E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুস্থতাকে অসুস্থ বানাবেন না

২০১৬ মে ১৯ ১৯:৪৮:৫৯
সুস্থতাকে অসুস্থ বানাবেন না

কবীর চৌধুরী তন্ময়


সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হওয়া আড়াই মিনিটের এক অদ্ভুত ভালোবাসার ভিডিওটি দেখে যতটা আনন্দে আত্মহারা হয়েছি, তার চেয়েও বেশী কষ্ট পেয়েছি সুস্থতাকে অসুস্থ বানিয়ে সভ্যতার মাঝে অসভ্যের কালিতে প্রেমিকজুটিসহ তাঁদের বন্ধুদের শাস্তির খবরটি পড়ে।

শুধু কষ্টই বলা যাবে না! কখনো এপাশ, কখনো ওপাশ করতে-করতে রাত যে কখন ভোর হয়ে উঠেছে তা আযানের শব্দ কানে না এলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না।

লিখতে বসেও নিজের একান্ত ভালোবাসার গল্পের দৃশ্যগুলো বার বার মনে পড়েছে। অসভ্যতার ভয়ে বহুবার বাবা-মা’র কাছে মিথ্যে বলতে হয়েছে। কখনো আমি আবার কখনো আমার ভালোবাসার মানুষটিকে(আমার স্ত্রী) নিয়ে। এখানে-সেখানে লুকিয়ে দেখা করতে হয়েছে। তবে বরাবরই আমাদের বন্ধুমহল আমাদের সহায়তা করেছে। সারাক্ষণ আমাদের পাশে ছিলো যেমনি ঢাকা কমার্স কলেজ’র প্রেমিক জুটিকে তাঁদের বন্ধুরা হাতে-হাত ধরে গোলাকার বা বৃত্তাকার করে ভালোবাসাকে স্বাগত জানিয়েছে, সমর্থন করেছে আর অসভ্যতা না করে সভ্যতাকে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়েছে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, ঢাকা কমার্স কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ১২মে এক অফিস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ওই ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুই শিক্ষার্থী (প্রেমিকজুটি)কে বহিষ্কার এবং তাঁদের বন্ধু ৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল এবং কলেজের সব শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

আর এই শাস্তির খবরটিও সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ মাধ্যম হয়ে সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হয়ে এখন সবার হাতে-হাতে। থেমে নেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। নানা জনের নানান মন্তব্যের মাঝে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। শুধু তাই নয়, অনেকে তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছে। আবার কেউ-কেউ কলেজ কর্তৃপক্ষের এই ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেও পারছে না। মন্তব্যকারীদের মধ্যে কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেক অভিভাবকও রয়েছে।

একটা সময় যখন ইভটিজিং-এ অতিষ্ট ছিলো বাংলাদেশ, তখন আইন-কানুনসহ দেশের মনোবিজ্ঞানীরা একসাথে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেছিল। পরিবারসহ অভিভাবকদের সচেতন-সতর্ক এবং তাঁদের সন্তানদের মাঝে সুস্থ্যধারা তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছিলো। পারিবারিবক বন্ধন, অভিভাবদের সাথে সন্তানদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং সর্বপরি সভ্যতাকে লালন-পালনের কথা বার বার বলা হয়েছিল। স্কুল-কলেজগুলোতে ইভটিজিং নিয়ে বিভিন্ন সচেতনমুলক আলোচনাও করা হয়েছিল।

আজ যখন পুরো জাতি সেখান থেকে ধীরে-ধীরে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে, সুস্থ্যতাকে লালন-পালন করছে, সেখানে এই ধরনের শাস্তি সত্যিই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে কলঙ্কিত করবে, ইভটিজিং-এর প্রতি ধাবিত করবে এবং বিতর্কিত করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিবে।

এখনো গুগুলে সার্চ দিলে বেড়িয়ে আসে- ওমুক জেলায় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় ছাত্রীকে চর-থাপ্পর মারায় কিশোর জেলখানায়। এসিডে জলসে দেওয়া হয়েছে কিশোরীর মুখমন্ডল! স্কুলে ছাত্রীকে টেনে-হেচরে অপমান অতঃপর উভয় পক্ষের আলোচনায় সমযতা ইত্যাদি ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত ভাবে ঢাকা কমার্স কলেজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আমি হতবাক ও মর্মাহত এবং সেই সাথে এই ১১ জন শিক্ষার্থীর সুস্থ্যধারাকে অসুস্থের কালি লেপন করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন হয়রানীর মতন অসভ্যতার খবর আমাদের সকলেরই কম-বেশী জানা। সত্য এই, এই যৌন হয়রানী বা এই ধরনের বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন সংগ্রাম করে অসভ্যতা ও নোংরা মন-মানসিকতা থেকে নিজেরাসহ পুরো জাতিকে বেড়িয়ে আসার পথ দেখিয়েছে। অপরদিকে শিক্ষক সমাজ এই ধরনের শিক্ষকের বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রতিবাদী না হয়ে উল্টো তার অপকর্মের দায় নিরবে-নিভৃত্তে বহন করেছে। কতিপয় বর্বর শিক্ষকের জন্য পুরো শিক্ষক সমাজের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

ভালোবাসার বৃত্ত তৈরি করা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক মন-মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিৎ হবে না। অস্বাভাবিক গতিধারায় তাঁদের ঠেলে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভালোবাসার শিক্ষার্থীদের মনে শিক্ষালয় ও শিক্ষকদের প্রতি যে আস্থা-বিশ্বাস ছিলো তা ভেঙ্গে দেওয়া মানে ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হিংসা-প্রতিহিংসার বীজ বুনার সামিল হবে।

আমি মনেকরি, আমাদের নতুন প্রজন্মদের ইভটিজিং-এর দিকে ঠেলে না দিয়ে প্রকৃত সভ্যতা, মানুষ-মানবতা এবং সভ্য ও সুন্দরের প্রতি ধাবিত করা উচিৎ। মানুষের মাঝে মাবতাবোধ এবং সত্যিকারের ভালোবাসার মাবনপ্রাচীর তৈরিতে সহায়তা প্রদান করা আমাদের সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

প্লীজ ! শুধু লেখার ছলোনায় নয়, বিনীত অনুরোধ- ভালোবাসাকে ভালোবাসা দিয়ে মুল্যায়ন করুন। সভ্য ও সুন্দরকে লালন করুন। শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবতাবোধ সৃষ্টিতে সহায়তা করুন। ভালোবাসার সামনে সকল অপরাধ অসহায়। তাঁদের শাস্তি নয় বরং এই ধরনের ভালোবাসার মানবপ্রাচীর সমাজ-সংসারসহ রাষ্ট্রের চারপাশে তৈরি করুন।

(অ/মে ১৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test