E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোবাইল সমাচার

২০১৬ জুলাই ২৩ ০৮:৪৯:২২
মোবাইল সমাচার

প্রিয় পাঠক, প্রায় তিন বছর আগে ঘটে যাওয়া আমার জীবনের একটি স্মরণীয় বাস্তব ঘটনা আজ আপনাদের শুনাবো। পরিবার ও স্বজনদের ছেড়ে নতুন অতিথি হয়ে টাংগাইল এসেছি! উদ্দেশ্য, উচ্চ শিক্ষা! বিশ্ববিদ্যালয়ে সবেমাত্র ভর্তি হয়েছি। তখন ছিলো রমজান মাস এবং ইফতারির ঠিক কিছুক্ষণ আগে ঘটেছিলো ঘটনাটি।

আমার মনের আকাশে ছিলো কালো মেঘের ঘনঘটা! মানসিকতার এমন করুণদশার জন্য মুলত: দুটি কারণ ছিলো: ১. পরিবারের সবাইকে খুব মিস করছিলাম এবং ২. ঘটনার মাত্র দুইদিন আগে আমার ব্যবহারের সবচেয়ে পছন্দের মোবাইল ফোন সেটটি চুরি হয়ে গিয়েছিলো। ভাগ্যিস আরেকটা নরমাল ফোনসেট আমার সঙ্গে ছিল, যা দিয়ে পরিবার ও স্বজনদের সাথে যোগাযোগের কাজটি কোনভাবে চলছিল।

আমি আমার কিছু বাইরের কাজ শেষে অটো করে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিলাম। ইফতারের আগ মূহুর্তে ইফতারি কেনার জন্য তাড়াহুড়ো করে অটো থেকে নামলাম। দোকানে দাড়িয়ে ইফতারি নিচ্ছি। হঠাৎ কই থেকে একটা ছেলে এসে দোকানদারকে উদ্দেশ্য করে বললো, 'ভাই আমার ফোনটা এখানেই রেখেছিলাম, আপনি কি দেখেছেন? ভাই দেখেন না এখানেই ছিল, ভাই একটু খুঁজেন না আমার সাথে!'

আমি বেচারার দিকে এক পলক তাকালাম, আর দুইদিন আগে ঘটে যাওয়া আমার ফোন হারানোর কথা ভাবলাম। তাই খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলাম ছেলের তখনকার মনের অবস্থা। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম, বেচারার চোখেমুখে সেই আভাস যা দুইদিন আগে আমার মধ্যে আমি দেখেছিলাম। সেইজন্য, ছেলেটার ওই অবস্থা দেখে আমার একটু খারাপই লাগছিলো বটে।

যাইহোক, অতপর, ছেলেটা করুণ সুরে বললো, 'কারো কাছে কি ফোন নাই? একটু ফোন দেন না আমার নাম্বারে। হয়তো আশেপাশেই পরেছে ফোনটি।' পরে, সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 'এই যে আপু! আপনার হাতেই তো ফোন আছে, প্লিজ একটা ফোন দেন না, প্লিজ-প্লিজ-প্লিজ!!' আমি আর আগে-পিছে কোনকিছু ভাবলাম না! 'মানুষের জন্যই মানুষ' মনোভাব মনে জাগ্রত হলো। আমার ফোন থেকেই বেচারার নাম্বারে ফোন দিলাম! এবং..........? অত:পর........?? ----- হ্যা! ফোনতো বাজছে!! রিং হচ্ছে!! আমরা সবাই শুনতে পাচ্ছি!! এবং মনে হচ্ছে খুব কাছেই আছে ফোনটি!!" মনে-প্রাণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম!! মানুষের উপকারে আসতে পেরে একটা শান্তির একটি গর্বিত সুশীতল বাতাস বয়ে গেলো আমার মনের মধ্যে..!

কিন্তু এরপরের দৃশ্যপট আমাকে হতবাক করে দিলো! মূহুর্তের মধ্যে সবকিছু এলোমেলো!! হায়রে বেচারা! হায়রে মানুষ! হায়রে ছেলে মানুষ......!!

যাই হোক, ছেলেটি খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো, 'সরি আপু! আপনার ফোন কাটেন! কিছু মনে করবেন না, আমি মনে হয় ভুলেই গিয়েছিলাম ফোন আমার পকেটেই ছিল!!' কথাটি বলতে বলতে, সে আমার সামনে থেকে পিছন ফিরে হাটা শুরু করলো! তার দুই হাত উপরের দিকে তুলে, বিশ্বজয় করে ফেলেছে এমন ভাব দেখিয়ে, 'পেয়ে গেসি মামা!' বলে তার জন্য অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো! আমি ভালোভাবে সামনে তাকিয়ে দেখলাম, গোল মিটিং করা আরো ৬-৭ জন ছেলে খিলখিল শব্দে দাঁত বের করে, বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত হাসছে! আর ইয়েস, ওয়াও, হিপ-হিপ, হুররে! ইত্যাদি বলে তাদের 'বিজয়' ইনজয় করছে!! তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার ফোন নম্বরটা কালেক্ট করাই ছিলো ওদের উদ্দেশ্য! আর তার জন্যই এসব মিথ্যা নাটক!! মেজাজটা হঠাত আবার গরম হয়ে গেল! ইচ্ছে করছিলো, বকাটে ফাজিল গুলোকে..........?!

ওদের বাকা চোখের চাহনিযুক্ত বিরতিহীন উল্লাস আমার গায়ে কাটার মত বিধেছিলো এবং ওই সময় ওদের সামনে নিজেকে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা মনে হচ্ছিল! নিজের অসহায়ত্বের সব অবস্থা অনুধাবন করে, সময় ও আমার এমন বোকামির দায়স্বীকার করে, রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে, ইফতারি না কিনেই চলে এসেছিলাম। এই রোজার দিনেও এমন ধোকা...?? ছেলেটার শিয়ালের মতো চতুরতা ও পাক্কা অভিনেতার মতো সূক্ষ্ম অভিনয়, আমাকে বোকা বানিয়ে আমার ফোন হারানোর কষ্টকে দ্বিগুণ করে দিয়েছিলো সেদিন..!!

ফেরার পথে মনে মনে একটা কথাই শুধু বলেছিলাম, 'তোদের কারো রোজা আজ হইবো না!' জানিনা এই কথাটি সেদিন কি জন্য বলেছিলাম???

[*আমি কি তাদের অভিশাপ দিয়েছিলাম, *ওই অপমানের নিরব প্রতিবাদ করেছিলাম নাকি, *নিজেকে দেওয়া নিজের সান্ত্বনার বাণী ছিলো?? ]

পাঠক, আপনি কি মনে করেন? যা ছিলো তা তখন ছিলো!! তবে, এখন মাঝে মধ্যে যখন ওই ঘটনাটি মনে পড়ে, তখন সত্যিই খুব হাসি পায়!!

লেখক : অনিন্দিতা, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাংগাইল।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test