E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এখন জনতা বলবেন, নেতা শুনবেন

২০১৬ অক্টোবর ২১ ১৮:৫২:০২
এখন জনতা বলবেন, নেতা শুনবেন

হুমায়ুন মিয়া :


১৯৭৯ সাল, জে. জিয়াউর রহমান তখন ক্ষমতায়, ভাসানী ন্যাপ তাদের ক্ষমতার সহযোগী। ভাসানী ন্যাপের শ্রমিক সংগঠন বিপ্লবী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন শাহ্ আব্দুল হালিম, যার বাড়ি ছিলো গোপালগঞ্জে। ওই বছরের শেষ দিকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে সাদাকালো টেলিভিশন রঙিনে রূপান্তর উদ্বোধন করলেন। ওই সময়ে একটি গরীব দেশে রঙিন টেলিভিশন থাকাটা বিলাসিতা- এই ধারনায় শাহ্ আব্দুল হালিম  সরকারের সমালোচনা করলেন। কিন্ত ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতাশীনদের সমালোচনা! বিষয়টি ওই সময়কার বিএনপি'র অনেকেই মেনে নিলেন না। অতঃপর শাহ আব্দুল হালিমের জন্য রাজনীতি থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠলো। 

১৯৮৬ সাল, জেনারেল এরশাদ তখন ক্ষমতায়। ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচন হচ্ছে । চট্রগ্রাম-৮ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওই সময়কার পরিকল্পনামন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতান আহম্মেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইসহাক মিঞা। ব্যারিস্টার সুলতান আহম্মেদ চৌধুরীর শিক্ষা, প্রাচুর্য, পারিবারিক ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চাইতে শতগুণে বেশি ছিলো। ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনের সপ্তাহ পূর্বে এক বিকেলে বন্দর আবাসিক এলাকায় ভোট চাইতে এলেন ব্যারিস্টার সুলতান। আসরের নামাজ শেষে ভোট চাওয়ার সময় এক যুবক ব্যারিস্টার সুলতানকে সমালোচনার সুরে বললেন, আগে তিনি মুসলিম লীগ করেছেন,এর পরে বিএনপি করেছেন, এখন তিনি জাতীয় পার্টি করত। পরবর্তীতে তিনি কোন দলটি করবেন? ছেলেটির সমালোচনায় মন্ত্রী বাহাদূর রাগান্বিত হয়ে নিজেই ছেলেটির গালে চড় বসিয়ে দিলেন। অতঃপর বন্দর এলাকার মানুষগুলো ক্ষুব্ধ হয়ে এক হয়ে ক্ষুব্ধ; শুরু হলো বন্দর এলাকার লোকের সাথে মন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতানের পক্ষ পুলিশের যুদ্ধ। ক'দিন পরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যারিস্টার সুলতান বন্দর এলাকায় কোন ভোট পেলেন না। ইসহাক মিঞা'র কাছে হেরে তার রাজনীতি থেকেই বিদায় নিতে হলো।

২০০৮ সাল। তত্বাবধায়ক সরকার তখন ক্ষমতায়। সরকার সংসদ নির্বাচনের পূর্বে উপজেলা নির্বাচন করার ঘোষনা দিলে আমি নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষন করলাম। একই সাথে আওয়ামী লীগের ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব সাকলায়েনও নির্বাচন করার কথা জানালেন। একই পরিবার থেকে সংসদ ও উপজেলায় প্রার্থী হওয়া ঠিক নয় বিবেচনা করে আমি বিষয়টির সমালোচনা করলাম। আমার সমালোচনা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা জাফর উল্লাহ'র নজরে আনা হলো। তিনি আমার সমালোচনা ভালোভাবে গ্রহন করলেন না। অতঃপর আমি ২০০৮-২০১৩ এই ৬ বছর আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাসিত রইলাম। অথচ ২০০১ সালে এই নেতার জন্য আমি শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কেবল তাই নয় নেতা মাইন্ড করবেন এজন্য নেতার ঘনিষ্ঠ কেউই আমার সাথে কথা বলতেও দ্বিধা করতেন। ২০০১ সালের পরে যাদের দাপটে আমরা এলাকা ছাড়া ছিলাম,তাদের পদ-পদবী দিয়ে সমালোচনার জবাব দেয়া হলো, এমনকি আমার বিরূদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজীর মামলাও রুজু হলো। অতঃপর ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন এলো,আমার মতো আওয়ামী লীগের সাইড লাইনে বসে থাকা অনেকেই বাধ্য হলেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের নির্বাচন করতে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দুপুর ১২-৪৫ ঘটিকায় আমার হৃদয় ছিদ্র করে আমার প্রিয় মার্কা নৌকার বাইরে আনারসে ভোট দিতে বাধ্য হলাম। অতঃপর ভাংগার ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হলো। আওয়ামী লীগ ভাংগায় পরাস্ত হলো।

আমি একজন অতি সাধারন মানুষ হিসাবে আমি মনে করি, যাকে আমি ভোট দিয়েছি, তার দেয়া প্রতিশ্রুতিতে ব্যত্যয় ঘটলে তাকে সমালোচনার অধিকার আমার রয়েছে। এখন ২০১৬ সাল,আমার সাংসদ মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন আমার দেয়া ভোটেও নির্বাচিত ।

এছাড়াও আমি মনে করি রাজনীতিতে এখন দিন পাল্টেছে। এক সময় নেতা বলতেন ,জনতা শুনতেন। এখন জনতা বলবেন , নেতা শুনবেন। সাম্প্রতিক একটি সমালোচনামূলক লেখা নিয়ে বর্তমান নেতৃত্বে থাকা কেউ কেউ আমাকে সংকেত দিয়ে দিলেন 'কোনো বাড়াবাড়ি নয়।আমি কথাটি শুনে হাসি, ওরা ইতিহাস জানে না।

অতীতে যারা সমালোচনা সহ্য করেনি,পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তারা যেমন শিক্ষা পেয়েছে ; আজ যারা সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না, আগামী ইতিহাসের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে।কারন ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

লেখক : সমাজ কর্মী ও কলাম লেখক।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test