E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশু ধর্ষণ নিপাত যাক : নারী সমাজ মুক্তি পাক

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৬:২২:৩৩
শিশু ধর্ষণ নিপাত যাক : নারী সমাজ মুক্তি পাক

এম নজরুল ইসলাম : ধর্ষণ আগেও ছিল এখনো রয়েছে। তবে মিডিয়ার বিকাশের কারণে এখন তা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেই এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। দেশে অভিনব কায়দায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠন দফায় দফায় মানববন্ধন, সভা, সেমিনার, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও এসব ঘটনা কমছে না। সারাদেশে নারী-শিশু ধষর্ণ এখন নিত্যদিনের পরিচিত ঘটনা। নারীরা যেনো স্বাধীন ভাবে বেচেঁ থাকার অধিকার হারিয়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পত্র পত্রিকায় নজর দিলেই ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত দেশজুড়ে ন্যাক্কারজনক ভাবে বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। কোনো ভাবেই এই অপরাধ রোধ করতে পারছেনা আইনশৃঙ্খলা বাহীনি। আদিবাসী, শিক্ষার্থী, শিশু, কিশোরী, যুবতী ও বৃদ্ধারাও ধর্ষক লালোসা থেকে রেহায় পাচ্ছেনা। তবে পুলিশের কাছে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হলে লম্পট হিংস্র পশুদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

দিন কয়েক পেরিয়ে গেলেই অপরাধীরা আইনের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে ফের একই অপরাধ সংঘটিত করছে। ১৯৭১এর পর নারী সমাজ আবারও সম্ভ্রম হারাচ্ছে। সংসার জীবনে নিরুপায় নারীর ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার অধিকার চায়। ধর্ষণকারীরা ছোট ছোট শিশুদেরকেও লালোসার শিকার করছে। নারীদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিনিয়ে নিচ্ছে অহরহ। আইনের সঠিক প্রযোগ না করায় অপরাধীরা বীরদর্পে তাদের অপকর্ম করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন নারী। তাই নারীরা তাদের প্রাপ্ত অধিকার ও আতঙ্কমুক্ত নিরাপদ ভাবে বাঁচার জন্য সরকারের কাছে আকুতি করছে। ধর্ষণকারীরা নারীদের সম্ভ্রম লুট করে অর্থের বিনিময়ে মুক্ত হচ্ছে। এমন কি টাকা দিয়ে স্বাক্ষীদেরও মুখ বন্ধ করে দেয়।

এছাড়া ধর্ষণ বা শীলতাহানির ঘটনা ঘটার সাথে সাথে গ্রাম্য মাতব্বর ও কয়েক শ্রেণীর দালালরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। মোটাংকের অর্থের বিনিময়ে ঘটনাগুলো ধামাচাপা দিচ্ছে অহরহ। দু-একজন অন্যায়ের প্রতিবাদে জেগে উঠলেও উল্টো হোচট খাচ্ছে। শুধু সাধারন ঘরের নারী শিশুরাই যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তা কিন্তু নয়। পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনৈতিকসহ ছোট-বড় সবাই এখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে ধর্ষণ আতঙ্কে সময় পার করছেন। সম্প্রতি গত ২সেপ্টেম্বর বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার এক সাংবাদিকের ৪বছরের শিশু কণ্যাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এক পাষন্ড লম্পট। ফুটফুটে কোমলমতি শিশুকে লালোসার স্বীকার করার চেষ্টা করে। শিশুটির আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে ধর্ষককে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেয়। ওই ধর্ষক শিশুটিকে ধর্ষণ চেষ্টার স্বীকারোক্তী মুলক জবানবন্দী দিয়েছে। শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছে। বগুড়া সদরের চকসূত্রাপুর মহল্যার আকরাম হোসেনের স্ত্রী বিউটি খাতুনকে(৩০) ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা ফেলে রেখে যায়। ২৪আগস্ট সকাল ৯টায় নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৈয়তপুর রাস্তার উপর থেকে গৃহবধু বিউটি খাতুনের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হলে ৫জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অথচ এখন পর্যন্ত ওই মামলার জট খুলেনি। ২সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের বীরগঞ্জে গ্রাম্য পুলিশের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রীকে(১১) টিভি দেখার প্রলোভন দিয়ে জোরপূর্বক ঘরে আটকিয়ে ধর্ষণ করে এক লম্পট। পুলিশ ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে বীরগঞ্জ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, জেল-জরিমানা করে ধর্ষণ রুখছে না। ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে এই অপরাধ। এখনই রুখতে না পারলে নারী সমাজ লম্পটদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে। ধর্ষনকারীদের শুধু জেল-জরিমানা নয়’ জনসম্মুখে ফাঁসি দেওয়া উচিত। তাহলেই এই জঘন্য অপরাধ রোধ করা সম্ভব। ১৯৭১ সাল দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এই সালে একাত্তরে রাজাকারদের হাতে বাংলাদেশের অসংখ্য নারী তাদের সম্ভ্রম হারায়। অনেক ধর্ষিত নারী অপমান ও ভর্ৎসনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল।

অনেক নারী আজও পরিবার ও পরিজনদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা সয়ে চলেছে। ধর্ষণের শিকার অনেক নারীরা পরিবারের পবিত্রতা রক্ষার্থে বাধ্য হয়েছে আত্মহত্যা করতে। একজন নির্যাতিতার জীবনের বেদনাদায়ক স্মৃতির বিবরণ শোনা কতটা মানবিক। একজন অত্যাচারিত নারীর সেই ফেলে আসা অসহ্য যন্ত্রণার কথা জানতে চাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধে ধর্ষিত নারীদের অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে তাদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, পাকিস্থানী সেনাদের হাতে প্রায় দুই লাখ নারী সম্ভ্রম হারায়। এই সব ধর্ষণের ঘটনা কখনও প্রমাণ করা যায় না। এমন কি ধর্ষকদের কখনও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়না। বরং সম্ভ্রম হারিয়ে নারীদের এই স্বাধীন দেশে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনে যথাযথ প্রয়োগ ও পাষন্ড ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া উচিত। জনসম্মুখে ফাঁসি দিয়ে ঝুলানো উচিত। এটা ছাড়া এই জঘন্য অপরাধ রোধ করা কঠিন হবে।

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, অর্থনীতিতে জিডিপির ৬৫ ভাগ অর্জন যেখানে নারীর, সেই নারীই আজ নিরাপদ নয়। নারীরা পথেঘাটে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তিনি ধর্ষকদের ফাঁসির আদেশ দিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে সারাদেশে ৪ হাজার ৬৪২টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫৩৮টি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সারাদেশে ৭৯৭টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ তথ্য অনুসারে, দেশে প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ৩০০টি ধর্ষণের মামলা দায়ের হচ্ছে। তবে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা মামলার চেয়েও দ্বিগুণ বলে মনে করেন অনেকেই।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test