E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোদীজীর বাংলাদেশ সফর সফল হোক

২০১৫ মে ২৮ ১৬:১৩:১৯
মোদীজীর বাংলাদেশ সফর সফল হোক

শেখর রায় : বড়ই পরিতাপের বিষয় যে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নেত্রী ও আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে বর্তমান অবস্থায় আর মোদীজীর সাথে বাংলাদেশ যাওয়া মনে হয় হল না। কারণ যা জানলাম যে তিস্তা নিয়ে রাজনাথ সিংজি কলকাতা এসে যা বলেছেন তাতে যেন মনে হয় যে চুক্তি হতে পারছে না আমাদের দিদির জন্য। তারপর আগে ভাগে তাকে জানানো হয়নি বলে তার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করা অসম্ভব।

এটাও মনে রাখা জরুরী যে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের কল্যাণ অকল্যাণ দেখার জন্য সাংবিধানিক ভাবে দায়িত্ত্বপ্রাপ্ত। সে আগে নিজ রাজ্যবাসীর স্বার্থ বুঝে নেবে, তারপর অন্য দেশের। এতে কোন ভুল নাই। আমি আমার কয়েক বছর পূর্বের এক প্রবন্ধে বলেছি যে সিকিম রাজ্য তিস্তার যা হাল করেছে তাতে উত্তর বঙ্গ শুকিয়ে যাবে। জল পাবে না বাংলার চাষি আর ক্ষতি হবে চাষের। পরিবেশ আন্দোলনকারি ও স্থানীয় ভূমি পুত্র লেপচা ও অন্যান্য পাহাড়ি উপজাতির আপত্তি সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিস্তার উপর সিকিমে পাঁচ পাঁচটি বাঁধ নির্মাণ করেছে কেন্দ্র সরকারের National Thermal Power Council (NTPC). বর্তমানের মরা তিস্তায় যেটুকু জল আসে তাও যদি প্রতিবেশি দেশের সাথে শেয়ার করতে হয়, তবে উত্তর বঙ্গের স্বাভাবিক মৃত্যু শুধু সময়ের অপেক্ষা। সুতরাং পূর্বতন দিল্লিস্থ কেন্দ্র সরকারের নীতির ও রাজ্যের বিগত বাম সরকারের নীতিহীনতার দায়ভার কেন বর্তমান রাজ্য সরকারকে নিতে হবে- খুবই সমীচীন প্রশ্ন এবং সম্পৃক্ত সকল পক্ষকে এই মানবিক দিকটাও ভাবতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ কেন্দ্র নদী দপ্তর কেন পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে আলোচনা করে একটি যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। সুতরাং এক তরফা পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঙ্গুল তুলে কেউ বাজার মাত করতে পারে, কিন্তু কাজের কাজ হবে না। কারণ, নদীর জল রাজ্যের বিষয় যেখানে কেন্দ্রের যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে একা কিছু করা সম্ভব নয়। আর দুটি পাশাপাশি দেশের মানুষের স্বার্থে ফালতু রাজনীতি করা কোন কাজের কথা নয়। একটা সমাধান সূত্র বার করতে হবে। সে তিস্তার জলের বিনিময়ে বাংলাদেশী ইলিশ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা উঠুক আর না উঠুক। নিজ দেশের স্বার্থে বাংলাদেশ যদি ভারতে ইলিশ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে খাদ্য রসিক বাঙ্গালির ভাতের থালা থেকে পদ্মার ইলিশ তুলে নিয়ে থাকতে পারে, তবে নিজ রাজ্যের মানুষের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ কেন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারে না- এটাওতো ভাবা উচিৎ।

তৃতীয়তঃ পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালিদের স্বার্থে যদি মুখ্যমন্ত্রী লন্ডন বা ভুটান গিয়ে শিল্প পুঁজি বা কারিগরি সাহায্যের জন্য দরবার করতে যেতে চান, তবে রাজ্যের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কেন তাকে অন্য দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গি হতে হবে- তাও তাকে আগে ভাগে না জানিয়ে? এটা কি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সামনে কি একটি অঙ্গ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের সম্বন্ধে একটি ভ্রান্ত বার্তা বহন করে না? কেন সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে এই কূটনৈতিক জাল তৈরি করে সমস্যাকে জিইয়ে রাখা- যা আন্তকিতার সাথে ভাবা উচিৎ বলে মনে করি।

উল্লেখ করা খুব অসংগত হবে না যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি প্রতিবেশী দেশগুলি সম্পর্কে খুব স্পর্শকাতর। তিনিও খুব আন্তরিকভাবেই চান যে প্রতিবেশী দেশ সুখে থাকলে তবেই ভারতের সুখ। সেই লক্ষে তিনি এই প্রতিবেশী দেশগুলিকে ঢালাও অর্থ সাহায্য দিতে চলেছেন। যদিও তার নিজ দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলি থেকে তার বিরোধিতা আসছে এই প্রাসঙ্গিক যুক্তিতে যে যখন ভারতের শত সহস্র কৃষক দেনার দায়ে আত্মহত্যা করে চলেছেন তখন কোন গ্রহণীয় যুক্তিতে তিনি বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়াকে বিলিয়ন বা ট্রিলিয়ন ডলার সাহায্য করতে চলেছেন? তাকে তো ওই দেশের ভোটার কেউ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করে নি। আগে তার নিজ দেশের দরিদ্র কৃষককে প্রাণে বাঁচান, তারপর অন্য দেশ। আপনা বাঁচলে বাপের নাম। এতদ সত্ত্বেও মোদীজি দৃঢ় প্রত্যয়ী যে ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলেও তিনি প্রতিবেশীকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে দ্বিধা করবেন না। সুতরাং, ভারতবাসী হিসাবে আমাদের শুভ কামনা রইল মোদীজীর জন্য। ভারত বাংলাদেশের মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক : পশ্চিমবঙ্গের লেখক-গবেষক

(ওএস/এএস/মে ২৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test