E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'মাছরাঙ্গার রিপোর্টটাই রিপোর্টারের উদ্দেশ্য প্রণোদিত'

২০১৬ জুন ০১ ২২:২৬:০৫
'মাছরাঙ্গার রিপোর্টটাই রিপোর্টারের উদ্দেশ্য প্রণোদিত'

শাহেদ খান


মাছরাঙা টিভির রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন সাহেব যে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য বহুল আলোচিত জিপিএ ৫ নিয়ে রিপোর্ট টি করেছেন তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই, মাছরাঙা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তেমনি তার টি আর পি রেটিং বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই রিপোর্ট টি প্রচার করেছেন সেটাও সহজেই অনুমেয়।

একটু খেয়াল করে ভিডিওটি দেখলেই বুঝতে পারবেন পুরো ভিডিওটাই রিপোর্টারের উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি ১৩ জন শিক্ষার্থী (৬ জন জিপিএ ৫ প্রাপ্ত) দের নিয়ে রিপোর্ট টি করেছেন। তিনি বিজ্ঞান বিভাগে পড়া এক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করেছেন পিথাগোরাস কে ছিলেন জবাবে সে উত্তর দিয়েছেন সে একজন ঔপন্যাসিক ছিলেন।

একটু লক্ষ্য করে দেখুন বিজ্ঞান বিভাগে পড়া একটি ছেলে সে যত অপদার্থই হোক না কেন! সে পীথাগোরাস কে ঔপন্যাসিক বলবেন না, আমি মানবিক বিভাগে পড়েছি পীথাগোরাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাকে সর্ব্বোচ্চ গণিতবিদ বলতাম কারণ আমি নিজেও ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনার সুবাদে জানতে পারছি তিনি একজন দার্শনিক এবং গনণিতবিদ ছিলেন। অন্যান্যদের যে প্রশ্নগুলো করেছেন একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলে সহজেই বুঝতে পারবেন রিপোর্টার কতোটা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন।

মাছরাঙা কর্তৃপক্ষ তার চ্যানেলে নিউজ প্রচার করতেই পারেন, রিপোর্টার রিপোর্ট করতেই পারেন। তবে একটু খেয়াল করে দেখুন যাদের কে নিয়ে রিপোর্টটা করা হয়েছে তাদের কথা কি একবারো ভেবে দেখেছেন, সবে মাত্র তারা এস এস সি পাস করেছে, দুদিন পর কলেজে ভর্তি হবে তাদের সহপাঠিরা তাদের কে কিভাবে দেখবে, তার পিতা-মাতা বা আত্মীয় স্বজনরাই বা বিষয় টা কিভাবে নিবে, পাশের লোকগুলো হয়ত ছিঃ ছিঃ করবে আপনার এই ছেলে/ মেয়ে জিপিএ ৫ পেল কিভাবে যে জাতীয় সংগীতের রচয়িতার নাম জানে না! তখন তাদের জন্মদাতা পিতা-মাতা কতোটা আঘাত পাবেন। শুধু তাই না এটাই হয়ত বড় কোন দূর্ঘটনার কারণ হতে, কারণ আমাদের সমাজে এটা অহরহ ঘটছে, তখন তার দায়ভার কে নেবে?

এদের মধ্যে আবার দুজন মেয়ে ছিল। আমাদের যে সমাজ ব্যাবস্থা আমার যতদুর বিশ্বাস তাদের বিয়ের সময় পর্যন্ত এ কথাগুলো উঠে আসবে।

একজন আইনের ছাত্র হিসাবে আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে নিম্নোক্ত অসংগতি গুলো আমার চেখে পরে:-

শিশু আইন ১৯৭৪ এর ১৭ ধারাতে বলা আছে
"কোন সংবাদ পত্র,পত্রিকা বা নিউজশীটে প্রকাশিত কোন রিপোর্ট অথবা সংবাদদাতা এজেন্সি এই আইনের অধীন কোন আদালতের কোন মামলায় জড়িত কোন শিশুর উপর বিস্তারিত কোন বর্ণনা যাহা এইরুপ শিশুকে সনাক্তকরণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে তাহা প্রকাশ করিবে না বা এইরুপ কোন শিশুর ছবি প্রকাশ করিবে না।"

আপনি হয়ত ভাবছেন বিষয়টি তো মামলাধীন নয় বা শিশুরা ( বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের নিচে সবাই কে শিশু হিসাবে গণ্য করা হয়) অপরাধ করেনি, কিন্তু একটু লক্ষ্য করে দেখুন সমাজ তাদের কোন চোখে দেখছে।
বা তারাই কি ভাবছে হয়ত ভাবছে জিপিএ ৫ পাওয়াই তাদের কাছে বড় অপরাধ।

দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৯৯ ধারায় মানহানি (Defamation) সম্পর্কে বলা আছে:- "কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্য বা তার খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট হবে বলে জানা সত্বেও বা তার বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্বেও কথিত বা পঠিত হবার জন্য অভিপ্রেত কথা বা চিহ্ন কর্তৃক বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে সে ব্যক্তি সম্পর্কিত কোন নিন্দাবাদ বা প্রণয়ন প্রকাশ করে তবে নিম্নে নির্দেশিত ব্যতিক্রমসমূহ ছাড়াই অন্যান্য ক্ষেত্রে, সে ব্যক্তি উক্ত অন্য ব্যক্তির মানহানি করে বলে পরিগণিত হয়।"

আমার প্রশ্ন হচ্ছে রিপোর্টার বা চ্যানেল কর্তপক্ষ কি জানত না যে এতে বাচ্চাগুলোর সুনাম বা খ্যাতি নষ্ট হবে সর্ব্বোপরি তারা একটা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়বে।

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় বলা আছে:-
"কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।"

বিষয় গুলো এড়িয়ে যাবার জন্য রিপোর্টারকে খুব বেশী বেগ পেতে হতো বলে মনে হয় না। তিনি ছেলেমেয়ে গুলোর মুখ ব্লার (অস্পষ্ট) করে দিতে পারতেন, তিনি প্রধানত যে কাজটি করতে পারতেন তা হচ্ছে কৃত্রিমতা বর্জন, কারণ একটা জিনিস লক্ষ করুন ১৩ জনের তিনজনও কি কয়েকটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারতেন না, অবশ্যই পারতেন, আপনি আপনার আশেপাশের ছেলেমেয়েদের দিয়ে যাচাই করে নিতে পারেন।

তবে একথা অস্বিকার করার জো নেই যে হারে জিপিও পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে সে হারে শিক্ষার মান বাড়ছে না।

একটু লক্ষ্য করুন আমরা যারা বিষয়টাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে বিভিন্নভাবে ট্রল করে বাচ্চাগুলোকে হেয় করছি। আমাদের একটু ভাবা উচিত এরাও তো আমাদেরই মত কারো না কারো ছোট ভাই-বোন এর দায়বদ্ধতাটা কিছুতো আমাদের ও আছে।

লেখক : ছাত্র, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test