E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পিস টিভি-জাকির নায়েক : কালোর এপিঠ ওপিঠ

২০১৬ জুলাই ১৮ ১৬:১৭:৫২
পিস টিভি-জাকির নায়েক : কালোর এপিঠ ওপিঠ

মোমিন মেহেদী

আজকে কেন বন্ধ করেন
বলেন কেন ভাই
পিস টিভিকে বাংলাদেশে
আর প্রয়োজন নাই

কেন তবে বাংলাদেশে স্বাধীনতার মাটি
পিস টিভি আর সন্ত্রাসীদের হলো এমন ঘাঁটি?
উত্তরটা আমরা জানি
কারন হলো লোভ
এই লোভেই জন্ম নিলো
লক্ষ লোকের ক্ষোভ
ক্ষোভের আগুন দেখতে পেয়ে এখন বুঝি পালান
মিথ্যে বলা-মিথ্যে চলা এই আপনাদের চালান?

পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধে প্রজ্ঞাপণ জারির রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে যাওয়ার পর রাজনীতির নামে অপরাজনীতিকগণ নতুন করে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছে। আর সেই রাস্তা তৈরির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টারত জামাত-জঙ্গীদের সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করাটা এখন নতুন প্রজন্মের প্রথম ও একমাত্র দাবী হিসেবে উঠে এসেছে। কেননা, নির্মমতার রাজনীতিতে তরুণদেরকে কাজে লাগাতে-অনুপ্রাণিত করতে জাকির নায়েকের মত সংকর প্রজাতির কুলঙ্গারদের অবদান নি:সন্দেহে অন্ধকারের ঘণঘটা। এই অর্থ পিচাশদের কাছে ধর্মের চেয়ে অধর্ম এতটাই বড় যে, যখন-ই ওয়াজের নামে অপকর্মের রাজত্ব নিয়ে আসে; তখনই এরা অনুদান চায়-ভিক্ষাবৃত্তি করে। কথায় কথায় ভিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি সন্ত্রাসের মনোবৃত্তি তৈরিতেও এদের অবদান নির্মমতার রাস্তায় বহুদূর এগিয়ে যায় বলেই আজ যখন তখন নির্মততার রাস্তা তৈরির সুযোগ পাচ্ছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। অথচ একটু খেয়াল করলেই দেখবো যে, ইসলামের পবিত্র ধর্মকে পূঁজি করে ব্যবসায় আশক্ত জাকির নায়েকের এই পিস টিভির বাংলাদেশে প্রচারের অনুমোদনের সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের-ই অনুরোধ ছিলো বলে জাকির নায়েক-এর টুইট থেকে তথ্য নিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। আর এখন সেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার যখন স্বংবিৎ ফিরে এলো তখন; অর্থাৎ প্রায় ৫ বছর পর বাংলাদেশে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধে প্রজ্ঞাপণ জারি করা হলো। অথচ এই পদক্ষেপ যদি মাত্র ৫ বছর আগে নেয়া হতো তাহলে আজ আর গুলশান ট্রাজেডি বা শোলাকিয়ার মত ঘটনা ঘটতো না। দেখতে হতো না শত শত গুপ্তহত্যার শিকার মানুষের মুখ। হারাতে হতো না নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের ধর্মীয় নেতা-চিকিৎসক-শিক্ষক-ব্লগার আর সাধারণ মানুষগুলোকে।

সর্বশেষ সন্ত্রাসের রাস্তা ধরে এগিয়ে আসা সন্ত্রাসী-জঙ্গী-জামাতিদের হামলায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পাশে কর্তব্যরত পুলিশের ২ সদস্য সহ ৪ জনের মৃত্যুর পেছনে জাকির নায়েকের শয়তানের বাক্স পিস টিভির অনুপ্রেরণা ছিলো বলেই ধারণা করছেন নিবেদিত প্রকৃত ধর্মীয় নেতারা। তাদের মতে, জাকির নায়েক একজন নষ্ট-ভ্রষ্ট ধর্ম ব্যবসায়ী। যে কারনে নিষেধ থাকা স্বত্বেও তিনি বিধর্মীদের টাই, তাও আবার লাল রঙের ব্যবহার করতেন, তার সাথে ধর্মকে ব্যঙ্গাত্মক করে উপস্থাপনের লক্ষে টাই-এর সাথে স্যুট-প্যান্ট এর উপরে টুপি ব্যবহার করে একটা হাস্যকর ধর্ম হিসেবে বিশ্বের বুকে ইসলামকে উপস্থাপন করতেন। অথচ ইসলামে স্পস্ট করে বলা আছে যে, ‘তোমরা কারো ধর্মের উপর আঘাত হানবে না এবং কোন অন্য ধর্মকে গ্রহণও করবে না (সহিহ বোখারী শরীফ)।’

কিন্তু এই জাকির নায়েক নামক ব্যক্তিটি ধর্মকে কুপথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে ভুল ব্যখ্যা দিয়ে অনবরত তার ব্যক্তিগত উত্তরণে কাজে লাগিয়ে পুরস্কার জিতেছে, সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।

আজ যখন সারাদেশ সংশয় আর আশঙ্কাগ্রস্থ; তখন এই জাকির নায়েক নির্বিকার। তার এই ধর্মান্ধতার কারনে নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুলশানের কূটনৈতিক জোনকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। স্পর্শকাতর এ এলাকায় অবস্থিত অনুমোদনবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল বন্ধ করারও উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি গুলশানের আবাসিক এলাকায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া এবং কূটনৈতিক জোন সংলগ্ন রাজধানীর বৃহত্তম কড়াইল বস্তিসহ গুলশানের সব ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল। এই উদ্যেগ নেয়া প্রসঙ্গে আমি নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে শুধু এতটুকু বলতে চাই, সেই তো ফিরে এলেন নির্মল বাংলাদেশকে গড়ার জন্য; কিন্তু ততদিনে নতুন প্রজন্মের অসংখ্য প্রতিনিধিকে হারিয়েছি আমরা। হারিয়েছি গুপ্তহত্যার শিকার আমার প্রিয় ভাইদেরকে, জঙ্গী-জামাতে যোগ দিতে হয়েছে অসংখ্য ছাত্র-যুব-জনতাকে। অথচ আর কয়টা দিন আগে এই পদক্ষেপ নিলে, আমরা পেতাম নিরপদ ঈদ-নিশ্চিন্ত দিনের আলো আর সম্ভাবনার রাস্তা। সে যাই হোক, বলছিলাম জাকির নায়েক আর পিস টিভির কথা। সেই প্রসঙ্গে ফিরে যাই।

‘জাকির নায়েক নামক ভন্ড থেকে সাবধান; বাতিল ফির্কার মুখোশ উন্মোচন।’ শীর্ষক একটি লেখা সম্প্রতি আমার মেইলে পাঠিয়েছিলেন জনৈক ধর্মীয় আলেম। তিনি নিজেকে কোন দলীয় দালালির রাস্তায় পরিচালিত না করে রাজনীতি সচেতনতার সাথে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বিশ বছর যাবৎ তার কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে আমি জানি। তিনি লিখেছেন, বর্তমানে কিছু যুবকের কাছে ফেবারেট নাম হচ্ছে জাকির নায়েক। এর কারন হচ্ছে ডা: জাকির নায়েক যে ধর্মের প্রবর্তন করার কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন এটা সহজেই মানুষের নফসকে আকর্ষিত করে। অথচ ইসলামে নফসকে তুষ্ট করে নিয়মনীতি প্রনোয়ন করা সম্পূর্ণ হারাম। আমি জাকির নায়েক সম্পর্কে কিছু লিখি না, মূলত লেখার রুচি হয় না। কারন এই লোকটার দিকে তাকালেই বোঝা যায় সে একটা ভন্ড। কেননা, হাদীস শরীফে আলেম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বর্ণিত আছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুল্লাল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমরা কার সংসর্গ গ্রহন করবো? জবাবে হুজুর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
(১) যাকে দেখলে আল্লাহ পাকের কথা স্মরণ হয় (যার পোশাক-পরিচ্ছেদ, চলা ফেরায় দ্বীনি দৃশ্য ভেসে ওঠে; অর্থাৎ সহিহ শুদ্ধভাবে আমার পথ অনুসরণ করে)
(২) যার কথা শুনলে দ্বীনি ইলিম বৃদ্ধি পায়।
(৩) যার আমল দেখলে পরকালের কথা স্মরন হয়।
(মুসনাদে আহমদ,সুনানুল কুবরা )
এখন এই হাদীস শরীফ-এর আলোকে জাকির নায়েকের অবস্থান লক্ষ্য করুন- (১) জাকির নায়েকের দিকে তাকালে প্যান্ট, শার্ট, কোর্ট, টাই পড়া কোন একজন ইহুদী অথবা খ্রিস্টানের কথা মনে হয়। (২) জাকির নায়েকের কথা শুনলে সমাজে ফিৎনা বৃদ্ধি পায়। কারন সে বিগত ১৪০০ বছরের চলে আসা প্রকৃত ইসলাম বাদ দিয়ে নতুন নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। যেমন- রাম কৃষ্ণ আল্লাহর নবী ছিলেন, বেদ আল্লাহর কালাম ইত্যাদি। নাউযুবিল্লাহ!!
(৩) জাকির নায়েকের যেহেতু কোন আমলই দেখা যায় না তাই তার আমল দেখে পরকালের জন্য কোন আমল করার কোন ইচ্ছা কারো মধ্যে সৃষ্টি হয় না। জাকির প্রকাশ্যে মহিলাদের সাথে মেলামেশা করে, সারা দেহে কোন সুন্নত নাই, তাই তার আমল দেখে মানুষ বিদয়াতি হচ্ছে। সুতরাং হাদীস শরীফের ফয়সালা থেকেই দেখা যাচ্ছে, জাকির নায়েকের সংসর্গ গ্রহন করা যাবে না এবং তার সংসর্গ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। শুধু ক্ষতিকর-ই নয়; মহা ক্ষতিকর এই ব্যক্তির টিভি ভারত বন্ধ করারও অনেক আগেই ইসলামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বচন্ধ করা উচিৎ ছিলো। যা বর্তমান সরকার না করে ধর্মীয় এবং রাষ্টিয়ভাবে বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গীদেরকে মদদদাতা হিসেবে ব্যপক অপরাধে অপরাধি। আশা করবো আগামীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের দেশে সবার আগে জামাত-শিবির-জঙ্গী মদদদানকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ করবে বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, আধুনিক প্রকাশন, প্রতিভা প্রকাশন, প্রীতি প্রকাশন ইত্যাদি। পাশাপাশি সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব তৈরির মূল সংগঠন জামাতে ইসলাম, ছাত্র শিবির, হিজবুত তাহরির সহ সকল জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ করবে। এতে করে কিছুটা হলেও স্বস্থির নিশ্বাস ফেলতে পারবে বাংলাদেশের মানুষ। যারা ভাষা আন্দোলন করেছিলো, স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলো একটু শান্তি আর ডাল-ভাতের স্বাধীনতার জন্য...


(এমএম/এস/জুলাই ১৮,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test