E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রবীরের সাথে কিছুক্ষণ

২০১৫ অক্টোবর ১৪ ১৯:৩১:১৭
প্রবীরের সাথে কিছুক্ষণ

।শেখর রায়।


এবার প্রবীর সিকদারের কলকাতা আগমন ত্রিমুখী উদ্দেশ্য সামনে রেখে। এক. আনন্দবাজার পত্রিকা, দুই. প্রায় চৌদ্দ বছর বাদে নিজের দাদা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করা ও তিন. আমার সাক্ষাৎ। এ পর্যন্ত তার তিনটি উদ্দেশ্যই সফল হয়েছে।

আমার বারুইপুরের বাড়ি অবস্থান কালে একান্ত আলাপচারিতায় ধরা পড়ে এক অন্য প্রবীর সিকদার। ওর আশৈশব জন্মস্থান ফরিদপুরের প্রতি ভালবাসা। মাতৃপিতৃ ভক্তি, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়দের ভারতে চলে আসা কিন্তু ওদের পরিবারের মাটির টান ও বাংলাদেশে শত কষ্টের মধ্যেও থেকে যাওয়া। অমোঘ দেশপ্রেম তথাপি সন্ত্রাসীদের নির্মম আঘাতে আপনার জনের মৃত্যু, নিজের পঙ্গু ও অনাথ জীবন যাপন। হার না মানা সঙ্কল্প ও সাংবাদিকতা। শুধু এক অপার বিস্ময় ও মুগ্ধ হয়ে শুনে যেতে হয়েছিল সেই কঠোর জীবন সংগ্রামের আলেখ্য।

আমি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছরের চীন সফরে তুমি সরকারী প্রতিনিধি দলে ছিলে। তুমি হাসিনাকে নিয়ে এমন সময়ে 'আমার বোন শেখ হাসিনা' নামে একটি বহুল প্রচারিত বই লিখেছিলে যখন তার নাম মুখে আনাও ছিল বিএনপি আমলে পাপ। সেই তোমার প্রিয় 'বোনের' শাসনে এতো যন্ত্রণা সহ্য করতে কেন হয় ?

প্রবীর : আমার সত্যি দুর্ভাগ্য। কিন্তু সে (হাসিনা) কোনভাবেই আমার এই যন্ত্রণার কারণ নয়। বরং সে পরে হলেও জেনেছে তাই আমার কারাগার থেকে মুক্তি ত্বরান্বিত হয়েছে।

আমি : তাহলে কেন সইতে হল এই নরক যন্ত্রণা এবং এখনো কেন হয়ে চলেছে ?

প্রবীর : আমি প্রশাসনে কিছু দুর্নীতি ও তার কারিগরদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। সেই উদ্যোগে কিছু পদ্ধতিগত সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু আমি যা করতে বাধ্য হয়েছি তা নিতান্ত নিরুপায় হয়েই করেছি। আমাকে মুহুর্মুহু হত্যার হুমকির কথা পুলিশ প্রশাসন যখন নিবন্ধিকরন করতে অস্বীকার করে, সেই মানসিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো ছাড়া আর আমার কি করার থাকতে পারে ?

আমি : শাসক আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যদি কিছু বল...

প্রবীর : ছাত্রাবস্তা থেকেই তো এই দলের হয়ে প্রচার করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড যখন জাতিকে এক মহাবিপর্যয়ের মধ্যে নিয়ে আসে, সে অবস্থায় বারংবার নিজের জীবন বিপন্ন করেও তার সুযোগ্যা কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য সর্বদা সচেষ্ট। শত বাঁধা বিপত্তির মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথে আমাদের চলতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই বাংলাদেশে।

আমি : সাইবার আইনের ৫৭ ধারা সম্মন্ধে...

প্রবীর : হ্যাঁ, ওই আইনের ধারায় আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলা তুলে নেয়নি এখনো। তথাপি মনে করি দেশের সার্বভৌমত্ত রক্ষার স্বার্থে ও দেশ বিরোধী শক্তিকে সংযত রাখতে কিছু কঠোর পদক্ষেপ জরুরী। কিন্তু আমার লেখা কোন ভাবেই দেশের স্বার্থ বিরোধী ছিল না, ছিল ব্যক্তি দুর্নীতি বিরোধী। অবাক লাগে যখন দেখি এক শ্রেণীর দেশবিরোধী জঙ্গিবাদের উগ্র সমর্থক দেশের তথাকথিত নাগরিক যারা শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুৎসিত প্রচার করে দিব্যি পার পেয়ে যায়। এদের ওই ৫৭ ধারায় সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা যায় না। অথচ সংবাদ মাধ্যমকে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হয়। এই অবস্থার অবসান সময়ের দাবী।

আমি : শুনেছি এই বিতর্কিত আইন নেত্রীর নির্দেশে পর্যালোচনা ও সংশোধন করার চেষ্টা হচ্ছে...

প্রবীর : সেই জন্যই বলি, বাংলার জনগনের সর্বশেষ ভরসার জায়গা হলেন শেখ হাসিনা। মানুষ সুবিচার পাবেই বলে আমার বিশ্বাস।

আমি : আনন্দবাজার পত্রিকা নিয়ে যদি কিছু কথা বল...

প্রবীর : এই খবরের কাগজ শুধু নিছক এক কাগজ নয়, একটি শিক্ষণীয় প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের এই স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি আমাদের প্রতিদিন শিখিয়ে চলেছে যে গণতন্ত্র ও স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। আনন্দবাজার কোনদিন সরকারী ভয়ভীতির কাছে মাথা নত করেনি করবেও না, তার কর্ণধার ও প্রধান সম্পাদক শ্রী অভিক সরকারকে আটক করার পরেও করেনি, সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধ করা ও জ্যোতি বসুর শাসনে ৫৭ দিন এই পত্রিকাকে গায়ের জোরে বন্ধ করার পরেও ওরা কারো গোলামী করেনি। আজো সেই ধারা অক্ষুণ্ণ আছে।

আমি : ফরিদপুর জেলে কয়েদ থাকাকালীন সময়ে আনন্দবাজারের সাংবাদিকের মুক্তির সপক্ষে জোরালো প্রচার কতটা সাহস যুগিয়েছিল ?

প্রবীর : হ্যা, সেই দুঃসময়ে আনন্দবাজারের একাধিক সংবাদ প্রচার বাংলার স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের কাছে এক সাহসী বার্তা বহন করে এনেছিল। কলকাতা সফরকালে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে পত্রিকা সদর দপ্তরে আমাকে যে সম্মান সাংবাদিক বন্ধুরা প্রদর্শন করেছেন, সেই সম্মানের ভাগীদার বাংলাদেশের সমস্ত সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদ কর্মীগণ। আমি কৃতজ্ঞ।

আমি : তোমার সম্পাদনায় 'বাংলা ৭১' নামে দৈনিক পত্রিকা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সাধারণ পাঠকের হাতে এই কাগজটি পৌছুতে পারছেনা। সমস্যা কোথায় ?

প্রবীর : প্রায় বছর ঘুরতে চলল কিন্তু সরকারী বিজ্ঞাপনের অনুমতি মেলে নাই। দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে এই দেশে সরকারী সুবিধা ভোগ করে চলেছে কিন্তু আজ প্রায় বহু মাস হয়ে গেল আমাদের কাগজের পক্ষে কোন সরকারী সাহায্য এপর্যন্ত মেলে নাই। অথচ, আমাদের পত্রিকার সাথে যুক্ত কর্মীরা প্রায় নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে চলেছে এই আশায় যে হয়ত একদিন আমরা মাথা তুলে দাড়াতে পারব।

আমি : দু'দেশের মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা গুলি কি মনে কর?

প্রবীর : কোন মাংস না খেয়েও শুধু মাছ সবজি খেলেও মানুষ বাঁচে কিন্তু মানুষ যদি ভারতের সুচিকিৎসা থেকে, উন্নত শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পত্র পত্রিকা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ থেকে বঞ্চিত থাকে তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে। আশা করব যে, দু'দেশের সরকার সাংবাদিক, শিক্ষা সংস্কৃতি ক্ষেত্রের মানুষদের ভিসা হয়রানির সুরাহা করবেন।

আমি : পশ্চিম বঙ্গের মানুষের প্রতি তোমার বার্তা ...

প্রবীর : বাংলার মানুষ আজ দ্বিখণ্ডিত সীমান্তের দুপারে ধর্মীয় রাজনীতির পাপে। আজো যদি রাজনীতি থেকে ধর্মকে দূরে রাখা না যায়, বাঙ্গালীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন থেকে যাবে চিরকাল। মৌলবাদের সাথে সহবাসের অভিজ্ঞতা অতিতেও সুখময় ছিল না, আজো নেই, কোনদিন থাকবেও না।


শেখর রায়, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক, কোলকাতা


পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test