E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাধীন দেশে খুন হতে চাই না

২০১৬ জুন ১০ ১৫:০৭:৩১
স্বাধীন দেশে খুন হতে চাই না

দেবাশীষ বিশ্বাস

......................................................................

আমি তো আর মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই যেটুক জেনেছি ইতিহাস থেকেই জেনেছি। তবে ইতিহাস জানতে গিয়ে যেটুক শিখেছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিশ লক্ষ মুক্তিকামী মানুষকে পাক দস্যুরা নির্মমভাবে হত্যা করে এত মানুষ হত্যার পরে তখন দেশটা ছিলো অসাম্প্রদায়িক। এদেশ থেকে যখন কোটি-কোটি হিন্দু জীবন রক্ষার জন্য প্রতিবেশী দেশে অবস্থান করে তখন তাদের ফিরে আসার খবর জেনেছে এদেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়। গ্রামে গুরুজনদের কাছে জেনেছি এই প্রিয় বাংলাদেশ ত্যাগ করার সময় কত মানুষ তার বোবাপ্রাণি অজানা উদ্যেশে ছেড়ে দিয়ে দেশ ত্যাগ করে, যুদ্ধ শেষে আবার যখন ফিরে আসে তখন এদেশের মানুষ বোবা প্রাণিকে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। বেগম খাদেলা জিয়ার শাসনের সময় ধারাবাহিক ভাবে এমনভাবে খুন হয়েছে একথা আমি শুনি নাই। হ্যাঁ স্বীকার করতেই হবে বেগম জিয়ার শাসনের সময়ে জনাব তারেক রহমানের হস্তক্ষেপের মাশুল আজও বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দলকে দিতে হচ্ছে। হ্যাঁ বিগত জোট সরকারের সময় জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছে একথা যেমন সত্য তেমনি বর্তমান সরকারের সময় জঙ্গীরা তাঁদের সামর্থ্য প্রমান করতে সফল হয়েছে একথা বেশ বাস্তব।

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সহধর্মীনিকে নির্মমভাবে হত্যা দেশবাসীকে অবাক করেছে কিন্তু এই দক্ষ কর্মকর্তার মত কতজন মানুষ দেশপ্রেম দিয়ে কাজ করেছে? মাঝে মাঝে মনে হয় ২% আবার মনে হয় ১০%এর বেশি না। এদেশের শিক্ষক আর ডাক্তার যখন আন্দোলন করে আমার ব্যাক্তিগত ভাবে এই আন্দোলন নিয়ে ভাবতে অবাক লাগে! আচ্ছা পুলিশের কি কষ্ট নাই? এরা কি আন্দোলন ভয় পায়? কোন ঘটনার সাথে সাথে আমরা পুলিশের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দেই! হ্যাঁ পুলিশের সীমাবদ্ধতা আছে একথা স্বীকার যদি করি তবে রাষ্ট্র থেকে বেতন-ভাতা ছাড়া প্রযুক্তিগত ভাবে পুলিশের কি সমর্থন আমরা দিয়েছি সেটা কি কোনদিন হিসাব করেছি?
ধারাবাহিক ভাবে কিছু হত্যাকান্ড বিবেকবান মানুষের মনোবলে আঘাত করেছে। বিশেষ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুক হত্যা, পুরোহিত হত্যা, শিক্ষক হত্যা সর্বশেষ পুলিশ সুপারের সহধর্মীনি হত্যা এবং সাথে সাথে আই-এস এর দায় স্বীকার। অনেক বিবেকবান মানুষ এসব হত্যাকান্ডের সাথে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর মিল খুঁজতে চেষ্টা করছে।

এদেশে দেয়াল ধাক্কা দিয়ে রানাপ্লাজা ভেঙ্গে ফেলার মতো উক্তি দেওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতি যেমন দেখেছে তেমনি আইএস নাই অথবা ধারাবাহিক ভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিছিন্ন এমন উক্তি দেবার মতো বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। ০৮ নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিবিসি এর একটি সংবাদ সন্মেলনে বলেছিলো, বাংলাদেশে আইএস আছে এমন কথা স্বীকার করে নিতে বর্তমান সরকারের প্রতি বেশ চাপ আছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিলে বাংলাদেশের অবস্থা সিরিয়া কিম্বা পাকিস্থানের মতো হবে এবং বাংলাদেশের ওপর হামলে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে তিনি ঢাকায় এক সংবাদ সংন্মেলনে মন্তব্য করেন। এদেশে সব দোষ দেবার জায়গা একটা জায়গা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পেয়েছে যেটা হচ্ছে জামাত-শিবির। জানিনা এই জায়গায় দোষ দিয়ে কাউকে খুশি করারা প্রবণতা কিনা? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যা, টাঙ্গাইলের দর্জি নিখিল জোয়াদ্দার হত্যা, পঞ্চগড়ের মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর হত্যা, আশুলিয়াতে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা, পুলিশ সুপারের সহধর্মীনি মিতু হত্যাকান্ড এবং আজ সকালে পবনার পুরোহীত হত্যাকান্ড বিবেকবান জাতি দেখেছে। সব হত্যাকান্ডের ধরন একই বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যেটা এসেছে প্রত্যেকটা খুনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে মোটরসাইকেল আর চাপাতি এবং শেষে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে দু®কৃতিকারীরা।

প্রত্যেক খুনের পর আইএস খুনের দায় স্বীকার করেছে অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় বলেছে এদেশে আইএস এর কোন অস্তিত্ব নেই, রাজনৈতিক দল একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে শুরু করেছে। মূল আসামীরা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে গেছে বিবেকবান মানুষের মনে আঘাত লেগেছে। বিবেকবান মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে আমি স্বাধীন এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কেন খুন হব? আচ্ছা দেশে জঙ্গী অথবা আইএস আছে একথা স্বীকার করে রাষ্ট্রের কি এমন ক্ষতি? সিরিয়া কিম্বা পাকিস্থান হবে এই ভয় তো? কিন্তু আমরা কি সেই দুটি দেশ থেকে বর্তমানে ভাল আছি? স্বাধীন অথবা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে খুনের চেয়ে জঙ্গি অথবা অকার্যকর রাষ্ট্রে খুন হলে সমস্যা কোথায়?


(ডিবি/এস/জুন ১০,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test