E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করা হচ্ছে

২০১৬ জুন ২১ ২০:৪৮:৩৮
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করা হচ্ছে

শামসুল হুদা

বাদ পড়া ‘ক’ তফসিলের তালিকা করার নামে অর্পিত সম্পত্তির আরেকটা ‘খ’ তফসিলের তালিকা তৈরির পাঁয়তারা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ‘খ’ তফসিল বাতিল করা হলেও ‘ক’ তফসিলের বাদ পড়া তালিকার নামে সেই ‘খ’ তফসিলকেই পুণরুজ্জীবিত করার জন্য সরকারের ভেতরের একটি চক্র মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকেও রীতিমত অমান্য করা হচ্ছে। এবং এটা করছেন সরকারে নিয়োজিত আমলাদেরই একটি অংশ।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকেও এর দায় নিতে হবে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির গোলটেবিল লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, এটা শুধু সংখ্যালঘুদের সম্পত্তির ওপর নয়, দেশের নাগরিকদের অধিকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপরও হস্তক্ষেপ। ‘‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপীল ট্রাইব্যুনালের রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি এবং প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার প্রতিবাদে’’ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেলভুক্ত নয়টি মানবাধিকার ও নাগরিক সংস্থা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সমন্বয় সেলভুক্ত সংগঠনগুলো হলো- আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, এএলআরডি, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, নিজেরা করি ও এইচডিআরসি।

প্রবীন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে লিখিত অবস্থানপত্র পাঠ করেন এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। লিখিত অবস্থানপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ আগষ্ট, ২০১৫ এবং ১০ নভেম্বর ২০১৫ তারিখ দুই দফা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আপত্তি ও অসন্তোষের কারনে অর্পিত সম্পত্তি আইনে ‘বাদ পড়া’ সম্পত্তির নামে নতুন করে অর্পিত সম্পত্তি তালিকা প্রকাশের জন্য আনা দুটি সংশোধনী মন্ত্রীপরিষদের সভা থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু গত ১২ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে “অর্পিত সম্পত্তির “ক” তালিকায় প্রকাশিত গেজেটে বাদপড়া এবং ভুল হওয়া সম্পত্তির সংশোধনী গেজেট প্রকাশ প্রসঙ্গে” শিরোনামে আরো একটি পরিপত্র অতি গোপনে জারি করা হয়। “২০০১ সালের বিএনপি-জামাত জোট সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনটি অকার্যকর করতে “লুক্কায়িত সম্পত্তি” খুঁজে বের করার নামে যে কৌশল নিয়েছিল, প্রশাসনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেই গোষ্ঠিই আজ বার বার “বাদ পড়া” সম্পত্তির তালিকা পাঠাবার কথা বলে এই আইনটিকে অকার্যকর করার পাঁয়তারা করছে”- বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় এ অবস্থানপত্রে।

এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহ-সভাপতি এডভোকেট তবারক হোসেইন প্রমুখ। এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, একটি বিশেষ মহল যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি হওয়ার দেড়যুগ পরও ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে, তারাই প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাকে বানচাল করার জন্য অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে বাধা প্রদান করে অস্থিরতা ও জটিলতা সৃষ্টির চক্রান্ত করে যাচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে কামাল লোহানী বলেন, প্রশাসনের মধ্যে গণবিরোধী মানুষগুলোকে তাদের অপকর্ম করা থেকে বিরত রাখতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। এরজন্য অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি পদে পদে আমাদের হোঁচট খেতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সরকার সাত বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও এর কোনো সুরাহা করতে পারছে না- এটি নিয়ে দুর্ভোগের চূড়ান্ত অবস্থায় আমরা আছি।

ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ নিরসনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অবিলম্বে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে গত ১২/০৪/২০১৬ তারিখ জারীকৃত “অর্পিত সম্পত্তির “ক” তালিকায় প্রকাশিত গেজেটে বাদপড়া এবং ভুল হওয়া সম্পত্তির সংশোধনী গেজেট প্রকাশ প্রসংগে” পরিপত্রটি প্রত্যাহার করা, আইন মন্ত্রণালয় হতে আপীল ট্রাইবুন্যালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষে রিট আবেদনের নির্দেশনা/ অনুশাসন প্রত্যাহার, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে অহেতুক মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি বিলম্বিত করা বন্ধ করতে ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি আইনজীবীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনামূলক পরিপত্র জারী, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের আবেদন দ্রুত নিস্পত্তির জন্য পৃথক ও সার্বক্ষণিক ট্রাইব্যুনাল এবং জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজ সমমর্যাদাসম্পন্ন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আপীল ট্্রাইব্যুনাল গঠন।




সমন্বয়ক, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল ও নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test