E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২০০ কোটি টাকার জন্য ধন্যবাদ পেলে, ধিক্কার কেন নয়!

২০১৬ জুন ০৬ ১৮:০৯:২৯
২০০ কোটি টাকার জন্য ধন্যবাদ পেলে, ধিক্কার কেন নয়!

দেবাশীষ বিশ্বাস : ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দুটি পক্ষ ছিলো একটা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির লাল-সবুজ অন্য পক্ষ চাঁদ-তাঁরা। বছরব্যপী সরকারের আয়-ব্যয়ের একটি পরিকল্পনার নামই বাজেট।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার একটি বাজেট মহান সংসদের মাধ্যমে জাতি শুনেছে। বিভিন্ন খাতের আয়-ব্যয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থনীতিবিদদের যতটা না কৌতুহল ছিলো এর থেকে বেশি কৌতুহল ছিলো, “ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশ, ২৪ হাজার মন্দির এবং ধর্মীয় ৫ হাজার শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গনবন্দ হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ২০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ।”

আমি জানিনা ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে বিবিসি এর প্রতিবেদক আবুল কালাম আজাদ গোপালগঞ্জের উলপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায় কেন কমে যাচ্ছে এই বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলো সেটা কোন মন্ত্রী বা সংসদ দেখেছে কিনা? তবে বার বার প্রতিবেদনটি দেখে মনে হয়েছে হিন্দুদের অনেক মনের কথা বুকে চাপা দিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেছে। তবু কিছুটা তো ফুটে উঠেছে কেন দেশ ছাড়ছে এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

১৯৭৪ সালের আদমশুমারী বলছে এদেশে মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ হিন্দু ছিলো কিন্তু ২০১১ সালে এসে সেটা কমে দাঁড়ায় ৮.৪ শতাংশ। এই ৮.৪ শতাংশ নিয়ে অনেক বিতর্ক বিদ্যমান। তবে অর্থনৈতিক কারণে কেই দেশত্যাগ করেছে এমন তথ্য সরকারের কোন সংস্থার কাছে আছে কিনা আমার জানা নেই তবে চোখের সামনে যাদের চলে যেতে দেখেছি বেশির ভাগ পরিবার মনে ক্ষোভ আর ব্যথা নিয়ে দেশ ত্যাগ করছে। তাদের অভিযোগ ছিলো এদেশে পরের বাড়ি কাজ করে ডাল ভাত খাবো ভারতে গিয়েও ডাল ভাত খাব, শুধু শুধু মালাউন গালি কেন শুনবো।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তিন শ্রেণীর হিন্দু সম্প্রদায় বসবাস করে একটা শ্রেণী বেশ ধনী শ্রেণী অন্যরা মধ্যবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দিনমজুর। তবে এই ধনী হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য বেশি হুমকি। এই কারণে হুমকি এদের নেতৃত্বের গুণাবলী ভাল না অথবা এদের কথা সুনির্দিষ্ট জায়াগায় পৌছানোর ক্ষমতা নেই। আর এরা সুকৌশলে দুই দেশের বাসিন্দা। ফরিদপুরের এ্যাডভোকেট সুবোল চন্দ্র সাহার কথা কি দেশবাসী জানে না। তিনি দুই দেশের নাগরিক। প্রতিবাদী সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের সাথে ঝামেলার কারণেই হোক অথবা সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রেই হোক সেখানে শুধু সুবোল চন্দ্র সাহার কথা উঠে এসেছে, বাস্তবে বহু সুবোল চন্দ্র সাহা এদেশে থেকে হিন্দুদের মনোবল নষ্ট করছে।

রাষ্ট্রের নিজস্ব জায়গা থেকে হিন্দুদের বেশ ঠকানো হয়েছে! ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করতে যেয়ে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হয়েছে। এই শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে যেয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রধান অনেকের হৃদয় থেকে সরে গেছে। এরপর অবাক করার মতো একটি তথ্য রয়েছে বাংলাদেশে ইসলামী ফাউন্ডেশন নামে একটি ফাউন্ডেশন ইসলাম সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে অন্যদিকে হিন্দু কল্যাণ নামে একটি ট্রাস্ট্রি বোর্ড হিন্দুদের বিভিন্ন স্বার্থ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২৪৫.১৩ কোটি এবং ২৪৩.৩৫ কোটি মোট ৪৮৮.৪৮ কোটি টাকা অর্থমন্ত্রানালয় থেকে বরাদ্দ পেয়েছে অন্যদিকে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট বরাদ্দ পেয়েছে ১.৪৬ কেটি ও ০.৭০ কোটি টাকা মোট যার পরিমান দাড়ায় ২.১৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশে সরকারি লোকগণনায় পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে দেখা যায় প্রকল্প বাদে ধর্মমন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুযায়ী ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর বরাদ্দ ১১ টাকা থেকে ১২ টাকা অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে মাত্র ৩ টাকা।

তবে ধর্মীয় আবদার বা কুসংষ্কার নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র বেশিদূর অগ্রসর যেমন হতে পারে না তেমনি একটি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রযন্ত্রের যাঁতাকলে রেখে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা যায় না। বাজেটে ২০০ কোটি টাকা একটি সম্প্রদায়কে ছোট করার কৌশল মাত্র।

লেখক : সাংবাদিক, দৈনিক বাংলা ৭১

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test