E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গণতন্ত্র, শান্তি ও আস্থার প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনা

২০১৫ মে ১৭ ১৮:৩৭:৪৯
গণতন্ত্র, শান্তি ও আস্থার প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনা

তুষার কিবরিয়া : ঐতিহাসিক ১৭ মে, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭৫ সালে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন অতিবাহিত করার পর দেশের মানুষের ডাকে, আওয়ামী লীগের ডাকে, নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলার মাটিতে পদার্পন করেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা। সে দিন প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়া সারা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ জনতা বঙ্গকন্যাকে স্বাদরে গ্রহন করেছিল।

সেদিন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা, মাতা, ভাই রাসেল সহ সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদেরকে ফিরে পেতে চাই।’’ আর সেই থেকেই শুরু জননেত্রী শেখ হাসিনার নতুন সংগ্রামী জীবন।

১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে আসার পূর্বেই তিনি আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা ৭৫ পরবর্তী ভঙ্গুর আওয়ামীলীগকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজকে বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ দলে পরিণত করেন।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৮২ সালে এরশাদের ক্ষমতা গ্রহনকে অবৈধ ঘোষণা করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৩ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দলের জোট গঠন করে দেশ জুড়ে সামরিক শাসন বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে। যার ফলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে গৃহে অন্তরীন করা হয়। তাতেও তাঁকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয় নাই। তিনি গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তাঁর এই গণআন্দোলনের ভয়ে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়। জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত জনসভায় ভাষন দেন। এর পরেই এরশাদ সরকার ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

স্বৈরশাসনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয় বাংলাদেশ । ১৯৯১ সালে সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন।

১৯৯২ সালের ১৬ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল করে গোলাম আযমের বিচার করার প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৪ সালে বি,এন,পি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া একদলীয় নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করলে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার আন্দোলনের মুখে বি,এন, পি তত্ত্বাবধায়কের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়।

১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন এবং সফলতার সাথে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

এসময় তিনি ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি ও পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তি সাক্ষর করেন। ১৯৯৭ সালে নেতাজী সূভাষচন্দ্র বসুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গণতন্ত্র, শান্তি ও উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরুপ শেখ হাসিনাকে নেতাজী মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’’ প্রদান করেন।

পার্বত্য চট্রগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালের ফেলিক্স হুফে বইনি শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত করেন। ১৯৯৮ সালের ১২ এপ্রিল শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে মাদার তেরেসা পদক’’ প্রদান করে নিখিল ভারত শান্তি পরিষদ।

২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট এ স্বাধীন দেশের বুকে এক লজ্জাজনক অধ্যায়ের চিহ্ন একে দেয় জামাত বি, এন, পি জোট। গ্রেনেড হামলা করা হয় শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানী ও নেতা কর্মীদের মানব বেষ্টনীতে সেদিন নেত্রী বেঁচে গিয়েছিলেন। নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছিল।

বারবার মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসা নেত্রী শেখ হাসিনা যেন বাংলাদেশ আর বাংলার মানুষের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন । রক্ষা করেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর শান্তি প্রিয় মানুষগুলোকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে তাঁর নেতৃতে আন্দোলনে নীলনকশার নির্বাচন বাতিল করে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এরপর ফখরুদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেন। শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে অপসারনের জন্য মাইনাস টু ফর্মুলা করা হয় কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃঢ়তা তাকে মাইনাস হতে দেয় নি।


২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। ফখরুদ্দিন সরকারের কোন ষড়যন্ত্রই শেখ হাসিনার বিজয় আটকাতে পারে নি।

২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তাঁর দল বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয়।

জনগণ তার প্রতি আস্থা রেখেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনাও ১৬ কোটি জনগণের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে তিনি আবার প্রমাণ করছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসুরী। কোন বিদেশী শক্তির কাছে মাথা নত না করে তিনি প্রমান করেছেন যে, এই বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশ নয় এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ । ১৬ কোটি বাঙালির আস্থার প্রতীক বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক মেধা আর উদারতা দিয়ে শুধু এ দেশকে জয় করেন নি, জয় করেছেন বর্হিবিশ্বকে। তাঁর যোগ্য কূটনৈতিক দক্ষতায় ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সমুদ্র বিজয় করে। তারই ধারাবাহীকতায় ২০১৫ সালে আমরা জয় করেছি সীমান্তের মাটি। ( যা এখন শুধু অমাদেরই) আমরা আশা রাখি আর কোন ফেলানীর লাশ ঝুলবেনা সীমান্তের কাঁটা তারে। এই অর্জন শুধু দেশরত্ন শেখ হাসিনার নয়, এই অর্জন ১৬ কোটি বাঙালির। আর তাই উচ্চকন্ঠে গর্ব সহকারে বাঙালিরা উচ্চারণ করে।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা মুজিব কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে তাঁর ৩৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের শুভেচ্ছা জানাই।

লেখক : সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test