপন, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও মোবাইল চিকিৎসা সার্ভিস গড়ে তোলার লক্ষ্যে নাগরিক কমিটি আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। উপজেলাব্যাপী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ১০টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন নাগরিক কমিটির সভাপতি। “স্কুল শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবহণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার উদ্যোগে স্কুল বাস সার্ভিস চালু, পৌরসভার অধীনে বয়স্ক, দরিদ্র নাগরিকদের জন্যে বিনামূল্যে কম্পিউটার ও ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা, উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার জন্য নলেজ সেন্টার প্রতিষ্ঠা, কৃতী শিক্ষার্থীদের ‘স্কলারশিপ’, মুনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজ ও মহিলা ডিগ্রি কলেজে অনার্স কোর্স চালু, ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। নাগরিক কমিটির এই উদ্যেগ সত্যিই প্রসংশনীয়। তাদের এই কর্মর্সূচিতে এলাকার সবশ্রেনীর মানুষেরা অংশ নেবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। তাদের এই মহোৎ উদ্যেগকে কাজে লাগিয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলাকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলে অনেকেই মনে করছেন। নন্দীগ্রাম উপজেলা নাগরিক কমিটির এই ১০দফা কর্মসূচির মাধ্যমে এউপজেলার পিছিয়ে পড়া সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে। সেইসাথে এ উপজেলাাকে আদর্শে পরিনত ও ‘অবহেলিত জনগণের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test