E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমার সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর কাছে খোলা চিঠি

২০১৬ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৪:০১:১৮
আমার সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর কাছে খোলা চিঠি

হুমায়ুন মিয়া :


অনেক সাহস সঞ্চয় করেই আপনার কাছে এই খোলা চিঠি লেখা। ইদানীং '৭১ ও '৭৫ এর মত সাহসী হতে পারি না। ১০০% শিক্ষিত জার্মানীতে অধিক জনপ্রিয় চ্যান্সেলর হিটলার; তার নির্বাচিত হবার পরবর্তী সময়ে তার নাৎসী বাহিনী কতৃক হেনস্তা হবার ভয়ে অনেকেই সত্য প্রকাশে সাহসী হতো না।

ইদানীং সত্য প্রকাশে সাহসী হলে হেনস্তা হতে পারি, এই ভয়টি আমাকেও পেয়ে বসেছে। কিন্ত আপনাকে ভালোবাসি এবং বিষয়টি হয়তো আপনি জানেন না ; কৃষকের পকেট কাটার বিরূদ্ধে জনমত গঠন এবং নির্বাচন পূর্ব দুর্নীতির বিরূদ্ধে আপনার অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যই আপনার বরাবর আজকের এই 'খোলা চিঠি-১'। আমার বিশ্বাস, আপনি এই অব্যবস্থাপনার বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এবং আগামীত যাতে এরূপ না হয় সে বিষয়ে উপায় উদ্ভাবন করবেন।

মান্যবর সাংসদ, সরকার প্রতি বছর উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রতি টন ন্যুনতম মূল্য ২৭,০০০ টাকা দরে গম ক্রয় করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত 'অভ্যন্তরীন খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা '-এর প্রথম প্রচ্ছদেই বলা আছে , 'উৎপাদনকারী কৃষককে মৃল্য সহায়তা (insentive) প্রদান করার জন্য' অভ্যন্তরীন খাদ্যশস্য সংগ্রহ। এক্ষেত্রে আমি বুঝি যিনিই উৎপাদন করেছেন , তিনিই তার উৎপাদিত গম ২৭,০০০ টাকা প্রতিটন মূল্যে সরবরাহ করবেন। আমি আরও বুঝি, উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার অধীন প্রতি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে কোন মৌজার কোন কৃষকের কতটুকু জমিতে গম বা ধান উৎপাদিত হয়েছে এরূপ একটি তালিকা থাকে। প্রতি উৎপাদনকারী কৃষক অনুর্ধ্ব ৩ টন করে গম সরবরাহ করতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে প্রদেয় ভ্যাট ও আয়কর রেয়াত দেয়া হয়েছে।

মান্যবর সাংসদ,আমার জানা মতে গত পৌনে তিন বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের গম আপনার নির্বাচনী এলাকা থেকে সরকার ক্রয় করেছে। কিন্ত মান্যবর সাংসদ, আপনি দৈব চয়নের মাধ্যমে যাচাই করে দেখুন, এই ১২ কোটি টাকার গম উৎপাদনকারী কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় না করে ক্রয় করা হয়েছে ভুয়া কৃষক, কৃষক নামধারী (উৎপাদনকারী কৃষক নয়) কিছু ফড়িয়া,কিছু আপনার সমর্থক-কর্মী,মজুদকারী, সরবরাহকারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। আর এসবই হয়েছ আইন মানতে বাধ্য সবার জ্ঞাতসারে ,সবার নাকের ডগায়,বীরবেশে, নির্লজ্জভাবে, সিন্ডিকেটেড করে। এই সিন্ডিকেট দেশে যে আইন আছে , আপনার মত একজন জাদরেল সাংসদ আছে ,তার তোয়াক্কা করেনি। আমার জানা মতে, এসব ফড়িয়ারা সরকারের কাছ থেকে প্রতিটন গমে হাতিয়ে নিয়েছে ৭,০০০ টাকা করে,এবং এ হিসাবে শুধুমাত্র আপনার সংসদীয় এলাকাতেই গম ক্রয়ের নামে লুটের পরিমান প্রায় ৪ কোটি টাকা; তার সাথে রয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আয়কর ফাঁকি।

মান্যবর সাংসদ,গম ক্রয়ের নামে যে অর্থ লোপাট হয়েছে,তা আমাদের এলাকার কৃষকের, সরকারের। কৃষকের হাড়ভাঙ্গা,ঘাম ঝড়ানো শ্রমে উৎপাদিত ফসলের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের দেয়া মূল্য সহায়তা (insentive) কতিপয় রাজনীতিজীবী, মজুদদার, কৃষক নামীয় ফড়িয়া, আইন মান্য করতে বাধ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট লুটপাট করছে , বিষয়টি অতীব বিনয়ের সাথে আপনার গোচরে আনা হলো।

পুনশ্চ : উৎপাদনকারী কৃষকের স্বার্থ ক্ষুন্ন হলে বিষয়টি মহামান্য হাই কোর্টের নজরে আনা হতে পারে।

লেখক : সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test