E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এবং আমাদের ভালোবাসা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১১:১২:০২
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এবং আমাদের ভালোবাসা

মহিদুল ইসলাম মাহী


দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডও বলা হয়ে থাকে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়া সত্যিই গর্বের বিষয়। কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে, যেটা দিনে দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা লুণ্ঠিত হচ্ছে বলে আমি মনে করি। এই লেখাটিতে আমার মনের গভীরের কিছু ক্ষোভ ও আমার একান্ত নিজস্ব চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করছি।

প্রথমত, কয়েকটা কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার বিপক্ষে আমার অবস্থান। আমরা যারা এ ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করে আসছি তাদেরকে গতানুগতিকভাবে নিম্নোক্ত উপায়ে বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়ে থাকে। ১.অধিভুক্ত কলেজসমূহের পাঠদান নিজ নিজ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা দ্বারাই করা হবে। ২. তাদের ভর্তি কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, অর্থাৎ এদের পরীক্ষা পৃথক ভাবে হবে যা তত্ত্বাবধান করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একে মেলানোটা বোকামি। ৩. অধিভুক্ত কলেজ সমূহ আবাসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন সুবিধার বহির্ভুত। ৪. কলেজ সমূহ এখনও কলেজই, অর্থাৎ নিজ নিজ নামেই পরিচিত হবে উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহ। ৫. স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এর সার্টিফিকেট এ কলেজ এর নাম উল্লেখ থাকবে।

উপরের কারণগুলো বড়ই অদ্ভুত ও হাস্যকর মনে হয়। এটা কি আমরা বুঝি না? আমরা কি ঘাস পাতা খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছি! আরে বাবা আমাদের প্রশ্ন তো অন্য জায়গায়! তা হচ্ছে,
১. যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বা ওই কয়েকটা কলেজের শিক্ষার মান বাড়াতে গুরুভার নিতে যাচ্ছে সেই ঢাবির বর্তমান শিক্ষার মান নিয়েই তো ইদানিং যথেষ্ট প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
২. ১৯৯২ সালের আগে কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল! পরে আইন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হয় এবং কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনা শুরু করে! তো হঠাৎ করে কি এমন ঘটলো যে, ২০১৭ সালে এসে আবার এগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিস্যালয়ের আওতাভূক্ত করতে হবে! আপনি হয়তো বলবেন মান বৃদ্ধির জন্য। আরে কীসের মান বৃদ্ধি করবেন আপনি? আমি নিজে ঢাবির গর্বিত ছাত্র হয়ে আমাকে যখন এক চীনের এক নাগরিকের কাছে প্রশ্ন শুনতে হয়, 'ঢাবি কিসের দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যে, সেটি বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং-এ জায়গা পায় না!'
৩. আমার জানা মতে হারুণ স্যার দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোন সেশন জট নেই৤ কিন্তু আমি অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে জানি, যেখান থেকে এখনও অনার্স শেষ করতে ৫/৬ বছর লেগে যায়৤

ভাইরে একটা কথা বলি, এসব পাগলামো-ছাগলামো দয়া করে বাদ দেন! আর অনুগ্রহ করে, নিচের কাজগুলো করেন, তাতে শিক্ষার মান বাড়বে ছাড়া কমবে না। ১.যার যার চরকায় সে সে তেল দেন। কেননা বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে! ২. সৎ ব্যক্তিদের হাতে দ্বায়িত্ব দেন। ৩. মেধাবী যোগ্য শিক্ষকগণকে নিয়োগ দেন। অসৎ লোকগুলোকে ছাটাই করেন। স্বজনপ্রীতি বাদ দেন। ৪. জাতীয় বিশ্ববিদ্যলেয়ের শিক্ষকগণকে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ না দিয়ে সরাসরি নিয়োগ দেন। তাদেরকে নিয়োগ দিন যারা স্ব স্ব বিষয়ে ভাল রেজাল্ট করেছেন এবং জ্ঞানী ও দক্ষ বলে বিবেচিত। ৫. শিক্ষকদের গবেষণা খাতে অর্থের জোগান বাড়ান। ৬. শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ও আবাসন ব্যবস্হা সম্প্রসারিত করুন। ৭. দলীয় রাজনীতিমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিযুক্ত সুস্থ রাজনীতি চর্চা ক্যাম্পাস গড়তে সহয়তা করুন। ৮.শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্র সংসদগুলো চালু করেন. ৯.দয়াকরে ইংরেজি শেখার উপর গুরুত্ব দিন। ১০. বাস্তব সম্মত পাঠ্যক্রম নীতিমালা প্রণয়ন করুন।

আরও কিছু কিছু আছে যা করলে শিক্ষার মান শুধু বাড়বেই না বরং দৌড়াবে। সমস্যাটা হচ্ছে, এখানে রোগ হয় এক রকম, আর ট্রিটমেন্ট হয় আর এক রকম! কিন্তু আমি একজন অধম লোক আমার কথা আর কেই বা শুনবে! অনেকে আবার আমাকে ভিন্ন মতের অনুসারী বলে তকমা দিয়ে বসবে! ভাই তকমা দেওয়ার আগে আমার অতীতটা ভাল করে জেনে নেবেন।

সর্বশেষ একটা কথা বলি, বাংলাদেশ ছোট্ট একটা দেশ হলেও এখানে রিসোর্সের অভাব নেই। কিন্তু আফসোস কিছু অযোগ্য, অসাধু, চাটুকার এবং চোর বাটপারদের কারণে আমরা আমাদের রিসোর্সগুলো কাজে লাগাতে পারছি না। আমার বন্ধু সুমন ইকবাল সেদিন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিল, যা মাথার ভিতরে ঘুরছে, 'অনিয়ম সেখানে হয় যেখানে অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।'

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test