E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

২০১৬ আগস্ট ২১ ১৪:৪১:৩০
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

রাজীব কুমার সরকার

সুস্থ দেহে সুস্থ মন। সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনের সমন্বয়ই পারে স্বাস্থ্যবান ও শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে। শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের সূতিকাগার হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়াশুনার পাশাপাশি শিশুর মন ও দেহের যেন সুষ্ঠু বিকাশ ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখাও বিদ্যালয়ের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি ইতোমধ্যেই সাফল্যের মুখ দেখেছে। এর পাশাপাশি মিড-ডে মিল অর্থাৎ দুপুরের খাবার প্রবর্তনও জরুরী।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (এষড়নধষ অষষরধহপব ভড়ৎ ওসঢ়ৎড়াবফ ঘঁঃৎরঃরড়হ)-এই তিন পক্ষের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৯২ টি উপজেলায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সরকারী অর্থায়নে। এই কার্যক্রমের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৭৫ গ্রাম ওজনের বিস্কুটের প্যাকেট দেয়া হয় যা পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনে এই কার্যক্রমের সুফল পরিলক্ষিত হয় যেমন :পুষ্টি সমৃদ্ধ বিস্কুট শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ও সময়মত স্কুলে উপস্থিত হতে উদ্বুদ্ধ করে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করে। এই কার্যক্রমের আওতাভুক্ত স্কুলগুলোতে স্কুলফিডিং বহির্ভূত স্কুলগুলোর তুলনায় উপস্থিতির হার বেশি। স্কুলফিডিং এলাকার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করছে।

এখন সময় হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে মিড-ডে মিল অর্থাৎ দুপুরের খাবার নিশ্চিত করার। এটি মূলত প্রযোজ্য তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য যারা দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করে। বেলা ১.৩০ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত বিরতিতে তারা এ খাবার গ্রহণ করবে। সরকারী বা ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য মিড-ডে মিল স্থায়ী করা সম্ভব নয়, সাময়িকভাবে এটি চলতে পারে। এটি স্থায়ী করা সম্ভব নিজস্ব উদ্যোগেই, যদি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারে।
ইতিবাচক মনোভাব থাকলেই মিড-ডে মিল চালু করা সম্ভব। অভিভাবকদেরকে বোঝাতে হবে বিদ্যালয়গামী সন্তানটি যদি দুপুরে বাড়িতে অবস্থান করত তবে সে নিশ্চয়ই দুপুরে খাবার গ্রহণ করতো, না খেয়ে থাকতো না। এই খাবারটি যদি তাকে টিফিন বক্সে দিয়ে দেয়া হয় তবে স্কুলের বিরতিতে সে খেতে পারে। এমন নয় যে ভূড়িভোজের আয়োজন থাকতে হবে। খিচুড়ি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম, কলা, পাউরুটি, বিস্কুট- সামর্থ্য অনুযায়ী অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের জন্য মিড-ডে মিল তৈরি করে দিতে পারেন। বিদ্যমান অবস্থায় দেখা যায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে, কেউ কেউ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত দোকান থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনে খায়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি অভিভাবকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন যে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবার তাদের সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরী তাহলে সহজেই মিড-ডে মিল চালু করা সম্ভব।

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে সব বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এক রকম নয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি এলাকার বিত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তা নিয়ে।

অতি দরিদ্র অভিভাবকদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তবে এটি লক্ষণীয় যে গ্রামাঞ্চলেও হতদরিদ্রের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং এমন অভিভাবক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যিনি তার বিদ্যালয়গামী সন্তানের জন্য ন্যূনতম খাবার নিশ্চিত করতে পারবেনা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মায়ের ভূমিকা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজে না খেয়ে হলেও সন্তানকে খাওয়ান- এটিই আবহমান কাল ধরে চলে আসা বাংলা মায়ের ঐতিহ্য। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিত্তবান ব্যক্তিগণ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। এর পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে যদি টিফিন বক্স তুলে দেয়া যায় তবে মিড-ডে মিল কার্যক্রম গতিশীল হবে।
শৈশবে যদি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার থেকে কেউ বঞ্চিত হয় তবে সারাজীবন এর বিরূপ প্রভাব তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য চাই সুস্থ প্রজন্ম শারীরিক ও মানসিক উভয়ক্ষেত্রে যারা হবে স্বাস্থ্যবান। সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল নিশ্চিত করা গেলে শিশুরা শারীরিকভাবে সবল থাকবে, মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকবে যা পড়াশুনার প্রতি তাদের আগ্রহকে আরও বৃদ্ধি করবে। শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে তা হবে অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পদক্ষেপ সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের প্রয়োজন সুস্থ, শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম। এমন প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাইলে প্রাথমিক স্তরেই তাদের মন ও দেহের পুষ্টিসাধন নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি মিড-ডে মিলের প্রবর্তন তাই হতে পারে কার্যকর পদক্ষেপ।


লেখক : উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ। জনপ্রশাসন পদক ২০১৬ প্রাপ্ত।



(আরকেএস/এস/আগস্ট ২১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test