E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে

২০১৬ জানুয়ারি ০৩ ১০:৪৯:২২
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে

মাহবুব আরিফ

আজকে খুব ভালো লাগছে, রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করা মানুষদের নিজ গ্রামে পুনর্বাসন করবে সরকার। প্রথমে তাদের সরকারি জমিতে পুনর্বাসন করা যায় কিনা তা দেখা হবে। প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ছয় মাসের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি এই প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে চাই, আমাদের দেশ আজ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে | ৬.৫ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখে আমাদের আস-পাশের দেশগুলো আজ ঈর্ষান্বিত, আমাদের সুহৃদ প্রধানমন্ত্রী কি একটি বার চিন্তা করে দেখেছেন যে এই বাংলাদেশে কত সংখ্যক মানুষ এই ৬.৫ হারের প্রবৃদ্ধির স্বাদ থেকে বঞ্চিত ?

মধ্যবিত্ত হয়ে বেঁচে থাকাটা যে কি দুর্বিষহ যন্ত্রণা সেটা ধনীদের বলে বোঝানো যাবে না | মধ্যবিত্তরা আজ ধনী প্রতিবেশীদের সাথে বড় লোক হবার অভিনয় করে বেচেঁ আছে, গরীবের খাতায় নাম লিখিয়ে ছেলে মেয়েদের প্রকৃত শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে জীবনের শেষ সঞ্চয়টুকু বিলিয়ে দিচ্ছে, বাংলাদেশে ভেজালের স্বর্গে সন্তানদের ঔষধ কিনতে গিয়ে হতে হচ্ছেন প্রতারিত |প্রবৃদ্ধির সিংহ ভাগটাই চলে যাচ্ছে শুধু মাত্র একটি শ্রেণির ঘরে যারা আজ শোষক শ্রেণি, পুঁজিবাদী, দুর্নীতিবাজ, মুদ্রা পাচারকারী, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, সরকারী আমলা ও মন্ত্রি বর্গদের হাতে, ধনীদের জন্যে বাংলাদেশের আইন আদালত খুবই সহজ বিষয় হলেও গরিবের জন্যে আইন আদালত কঠিন একটি বিষয় |

ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালে পাচার হওয়া টাকার পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাচার হওয়া এই অর্থ আগের বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। নিশ্চয়ই পথের ভিখিরিরা এই টাকা বিদেশে পাচার করেনি ? দেশের রাজস্ব ফাকি দাতারাই এই টাকা বিদেশে পাচার করে, হলমার্ক, ডেসটানি২০০০ তার উত্কৃষ্ট প্রমান |

আমি প্রধানমন্ত্রীকে বোঝার চেষ্টা করছি, সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহতী পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা জানাচ্ছি, আমি সম্পূর্ণভাবেই নিশ্চিত যে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দেশ প্রেম শত ভাগ খাটি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে এই দুর্নীতিবাজ যে সমাজ গড়ে উঠেছে তাকে ঠেকাবে কে ?
সমাজের মাঝে শ্রেণী বৈষম্যের ব্যবধান কমিয়ে আনতে না পারলে এই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে না , আজ যদি সমাজে সুশাসন থাকতো তবে বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭.৩ পর্যন্ত হতে পারতো | যতটা সহজে একজন ধনী ব্যক্তি ঋণ খেলাপি হয়েও আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে ততটা সহজে একজন গরীব তা পারে না,তাই গরীবদের কাছে ঋণ যতই সহজ হোক সেটা একটা বোঝা বৈকি | বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হওয়া কতটুকু প্রয়োজন আমার জানা নাই তবে সবার মাঝে সরকারী দল করাটা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়, তা না হলে প্রবীর শিকদারের মত বঙ্গবন্ধু ও দেশ প্রেমিকের মামলা তুলে নেয়া হয় না অথচ যারা ক্ষমতার বলে অন্যের চোখ তুলে নিতে চায় তাদের জন্যে আইন থাকে নীরব | দলের ভেতরে জামাতীরা যে ভাবে রজনীগন্ধা ফুলের আমন্ত্রণে জায়গা করে নিচ্ছে তাতে মনে হয় কিছুদিন পর ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ জাদুঘরে স্থান পাবে আর গণতন্ত্র তো অনেক আগেই অন্য কোন গ্রহের দিকে পাড়ি জমিয়েছে, পুঁজিবাদীদের দাপটে সমাজতন্ত্রের কথা বললেই তো আইনের হাতুড়ি পিটিয়ে ধোলাই দেয়া হয়, তা না হলে কি হলমার্ক, ডেস্টিনি র মত ঋণ খেলাপিরা আইনের ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায় , তাদের মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে কেন ?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক তাই আপনার আসে পাশেও আমরা বিত্তবানদের পরিবর্তে প্রকৃত দেশ প্রেমিকদের দেখতে চাই, প্রকৃত রাজস্ব প্রদানকারীদের মূল্যায়ন দেখতে চাই, টাকা পাচারকারীদের শাস্তি পেতে দেখতে চাই |

শিক্ষা ব্যবস্থায় অনিয়ম রোধে এখনি পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবার আশংকা আছে, আমাদের দেশের প্রধান বিচার পতি অতি সম্প্রতি পহেলা জানুয়ারি ২০১৬ তে তার এক বক্তব্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি ব্যবসায়িক ভাবে লাভ জনক খাত হিসাবে উল্লেখ্য করেছেন যা আসলেই আমাদের জন্যে উদ্বেগজনক, তিনি আরও বলেন "আমাদের এই যে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সেখানে শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারী প্রত্যেকের সর্বত্র অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার কি মান ছিল, আজকে আমরা কোথায় চলে যাচ্ছি? আমরা এইরকম একটা প্রতিষ্ঠানকে কি রক্ষা করতে পারব ? প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা শিক্ষাকে একটা ব্যবসা হিসেবে পরিণত করেছি। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি মহান বিদ্যাপীঠ। আমার মহান বিদ্যাপীঠের অনারেবল (সম্মানিত) শিক্ষক যাঁরা; এই শিক্ষকেরা এখন নিজ প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেওয়ার চেয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নেওয়ার জন্য ঝুঁকে যান। আমার এই কথা শুনলে অনেকে অখুশি হবেন।"

আশা করি সব দিক বিবেচনা করে গরীবদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি মানুষ তার নাগরিক অধিকার পাবে, সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না, সরকারী শিক্ষক ও সরকারী ডাক্তারদের বেসরকারি ভাবে ব্যবসা করার উপর কঠোর কর আরোপ করা হবে, মন্ত্রী ও সরকারী আমলাদের বিদেশে ভ্রমণ কালে তাদের অর্থ পাচারের কৌশলগুলো খুঁজে বের করে তাদের দুর্নীতিকে কঠিন হাতে দমন করে নিতে হবে | ভেজালের রাজ্যে সকল ভেজাল বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে এই অপরাধের শাস্তি আরও কঠিন ভাবে কার্যকর করতে হবে | দুর্নীতি হচ্ছে আমাদের সর্ব বৃহৎ বাধা আর সমাজের বেশীর ভাগ উচ্চ বিত্তরাই এই দুর্নীতির সাথে জড়িত | আইন, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যাঙ্ক, প্রশাসন, আমলা ও সরকার সব কিছুই আজ এই কিছু সংখ্যক উচ্চবিত্তদের হাতে মুষ্টির ভেতরে আটকা পরে আছে, আমার যদি এই পুঁজিবাদী শ্রেণীকে ভাঙ্গতে না পারি তবে আমাদের বাংলাদেশের সব অর্জনই হবে উচ্চবিত্তদের অর্জন, গরীবদের জন্যে বছরের পর বছর পুনর্বাসনের ব্যবস্থাই করে যেতে হবে, আর যেদিন আমাদের সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন থাকবে সেইদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন পথে ঘটে খুঁজলেও ভিখিরি খুঁজে পাওয়া যাবে না |

লেখক :সুইডেন প্রবাসী

(ওএস/এস/জানুয়ারি০৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test