E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমার লাশের ওপরে ঝুলবে নোটিশ বোর্ড - 'কর্তৃপক্ষ দায়ী না'

২০১৫ আগস্ট ০৯ ১৯:২৩:০৪
আমার লাশের ওপরে ঝুলবে নোটিশ বোর্ড - 'কর্তৃপক্ষ দায়ী না'

।। অঞ্জন রায় ।।

রাজীব হায়দার থেকে নিলয়। নিলয়ের পরে কে আমরা এখনো জানি না- তবে নিশ্চিত কেউ একজন। হত্যার প্রসেসটা একই- একই পুলিশের ব্রিফিং পদ্ধতি। আবার একই রকমই হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রতিবাদের ধরণ। শাহবাগে মোমবাতির সাথে স্লোগান। টেলিভিশনে লাইভ। একডজন টকশো। তারপরে অবারো নৈমিত্তিক কর্মকাণ্ডে ভুলে যাওয়া। রাজীব থেকে নিলয় খুন হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সকল বক্তব্যের সাথে আমি নিজে একমত নই। হয়তো অনেকেই একমত নন। কিন্তু কোন মত প্রকাশের কারনেই কারো ওপরে চাপাতির আঘাত নেমে আসবে- এটি কিসের আলামত? অন্যদিকে প্রায় প্রতিটি হত্যাকান্ডের অপরাধীদের গ্রেফতারে কেনই বা প্রশাসনের ধারাবাহিক ব্যার্থতা?

আমরা হত্যাকান্ডের পরে জানতে পারলাম নিলয় পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন জিডি করতে- নিরাপত্তা চেয়ে। পুলিশ সেই জিডি নেয়নি। নেয়নি শুধু এটুকুই নয়- পরামর্শ দিয়েছে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। আমি জানি না এই ধরনের পরামর্শের এখতিয়ার পুলিশের আছে কি নেই? আমি জানি না এই পরামর্শের জন্য সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে শেষ পর্যন্ত প্রশ্নেরমুখে দাড়াতে হবে, নাকি তদন্ত শেষে খুন হয়ে যাওয়া নিলয়কেই মিথ্যাবাদী হিসাবে চিন্হিত করা হবে ?

গত কয়েকমাসে আমি নিজেও কয়েকদফা হূমকীর মুখে পড়েছি। প্রথমে গোলাম আযমপূত্র সামাজিক মাধ্যমে আমাকে হূমকী দিলো। আমি নিজেও গেলাম থানাতে জিডি করতে। আমি ভাগ্যবান- আমার জিডিটি পুলিশ গ্রহণ করলো। আমার সামনেই একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো জিডির তদন্তের। সেই শুরু- আর সেখানেই শেষ। আজ এই লেখা লেখার সময়ে পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে একটি ফোন পর্যন্ত করেন নাই। তদন্ত তো অনেক দূরের বিষয়। কয়েকদিন পরইপেলাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চিঠি এবং হূমকী। আমি আবারো শাহাবাগ থানায় গেলাম। জিডি করলাম। এবারেও একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো্। সেই দায়িত্ব প্রদানের মধ্যে দিয়েই শেষ হলো শাহাবাগ থানার ভুমিকা।

আমরা সাধারন মানুষ নিরাপত্তা খুজিঁ পুলিশের কাছে- সেই জন্যে খাজনা ট্যাক্সও দেই নিয়মিত। সে কারনেই নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি পুলিশের নৈমত্তিক কাজেরই অংশ। কাউকে নিরাপত্তা দেয়া মানে তাকে পুলিশের ফেভার করা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমার নিজেরই মনে হয়েছে আমি নিরাপত্তা চেয়ে কিছু ভুল করেছি। কারন আমি বা হূমকী প্রাপ্ত অধিকাংশই হয়তো সেই শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করি না- যাদের গুরুত্ব না দিলে পুলিশের সমস্যা হবে। আমরা দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন কয়েক মাস আগে যখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলো তখন আমাদের পুলিশ র‌্যাব সদস্যদের অসীম সাহসীকতা। দেখেছি তাদের জংগী নির্মূলে ধারাবাহিক অভিযান। কিন্তু আমার গত দুমাসের ব্যাক্তিগত যে স্মৃতি সেটি এই ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক। মেলানো কঠিন।

আমি আশা করি না আমাকে প্রহরা দেয়ার জন্য পুলিশ পেছনে পেছনে ঘুরবে। আশা করি না গানম্যান প্রাপ্তির। কারন একজন সংবাদকর্মীর জন্য এটি কোন সমাধান নয়। শোভনও নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের মনযোগের সামান্য ভাগ আশা করাটা বাতুলতা ছিলো না। কারন আমরা জানি- কারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে "শরীর খারাপের" কথা বলে নিরাপদে ভাগেন। আমরা জানি হেফাজতের তান্ডবের রাতে কারা পেছনের দড়জা খুজেছিলেন। আমরা এটাও জানি- শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে কারা থাকবেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ের সাথে, আর কারা সামান্য ঝড়েই পাততাড়ি গোটাবেন।

যাই হোক, সাংবাদিকতার মানে বাংলাদেশে দু রকমের, একটি হলো উচ্ছিষ্টের সমঝদার হিসাবে জীবন কাটানো, অন্যটি হলো নিজের গলা আর জীভের মালিকানাটা নিজের কাছে রাখা। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। সে কারনেই আমারও যদি কখনো অস্বাভাবিক হত্যার শিকার হতে হয় তবে- আমার লাশের ওপরে ঝুলবে নোটিশ বোর্ড- কর্তৃপক্ষ দায়ী না................

সবাই শুধু মনে রাখবেন- আমরা কেউই কোন ব্যাক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে জংগীগোষ্ঠির রোষানলে পড়িনি। পড়েছি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে থাকায়।

(অ/আগস্ট ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test