E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধর্মই যদি অনর্থের মূল তবে রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কিসের

২০১৬ মার্চ ০৪ ১৪:৫৫:৩৬
ধর্মই যদি অনর্থের মূল তবে রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কিসের

মাহবুব আরিফ : বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ আমরা যেটাকে বৃহৎ বাংলা বলে থাকি। এককালে ভারতবর্ষের কোলে থেকেই পাশাপাশি পাকিস্তান নামক ওপর একটি দেশের জন্ম নেয় শুধু মাত্র ধর্মের উপর ভিত্তি করে।

অথচ বাঙ্গালি জাতি হাজার বছর ধরে একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থাপনার মাঝে ধর্মীয় ভেদাভেদ বিহীন এক অপরূপ সুন্দর পরিবেশেই খুব ভালই তো ছিল। ১৯৪৭ সালে ধর্মটাই হয়ে ওঠে দেশ ভাগের বিশেষ কারণ। বাঙালি জাতির উপর নেমে আসে সাম্প্রদায়িকতার কালো থাবা। এই থাবা থকে মুক্তি পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। জন্ম নেয় ধর্মনিরপেক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। যাকে বলে এই উপমহাদেশে একটি নতুন সেকুলার দেশ, বাংলাদেশ।

ভাবতেও অবাক লাগে, ১৯৪৭ সালের পর এই দেশ থকে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি হিন্দুদের বিতাড়িত করা হয়েছে। কিংবা অনেকেই বিপদে পড়ে স্বেচ্ছায় এ দেশ থেকে ভারতে চলে গেছে।

১৯৮৮ সালেই স্বৈরাচার এরশাদ সরকার রাষ্ট্র ধর্ম সংবিধানে যোগ করে আবার সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে। পর্দার আড়ালে ধর্মনিরপেক্ষতার নাম রাষ্ট্র একটি বিশেষ ধর্মকে সাংবিধানিক ভাবেই এখন পর্যন্ত লালন পালন করতে যাচ্ছে। সত্যি কি অদ্ভুত সেলুকাস এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে না করতে করতেই সবার অগোচরে সংবিধানের ভেতরে রাষ্ট্র ধর্ম ঢুকে গেল, প্রশ্ন : এতই যদি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজন ছিল তবে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম রেখে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ নামে এই প্রহসন কেন? রাষ্ট্র ধর্মকে রক্ষা করতে গিয়ে আজ সমগ্র দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে। দেশের আনাচে কানাচে ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন জন্ম নিচ্ছে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানদের উপর চলছে ধর্ষণ, নিপীড়ন, হত্যা, জবর দখল আর বাধ্য করা হচ্ছে দেশ ত্যাগে, প্রতি বছর গড়ে হাজারেরও বেশি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়! ৫৭ ধরা কি তখন ঘুমিয়ে থাকে।

কিছুদিন আগেই রামু ও কক্সবাজেরে ধর্মীয় উন্মাদনার এক বীভৎস ঘটনা আমাদের অনেকেরই জানা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় কিন্তু আমাদের টনক নড়ে না। ১৯৭১ সালেও পাক সামরিক বাহিনী হিন্দুদের উপর অত্যাচার করেছে। দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। কিন্তু আজ বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর যে পরিমাণ নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে সেই মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

১৯৪৭ সালের পর থেকেই যেভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু নারীদেরকে অত্যাচার, ধর্ষণ, শারীরিক লাঞ্ছনা এবং হত্যা করা হয়েছে তার বীভৎস বিবরণ টানতে গেলে অনেকেরই ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে। বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৮% ভাগ থেকে ৮% শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের এক মহা-উৎসব পালিত হচ্ছে, আজ যদি শত্রু সম্পত্তি আইনটি অর্পিত সম্পত্তিতে পরিবর্তন না করে তা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হতো তবে হিন্দুদের সম্পত্তি জবর দখলের এই মহা-উৎসব তৈরি হতো না।

রাষ্ট্র ধর্মকে পুঁজি করে আজ যারাই এই দেশকে রক্ষা করতে চাইছেন তাদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ একবার অন্তত নিশ্চিত করেই হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়ে তাদের অন্তর আত্মার কান্না কে শোনার চেষ্টা করবেন!

লেখক : সুইডেন প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test