E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন : মানবাধিকারের প্রতি হুমকি

২০১৭ এপ্রিল ১২ ২১:২৮:০০
জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন : মানবাধিকারের প্রতি হুমকি

অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত


জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের সর্বত্র লক্ষ করা যায়। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী আগামী ২১০০ ইং সালের মধ্যে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। ফলে গ্রীষ্মকালে গরম আরো বৃদ্ধি পাবে এবং শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যাবে। বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক ধরণ পরিবর্তন হয়ে একই সময় ১০ শতাংশ বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বর্তমান স্তরের চেয়ে ৮৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের দক্ষিন ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকা সমুদ্রের লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে। প্রায়শ তীব্র বন্যা ও ঝড় বৃষ্টির কারণে হাজার হাজার গরিব মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যহত হবে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি- জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পত্তি, সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা, বাসস্থান ও চলাচলসহ সকল প্রকার মানবাধিকারের প্রতি আজ চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তেনের ফলে সৃষ্ট অনাবৃষ্টি, খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যা, তাপদাহ, ঝড়, সমুদ্রপৃষ্টের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি কৃষি, খাদ্য ও গবাদি পশু উৎপাদনে প্রভাব ফেলে যা জনসাধারণের জীবনহানি ও জীবনহানির ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র ও নদী সংগ্লগ্ন এলাকার জনগণের বাসস্থান থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা আরো বেশী বৃদ্ধি পেলে অবস্থা কি হবে তা আর বলার অবকাশ রাখে না।

আমাদের মনে হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিভাবে মানবাধিকার লংঘিত হতে পারে অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানবাধিকারের সম্পর্ক কি? বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে হলে আমাদের প্রথমেই মানবাধিকারের মূল বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে। মানবাধিকার হল এমন কিছু সহজাত মৌল অধিকার ও স্বাধীনতা যা সকল মানব শিশু আপনা আপনি পাওয়ার অধিকারী। স্থান-কাল-পাত্রভেদে সে সকল অধিকার ও স্বাধীনতার লংঘন প্রতিরোধে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহনে দায়বদ্ধ।

সভ্যতা উন্নয়নের সাথে সাথে বিভিন্ন দূষণমূলক ও ধবংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে জলবায়ুর যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে তা থেকে মানব জাতিকে সুরক্ষিত করার জন্য বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং স্থানীয় আইন ও বিধিবিধান প্রনীত হয়েছে। কিন্তু এইসব চুক্তি, আইন ও বিধিবিধানে প্রথম দিকে জলবায়ু সুরক্ষাকে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। পরবর্তিতে বিংশ শতাব্দীর ৭০ এর দশকের শুরুতে সর্বপ্রথম জলবায়ু ও মানবাধিকারের মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে বলে বিবেচনা করতে থাকে এবং একপর্যায়ে জলবায়ু সুরক্ষার অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

একই সাথে জীবন, স্বাধীনতা, দাম্পত্য জীবন, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের মত অন্যান্য মৌলিক মানবাধিকারের মত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে আরো বেশী বেশী বিবেচনা করতে শুরু করে। কারণ মানুষের সকল মানবাধিকারই মূলত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে। এমন কি ইন্টার-আমেরিকান কমিশন অব হিউম্যান রাইটসও অনেকগুলো মানবাধিকার যে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুর সাথে সম্পর্কযুক্ত তা স্বীকৃতি দিয়েছে।

তাছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস এর মতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সকল মানবাধিকারের প্রতি হুমকি। আবার অ্যাডভাইজারী কাউন্সিল অব জুরিস্ট অব দি আশিয়া-প্যাসিফিক ফোরাম অন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইন্সটিটিউশনস এর মতানুযায়ী পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষা করা স্বাস্থ্যের অধিকার ও জীবনের অধিকারের মত কনটেম্পোরারি হিউম্যান রাইটস ডক্ট্রিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বস্তুত, সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র, নাগ্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি, নির্যাতনের বিরুদ্ধে চুক্তি এবং শিশু অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ সকল ঘোষণা পত্র ও চুক্তির স্বীকৃত অনেকগুলো মানবাধিকার শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির সম্মুখীন হয়। তাইত এইসকল ঘোষণা ও চুক্তির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে প্রত্যেক রাষ্ট্রের দায়িত্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সকল মানবাধিকার লংঘিত হয় তা প্রতিকারের ব্যবস্থা করা অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ু নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

লেখক : মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও ব্লগার; জাস্টিসমেকার্স ফেলো, সুইজারল্যান্ড।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test