E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডিও লেটারের সেকাল আর একাল!

২০১৬ সেপ্টেম্বর ২৮ ১২:১০:৩৫
ডিও লেটারের সেকাল আর একাল!

হুমায়ুন মিয়া :


ফরিদপুরে একটি নদী গবেষণা ইনষ্টিটিউট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে একটি কথা শোনা যায়। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় বানিজ্য মন্ত্রী সিলেটের আব্দুল বাসেত মজুমদার  ঢাকা থেকে আরিচা হয়ে শিবচরের উদ্দেশে   ফেরীতে ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট আসছিলেন। ওই সময়ে শিবচরের মান্যবর সাংসদ ছিলেন নলগোড়া গ্রামের মরহুম মুদাসসার আলী মুন্সি। ওই সময়ে আরিচা-সিএন্ডবি ঘাট ফেরী চলাচল করতো।

মন্ত্রী বাহাদুর ফেরীতে থাকা ৩ ঘন্টা ফেরীর সামনে দাড়িয়ে থেকে নদীর নাব্যতা দেখছিলেন এবং তার পিএকে ডিক্টেশন দিচ্ছিলেন। পরে রাওয়ালপিন্ডি ফিরে গিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে একটি ডি.ও লেটার দেন। শোনা যায়, তার ওই ডি.ও লেটার বলেই ফরিদপুরে নদী গবেষনা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক সূচনা হয় । এটা মান্যবর সাংসদের ডি.ও লেটারের সেকাল।

আমার জানামতে একটি বিদ্যালয়ে নানান অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ ছিলো। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় তদন্ত করে গুরুতর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন স্মারক নং-ডিআইএ/ফরিদপুর/৩১০-এস/রাজ/৬৫৮৬/৬,তারিখ-২৯/৬/২০১৫ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে দাখিল করেন। বিদ্যালয়ের অভিযুক্তের বিরূদ্ধে যখন আইনী প্রক্রিয়া চলছিল ঠিক তখনি সংরক্ষিত আসনের একজন মান্যবর সাংসদ অভিযুক্তের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে একটি ডি.ও লেটার দিলেন।তারপর বিদ্যালয়ের অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহন দেখা গেল না। আমরা ভেবেই নিলাম, এটাই একালের ডি.ও লেটার!

কেবল তাই নয়,পুলিশসহ সরকারি নানা পদে নিয়োগ প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই হয়ে থাকে।এখানে মান্যবর সাংসদের ডি।ও লেটারের কোনই ভুমিকা থাকার কথা নয়। এ ব্যাপারে সরকারের কোন নির্দশনাও নেই। অথচ পুলিশের চাকুরীর বেলাতেও ডি.ও লেটার ইস্যু হচ্ছে। ডি.ও লেটার ধারীরা চাকুরী পেলে বিষয়টি দাড়ায় এমন 'ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে।' আবার একটি মাত্র পদে একজন সাংসদ দুই জনের নামে ডি.ও লেটার ইস্যু করেছেন, তারও প্রমানও পাওয়া যায়।

মান্যবর সাংসদের পদমর্যাদা সম্পর্কে আমরা জানি। সাংসদের একটি ডি.ও লেটারের গুরুত্ব কতটুকু হওয়া উচিত, তাও আমরা জানি। কিন্ত একজন মান্যবর সাংসদের ডি.ও লেটার ঝালমুড়ির ঠোঙা হিসেবে ব্যবহার হলে মানুষের কাছে সাংসদ,মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া এই সংসদ - এর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়, জাতি হিসাবে আমরা লজ্জিত হই।

পুনশ্চ : মান্যবর সব সাংসদের ক্ষেত্রেই এমনটি হয় না। তবে কোনো ক্ষেত্রেই এমনটি হওয়া উচিত নয়।

লেখক : সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ।

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test