E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় উন্মাদনার শেষ কোথায়!

২০১৬ জুলাই ০৩ ২১:১৪:২৫
কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় উন্মাদনার শেষ কোথায়!

মাহবুব আরিফ : বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নে ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের প্রাণের বিনিময়ে মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীনতা লাভ করে। আমাদের একটি সংবিধানও তৈরি করা হয় ঠিক সেই একই আলোকে। একটি দেশ যেটার সমাজ ব্যবস্থা হবে সমাজতান্ত্রিক পরিবেশে, মানুষের মাঝে থাকবে গণতন্ত্রের চর্চা আর আমরা হবো বাঙালি। তারপর ...

এখানে আমি পাণ্ডিত্য জাহির করতে আসিনি, সত্য কথাগুলোই বলতে এসেছি, আজ ধর্ম নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ধর্ম ব্যবসা শুরু করেছেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা আজ সুশীল রাজনৈতিক ভাষা, ধর্ম হচ্ছে রাজনীতিতে টিকে থাকার ঢাল, তার একটাই কারণ বাংলাদেশের মানুষ দারুণ ভাবেই ধর্ম ভীরু। আমরা নিজেরাই ধর্মীয় শিক্ষায় নিজেদের আলোকিত করতে পারি নাই। মক্তবে মাদ্রাসায় আমরা ধর্মীয় শিক্ষা নিয়েছি অনেকটা অশিক্ষিত ধর্মান্ধ মোল্লাদের কথা শুনে, জুম্মাবার খুৎবা শুনে, কই আমাদের তো বাংলায় করান শিক্ষা দেয়া হয় নাই, বিভিন্ন আয়াতের তর্জমা আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরা হয় নাই, কেউ তো আমাদের বুঝিয়ে বলে নাই ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।

আমাদের দেশের শিক্ষা নীতিমালায় ধর্মীয় শিক্ষা হচ্ছে একটি ধারা, কেউ কি কখনো প্রশ্ন করেছি সেই শিক্ষা ব্যবস্থা কি ভাবে চলছে ? কতটুকু বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও মানবতা সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত? বিগত ৪৭ বছরে অনিয়ণন্ত্রিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের কি শিখিয়েছে, এইসব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে ৪৭ বছরে কি পরিমাণ ধর্মান্ধ মেধাবী ছাত্র বেড়িয়েছে? খুবই সুকৌশলে বিভিন্নই উগ্রপন্থী ধর্মীয় সংস্থাগুলো এই অনিয়ণন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গি তৈরির কারখানা হিসাবে ব্যবহার করেছে তার হিসেব আমাদের কারোর কাছেই নাই, কত ছাত্র-ছাত্রীর মগজ ধোলাই হয়েছে? খুব সজাগ দৃষ্টি নিয়ে যদি লক্ষ্য করেন আমাদের জাতীয় অনুপ্রেরণা জয় বাংলা শব্দটা আজ হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। যে কোন দুর্যোগ, যে কোন অনুপ্রেরণায়, আনন্দে, উল্লাসে, দুঃখে, শোকে জয় বাংলা আমাদের শক্তি যোগায়, আজকাল জাতীয় পর্যায়ের ভাষণ আর বক্তব্যেও জয় বাংলা উপেক্ষিত।

জাতীয় পর্যায়ে জয় বাংলা দিয়ে আমাদের ৭২ এর সংবিধানের শুরু। জয় বাংলা কি হারিয়ে যাচ্ছে, কি করে যে মনের ভাষা প্রকাশ করবো বুঝতে পারছিনা, আসলে আমরা কোথায় চলেছি? ৭১ এর পর সর্বদলীয় শাসন ব্যবস্থার দাবি নিয়ে জাসদের উৎপত্তি, সেই থেকেই শুরু দ্বন্দ্বের, আসলে কাজের মাঝে ধর্মনিরপেক্ষতা যেটার উপর দৃষ্টি দেবার কথা ছিল সেটা ছিল সর্বদাই উপেক্ষিত, পৃথিবীতে মানুষ ধর্ম পালন করবে এটা তার নাগরিক অধিকার কিন্তু কথা ছিল রাষ্ট্র ও সংবিধান থাকবে ধর্মের ঊর্ধ্বে, ধর্ম হবে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়, আমরা কি সত্যি পেরেছি ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করতে? না পারিনি কারণ বিভিন্ন ছুতোয় রাজনৈতিক দলগুলো ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেছে, ধর্মকে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে। ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে একটি দেশকে উদ্ধার করতে হলে, একটি শিশুকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে তৈরি করতে হলে, যোগ্য নাগরিক হিসাবে দেশে প্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের কি কিছুই করণীয় নাই। সামান্য একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবো প্রতিটি অভিভাবক তার সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসাবে তৈরি করতে কি পরিমাণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিন্তু হায় কতজন অভিভাবক জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই স্বপ্নকে সার্থক করতে পেরেছেন? প্রশ্ন আসতে পারে এ ক্ষেত্রে কার ভূমিকা কতটুকু, সরকারের করণীয় কি? নাগরিক দায়িত্ব কতটুকু? ধর্ম এ বিষয়ে কি বলছে? এত সব চিন্তা করতে গেলে সত্যি আমাদের সবার যখনই পাগল হয়ে যাবার উপক্রম হয় ঠিক তখনই আমাদের সেই চিন্তার শূন্যস্থান পূরণ করতে খুবই নীরবে ধর্ম তার জায়গা করে নেয়। আসলেই কি ধর্ম এই সব জটিল সমস্যার সমাধান দিতে পারে? ধর্ম কি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা এনে দিতে পারে? সন্তান মানুষ করতে গেলে যে অক্লান্ত পরিশ্রম, শিক্ষা, আর জ্ঞানের প্রয়োজন হয় বাস্তবতার দৃষ্টিতে ধর্ম কি তার সমাধান দিতে পারে? তার একমাত্র সমাধান হচ্ছে নাগরিক ও সমাজ ব্যবস্থার যৌথ সমন্বয়ে এটি সুন্দর ও সঠিক পথকে বেছে নেয়া আর এক্ষেত্রে আমাদের ও সরকারের যৌথ পরিকল্পনা নিয়ে একত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই সুন্দর সমাজ আর সুস্থ ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ। অসুস্থ রাজনীতি অসুস্থ সমাজ তৈরি করে সেই অসুস্থ সমাজে মানবতা ও মানবিক মূল্যবোধ হ্রাস পেতে থাকে। আমাদের মনের অজান্তেই দিনে দিনে একটি জাতি হিসাবে তার মানবিক চেতনা বোধ কে হারিয়ে ফেলে, তখন মানুষই মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলাটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে ধরে নেয়, ধর্মান্ধরা উন্মাদের মত ধর্মীয় কুসংস্কারের আবেগে কখন যে জঙ্গি হয়ে ওঠে তা আমরা নিজেরই টের পাই না, সামাজিক অবক্ষয় থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হলে, একটু সুন্দর সমাজ তৈরি করতে এখনি পদক্ষেপ না নিলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। হয়তো দেরি হয়ে গেছে।

(পি/জুলাই ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test