E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উই পোকার গল্প

২০১৬ অক্টোবর ৩১ ১৪:১৪:২৬
উই পোকার গল্প

হুমায়ুন মিয়া 


দীর্ঘ দিন গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় না। ইদানীং মনে হয় বয়স হয়েছে, সমাজকর্মে ভাটা পড়েছে, এছাড়া আমার সন্তানরাও চায় না যে, আমি রাজনীতি নামক জটিল আবর্তে জড়িয়ে পড়ি। গত ২৮ মে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্যই কেবল গ্রামে যাওয়া। 

আমার গ্রামের বাড়ির ড্রয়িং রুমে এক সেট সোফা রয়েছে। সোফাটি আমার ও আমার স্ত্রীর অত্যন্ত সখের। আমাদের সংসার জীবনের প্রথম দিকে সোফাটি আমার স্ত্রী পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কিনেছিলেন। আমি এটি যত্ন করে রেখেছিলাম, যাতে এটা কোনক্রমেই নষ্ট না হয়।
২৮ মে ঘরে প্রবেশ করে সোফায় বসতেই সোফা ভেঙ্গে পড়ে গেলাম আমি। তালাশি দিয়ে দেখলাম, সোফার ভিতরের সবটাই উই পোকায় খেয়ে ফেলেছে। সোফার উপরে সব যথাযথ ফিটফাট দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে উই পোকা যে খেয়ে ফেলেছে তা আমার জানা ছিল না; আমার তদারকীও ছিল না। আমি যখন আমার ভুল বুঝতে পারলাম, তখন সব শেষ হয়ে গেছে ; উই পোকা ভিতরে ভিতরে আমাদের অতি কষ্টের ও সখের সম্পদ খেয়ে ফেলেছে। আমার তদারকি থাকলে হয়তো ইউপোকা আমার সম্পদ খেতে পারতো না।

স্বাধীনতা পূর্ব ১৯৭০ সালে সংসদ নির্বাচনে বগুড়ায় আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব সাফল্য ছিল।১৯৭১ যুদ্ধ পরবর্তী বগুড়ায় আওয়ামী লীগের এক উঠতি নেতা ছিল, যার নাম মোঃ শোকরানা। সভা-সমাবেশ, খাল-বিল,নদী-নালা,টেন্ডার-বাসস্যান্ড, স্কুল-কলেজ এমন কোন জায়গা নেই যেখানে শোকরানার পদচারনা ছিল না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মোঃশোকরানা পলাতক হলেন এবং পরবর্তীতে শোকরানা জাতীয় পার্টি হয়ে বিএনপি হয়ে গেলেন। কিন্ত ১৯৭৫ পরবর্তী ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন ও এর পর থেকে আজ অবধি বগুড়ায় আওয়ামী লীগ আর ভাল করতে পারলো না। মোঃ শোকরানা উইপোকা হয়ে ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভিতর থেকে আওয়ামী লীগকে যেভাবে খেয়েছেন,তা আওয়ামী লীগ কত শত বছরে পূর্ণ করতে পারবেন, তা কেউ বলতে পারবে না।

আমার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। ভাংগা একটি উপজেলা এবং এটি ফরিদপুর-৪ নির্বাচনী এলাকার অন্তর্গত। এখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মান্যবর কাজী জাফর উল্লাহর আবাস। সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের আবাস এই এলাকাতে হওয়াতে তার প্রতি মানুষের বাড়তি আশা থাকাই স্বাভাবিক। ব্যক্তি জনাব জাফর উল্লাহ বয়স্ক, শিক্ষিত, মার্জিত।

২০০৮ সালে তার সহধর্মিনী ৮০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে সাংসদ হন। কিন্ত ২০০৮ সালে নির্বাচনের পরে এলাকায় কিছু উইপোকা, নব্য শোকরানা জন্ম নিয়ে ভিতরে ভিতরে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেয়। ফরিদপুর- ৪ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগকে ফিটফাট মনে হলেও ভিতরে ভিতরে আওয়ামী লীগ সদরঘাট হয়ে গিয়েছিল।

ফলে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ২৮ হাজার ভোটে হেরে যায়। অর্থাৎ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়া মানুষের মধ্যে ১ লক্ষ ৮ হাজার মানুষ ২০১৪ সালে এসে আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,যা মোটেও কম নয়। আজ ফরিদপুর-৪ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি শক্ত প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে, যা উৎরে যাওয়াটাও কঠিন হয়েছে; ওই প্রতিপক্ষটাও আওয়ামীলীগেরই একটি অংশ।

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জনাব কাজী জাফর উল্লাহকে হারিয়ে মান্যবর মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন সাংসদ হন। এক বর্ণিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ পরিবারের সন্তান জনাব নিক্সন চৌধুরীকে মানুষ বড় আশা নিয়ে ভোট দেন। কিন্ত সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৩ বছর পরে মনে হয়, তার রাজনীতির ভিতরের কিছু উইপোকা-শোকরানা তাঁর সকল কর্মকে ম্লান করে দিচ্ছে; ভাঙ্গাবাসী পুরনো অনাচারের ভিতরেই থেকে গেছে। অবস্থা যদি এমনই থেকে যায়, তাহলে ইতিহাসের আগামী শিক্ষার দিকেই আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে।

আমরা রাজনীতির ভিতরে থাকা উইপোকা আর শোকরানা থেকে মুক্তি চাই, মুক্তি চাই। কে দিবে আমাদের মুক্তির স্বাদ? কেউ কি আছেন এর জবাব দিতে পারবেন !

লেখক : সমাজকর্মী ও কলাম লেখক।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test