E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিএমএ’র কাছে খোলা চিঠি

২০১৫ জুলাই ৩১ ১৮:৩২:১১
বিএমএ’র কাছে খোলা চিঠি

মহোদয়
আশা করি ভাল আছেন। সম্মান পূর্বক আপনাকে জানাতে চাই যে, সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নূনযীরুল মোহসেনীন মীম এর সাথে একজন মাননীয় সংসদ সদস্য এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের মধ্যে যে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে তার প্রেক্ষিতে উক্ত  মাননীয় সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন পত্রিকা এবং নিউজ চ্যানেল ক্রমাগত মিথ্যা এবং মানহানিকর প্রোপাগান্ডা প্রকাশ করে আসছে।

২৯ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে ঘটনাটির একপেশে ব্যাখা দেয়া হয়, ৩০ জুলাই শিরোনাম করা হয় ‘ডা. মীমের অত্যাচারে শ্বশুর শাশুড়ি বাড়ি ছাড়া’ এবং ৩১ জুলাই শিরোনাম করা হয় ‘ডা. মীমকে বরখাস্তের নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর’। নিশ্চয় এই প্রোপাগান্ডাগুলো আপনার নজরে এসেছে।
কর্তব্যকালীন একজন চিকিৎসকের চেয়ারে বসা, সরকারি কর্মকর্তার সাথে অসদাচরণ, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা প্রকাশ, রোগীর চিকিৎসাকালীন গোপনীয়তা ভঙ্গসহ নানাবিধ নিয়ম ভাঙা মাননীয় সংসদ সদস্য এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে আইনি এবং বিএমএ’র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কঠোর প্রতিবাদ একান্ত কাম্য ছিল। অথচ পুরো উল্টোভাবে ডা. মীমকে তদন্তের আগেই বরখাস্ত করার যে খবর ছাপা হয়েছে তা অবিবেচনা প্রসূত।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে আমরা সংক্ষুব্ধ এবং অনতিবিলম্বে বিএম’র পক্ষ থেকে বিষয়টির বিচার বিভাগীয় তদন্ত, বিএমডিসি ও বিএমআরসির এথিকাল নিয়মানুযায়ী কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করে আনএথিকাল এবং হিংস্র আচরণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই। পাশাপাশি প্রচলিত আইনে এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে এই অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে আইনানুগ অভিযোগ করার জন্য বিশেষভাবে দাবি জানাই।
এর আগে ঠুনকো অজুহাতে কথায় কথায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসক নির্যাতিত হয়েছে বা ভুল চিকিৎসার অজুহাতে অপসাংবাদিকতার শিকার হতে হয়েছে যার সঠিক পরিসংখ্যান বিএমএ’র কাছেও নেই বলে মনে করি। সম্প্রতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পবিত্র কুণ্ডুর উপর ভুল চিকিৎসার অজুহাতে চালানো হয় এক নারকীয় তাণ্ডব। যার বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে এখনো। চিকিৎসক নির্যাতনের ব্যাপারে বাংলাদেশে চিকিৎসকদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনকে বরাবরই নীবর থাকতে দেখা গেছে। গুটিকয়েক মানববন্ধন ছাড়া এ বিষয়ে বৃহত্তম কোন কর্মসূচী বা সমাধানের কোন সদিচ্ছা দৃষ্টিগোচর হয়নি তেমনভাবে।
চিকিৎসকরা রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। দেশের জনগণের তুলনায় চিকিৎসক অপ্রতুল, এমনকি চিকিৎসা সরঞ্জামও প্রয়োজন মেটাতে পারে না। এই অপ্রতুলতার মাঝেও চিকিৎসকরা মহান স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের মেধা-মনন-প্রচেষ্টা আর আন্তরিকতা দিয়ে দেশবাসীকে সেবা দিয়ে চলছে অবিরাম। গণ মাধ্যম কর্মীরা চিকিৎসকদের এই আন্তরিকতা আর প্রচেষ্টাকে তো মূল্য দেনই না বরং পান থেকে চুন খসলেই বিভিন্ন বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারিত হয়। সংবাদকর্মী বন্ধুদের কাছ থেকে এই আচরণ কাম্য নয়। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে সংবাদ পরিবেশনের ব্যাপরে নির্দেশনা থাক উচিত। তাছাড়া জন্ম-মৃত্যুর মালিক সৃষ্টিকর্তা, চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন মাত্র। চিকিৎসক সঠিক চিকিৎসা দিলেন না ভুল চিকিৎসা দিলেন তার উপযুক্ত বিচারক হতে পরেন কেবল একজন সিনিয়র চিকিৎসকই, কোন সাংবাদিক বা আমজনতা নন। চিকিৎসকরা ভুল করলে তা নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড করে প্রমাণিত হলে তবেই তাকে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। এ সকল বিষয়ে আমাদের আশা ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল হলো বিএমএ। তবে আপনাদের নীরবতা আমাদেরকে ভাবায়-কাঁদায়।
যেহেতু চিকিৎসক নির্যাতন এবং চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে হলুদ সাংবাদিকতা একটি চলমান প্রক্রিয়া সেহেতু এই দুইটি বিষয়ে পরিসংখ্যান সংরক্ষণের জন্য বিএমএ-তে একটি সেল খোলা হোক, এটা আামাদের অন্যতম দাবি।
বাংলাদেশের জনগণের একটা বদ্ধমূল ধারণা কেবলমাত্র চিকিৎসকরাই জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়ে তাই জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র চিকিৎসকদেরই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা সচিব, আমলা, পুলিশ, প্রকৌশলী, বিচারক, এ্যাডভোকেট, সাংবাদিক, শিক্ষকরাও নিজেদের টাকায় লেখাপড়া করেন নাই। শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজই নয় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে সরকারি টাকায় মানে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। কাজেই সকলেরই সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা সমান হওয়া উচিত। দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র তার নাগরিকের চিকিৎসা সেবা দিতে বাধ্য। তাই দেশের মানুষকে স্বাস্থসেবা দেয়ার জন্য গড়ে ওঠা বড় বড় সরকারি হাসপাতালগুলো। সেখানে মানুষের চিকিৎসার জন্য সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত চিকিৎসকরা। মূলত সেখানে রাষ্ট্রের মানুষের চিকিৎসা চলছে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন মেধাবী বাছাই কিছু ছেলে মেয়ে হাতে কলমে শিখে-পড়ে চিকিৎসক হয়ে বের হচ্ছে, এখানে তাকে চিকিৎসক বানানোর পেছনে কোন আলাদা খরচ করা হচ্ছে না, খরচ সরকার করছে মানুষের চিকিৎসার পেছনে, কাজেই সে জনগণের টাকায় পড়ে চিকিৎসক হয়েছে এটা সেই ছেলে/মেয়েটির সাফল্য, দুর্বলতা নয়।
চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক, চিকিৎসক-সাংবাদিক সম্পর্ক, সিনিয়র চিকিৎসক-জুনিয়র চিকিৎসক সম্পর্ক, চিকিৎসক-সেবিকা সম্পর্ক, চিকিৎসক-কর্মচারী সম্পর্ক, চিকিৎসক-কর্মকর্তা সম্পর্ক বিষয়ে বিএমএ’র কাছ থেকে সভা-সেমিনার ও কর্মশালা আমাদের কাম্য।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং নির্দেশিত পথে যখন দেশের স্বাস্থ্যখাত এগিয়ে যাচ্ছে, তৃণমূল মানুষের হাতের নাগালে স্বাস্থ্য সেবাকে পৌঁছে দেবার মাধ্যমে পরিণত হচ্ছে উন্নয়ণশীল দেশের একটি মডেল হিসেবে তখন স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সকল শ্রেণীর চিকিৎসকের পাশে থাকা বিএমএ’র নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।
প্রিয় নেতৃবৃন্দ, আমরা জানি ব্যক্তিগত জীবনে আপনারা নৈতিকতার চর্চা করেন, আপনাদের সততা নিয়ে আপনাদের বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না কিন্তু সাধারণ চিকিৎসকদের দুঃসময়ে তাদের পাশে না থাকলে নৈতিক বিএমএ অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে যা আমাদের দেশের সাধারণ চিকিৎসকদের জন্য হবে এক বিরাট হতাশাজনক ব্যাপার।
আমরা অনতিবিলম্বে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে হলুদ সাংবাদিকতা ও কথায় কথায় চিকিৎসক নির্যাতনের প্রতিকারসহ চিকিৎসকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএমএ’র দৃঢ় অবস্থান আশা করি।
মানুষ হিসেবে আমরা চিকিৎসকরা কি বঙ্গবন্ধুর সেনার বাংলাদেশে সঠিক অধিকারটুকু পেয়েছি কখনোই?
ধন্যবাদসহ
সাধারণ চিকিৎসকরেদর পক্ষে-
১.ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ
২.ডা. শাহজাদা সেলিম
৩.ডা. জাহিদুর রহমান
৪.ডা. সুব্রত ঘোষ
৫.ডা. প্রদীপ কুমার বিশ্বাস
৬.ডা. সেলিম শাহেদ
৭.ডা. গৌরব কর্মকার
৮.ডা. কৃষ্ণ রায়
৯.ডা. অনুপ বসু

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test