E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা অবাস্তব কিছু নয়

২০১৬ মার্চ ০৫ ১৬:৫১:০০
শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা অবাস্তব কিছু নয়

মোঃ জাকির হোসেন : আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি রীতি হল, মৃত্যুর পর কফিনে ফুলের স্তবক দেওয়া আর বুকে কালো ব্যাচ ধারন করা অর্থাৎ মৃত্যুর পর তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করার প্রাণ-পণ প্রচেষ্টা কিন্তু জীবিত কালে এই ব্যক্তির শত যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়না, দেওয়া হয়না যোগ্য আসনে বসার সুযোগ। তার ত্যাগ তিতিক্ষা-সততার কোন মূল্যায়ন জীবিত কালে পায় না।
 

কত ত্যাগী নেতা-কর্মী অসহায় অবস্থায় পৃথিবী ত্যাগ করেছেন তার হিসাব কয় জনই বা রাখে। আজও অনেক ত্যাগী সৎ যোগ্য নেতা কর্মী রয়েছেন যারা অর্থ-বিত্তের অভাবে এবং রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়ে যোগ্য আসনে বসে জনগণের জন্য অবদান রাখতে পারছেন না। আজকাল ত্যাগের স্বীকৃতি থেকে অর্থের স্বীকৃতিই মূখ্য।
মনে পড়ে ১৯৭০ সালে সামরিক শাসনের অধীনে বঙ্গবন্ধু ও তার দল আওয়ামীলীগ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু জতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে যাদেরকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন তাদের ব্যাপারে তিনি জনগণকে বলেছিলেন আমি কলাগাছকে মনোনয়ন দিয়েছি তোমরা নৌকায় ভোট দাও। প্রকৃত পক্ষে ওরা কলাগাছ ছিলেন না।

বঙ্গবন্ধু তখন স্কুল কলেজের শিক্ষক, ডাক্তার, উকিলদেরকে বেশির ভাগ মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সৎ যোগ্য তথা জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন যার ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেদিন পাকিস্তান মুসলিম লীগকে পরাজিত করে বিপুল বিজয় অর্জন করেছিলেন।

আজকাল সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন কোথায়? রাজনীতি এখন বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও অবসরপ্রাপ্ত আমলার নিয়ন্ত্রণে যারা রাজনীতিতে জনগণের মাঝ থেকে উঠে আসেন নাই। তারা হঠাৎ করে উপরের বদান্যতায় জনগণের উপর চেপে বসেছে। দলের নেতা কর্মীদের দুঃখ-কষ্ট আর ত্যাগ-তিতিক্ষার কোন মূল্যায়ন তাদের কাছে নাই। কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় সে চেষ্টাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাদের ধারনা যারা দল করে তারা দলের মার্কায় ভোট না দিয়ে যাবে কোথায়! তাই তাদেরকে তোষামোদ করা বা তাদের খোঁজ খবর নেয়ার কি প্রয়োজন। এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থি মানসিকতা।

বঙ্গবন্ধু বলতেন বাংলার এমন কোন ঘর নাই যেখানে আমার একটা পাগল নাই। কি কারণে বঙ্গবন্ধু এমন একটি আত্মপ্রত্যয়ী কথা বলতে পারলেন ? বঙ্গবন্ধু বাংলার সব ঘরে যাননি কিন্তু বঙ্গবন্ধু যে বাংলার মানুষকে ভালবাসতেন, বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক মুক্তির জন্য জীবন পণ সংগ্রাম করেছেন, আর বঙ্গবন্ধু সেই অমিয় বাণী বাংলার ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছিলেন দলের ত্যাগী নেতা কর্মীরা। আজ সেই নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। প্রকৃত রাজনীতিকদের হাতে রাজনীতি না থাকায় এবং তাদের রাজনীতি বিমুখতা এর প্রধান কারন।

যেখানে দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে, সেই পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশে দলীয় মার্কায় ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হতে চলেছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ৫/১০ করে দলের প্রার্থী রয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামীলীগে এই প্রবনতার আধিক্য খুব বেশি। যার ফলে এককভাবে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এই বিষয়ে যথাযথ দিক নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন।

বর্তমানে প্রার্থী নিয়োগে জনপ্রতিনিধি আর দলীয় নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। কে কার বলয়ের লোক মনোনয়ন দেবেন, এখানে যোগ্যতা সততা প্রাধান্য পাচ্ছে না। প্রাধান্য পাচ্ছে তাদের নিজস্ব পছন্দের লোককে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিযোগিতা। যার ফলে সৎ, যোগ্য, অভিজ্ঞ প্রার্থীরা একদিকে অর্থের অভাব অন্যদিকে নেতৃত্বের ব্যক্তিগত অপছন্দের স্বীকার হচ্ছেন, অথচ জনগণ এদেরকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।

কেন্দ্রীয় প্রার্থী নির্বাচন কমিটি তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় সত্যিকারের সৎ যোগ্য ও জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রনয়ন করে ইউনিয়নের জনগণের প্রত্যাশা পূরন করতে পারেন। ইউনিয়ন রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি, এই ভিত্তি যত মজবুত হবে, রাষ্ট্রীয় কাঠামো তত বেশি শক্তিশালী হবে। সেজন্য ইউনিয়ন গুলিতে সৎ যোগ্য ব্যক্তিদেরকে বসাতে হবে। অর্থের মাপকাঠিতে নয়, যোগ্যতা দক্ষতা আর সততাই হোক প্রার্থী নির্বাচনের মাপকাঠি। তাহলেই সমাজের অবক্ষয় হ্রাস পাবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে, তৃণমূলের জনগণ দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযত ভাবে বাস্তবায়ন হবে।

সমাজের শান্তি শৃংখলা বজায় থাকবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবে রূপ পাবে। নেতৃত্বের সাথে নেতৃত্বের দুরত্ব হ্রাস পেলে রাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরে আসলে, হিংসা বিদ্বেষ পরিত্যাগ করলেই কেবল স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সঠিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

হাজারো প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে যেই নেত্রী দেশকে সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারলেন, সেই নেত্রীর পক্ষে ইউনিয়ন গুলিতে জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে তেমন কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। জননেত্রীর কাছে এই প্রত্যাশা অবাস্তব কিছু নয়।

লেখক : সহ-সভাপতি ,হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ, চাঁদপুর

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test