E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাদাফ হাসনাইন মানজুরের কাব্যগ্রন্থ-
শিরোনাম পাঠকের হাতে প্রসঙ্গে

২০১৬ জুন ২২ ১৪:৫১:১৪
সাদাফ হাসনাইন মানজুরের কাব্যগ্রন্থ-শিরোনাম পাঠকের হাতে প্রসঙ্গে







 


সাদাফ হাসনাইন মানজুরের কাব্যগ্রন্থ-
শিরোনাম পাঠকের হাতে প্রসঙ্গে

বদরুল হায়দার

সাদাফ হাসনাইন মানজুরের-“শিরোনাম পাঠকের হাতে” প্রাণোচ্ছল সাহসী উদ্যোগ। কবি কবিতার শিরোনাম পাঠকের হতে তুলে দিয়ে বিরামহীন বলতে চান অভিজ্ঞতার আত্মবিশ্বাসী কবি সত্তায়। কাব্যগ্রন্থের অভ্যন্তরে প্রবেশের আগেই পাঠককে সজাগ করে দেনÑপ্রকাশিত কবিতা গুলির নামকরণ করার দায়িত্ব দিয়ে। এক দুই তিন করে ঊনসত্তরটি কবিতা রয়েছে পাঠকের হাতে শিরোনামহীন , সূচিহীন এই কবিতার পাঠক আপনি, সূচি ও শিরোনাম আপনার হাতে-

“আবারও দেখা হবে
আরো দেখা হবে।
দৃষ্টি ধূসর হবে।
তবু কি অচেনা হবে তুমি?”

কাব্যগ্রন্থের শুরুতে সাদাফ হাসনাইন মানজুরকে আত্মবিশ্বাসী হতে দেখা যায়। প্রেম মমতা শান্তি সাম্যের জয়গান করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আগামীর দেখাকে পাঠকের কাছে নিয়ে গেছেন। প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা আত্মজ্ঞানের বর্ণনাধর্মী কথার ফুলঝুরিতে কবি সময় ও সমাজ বাস্তবতাকে কবিতায় সফলভাবে ব্যবহার করছেন বহুলাংশে-

অচেনা থেকে যেতো আলোক, নির্মল, সুভাস চন্দ্র,
জওহর লাল, সন্তোষ।
আরো অচেনা থেকে যেতো প্রিয় সুস্মিতা সুশোভন
যারা চমকে দিয়ে কিনে নেয় কেজি ধরে হৃদপি-

“মানুষ নিজ স্বভাবে বিচ্ছিন্ন হয়
সকল প্রতীজ্ঞাকে সামনে রেখে”

জীবনের কাছে আজীবন আটকানো থাকে- আকাক্সক্ষা। যা কখনো লুপ্ত থাকে কখনো অবমুক্ত হয়ে সত্য সুন্দর আগামীর ভাবাবেগ। যেখানে কাব্যের আধুনিক মনস্কতা ফুটে উঠে। প্রেম প্রকৃতি-সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা ও আকুলতা নানা রঙে প্রকাশিত হয়। সাদাফ হাসনাইন মানজুর কবিতায় আকুলতা, ভাবালুতা ও গীতলতা আত্মীয়তাকে সহজ ভাবে গভীরতা দিয়ে কবিতায় স্থাপন করেছেন ব্যাপকভাবে।

চন্দনের তিলকে থাকে ঘ্রাণ।
আয়নায় ললাট দেখিনি ততোবার
যতবার দুই’পা দেখেছি চোখে।

এখানে সাদাফ হাসনাইন মানজুর বিশ্বাসের সত্যতাকে জাগ্রত রাখার চেষ্টা করেছেনÑ সত্যকে খুঁজতে গিয়ে। গভীর মমতা ও অন্তরে সমতাকে আবিষ্কারে আবেগকে নানা মাত্রায় রূপান্তরিত করেছেন-নিজস্ব ঢঙে ও বর্ণনায়।

“আকাশের জামা থেকে তারার বোতাম
একে একে গেঁথে দিলে তোমার কামিজে
তুমি হয়ে যেতে সফল প্রেমের উপমা”

সাদাফ হাসনাইন মানজুর সদা জাগ্রতভাবে জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন স্বাভাবিকভাবে। নিয়মের ছকে নিজেকে আবদ্ধ না-করে মুক্তভাবে সময়ের এপিঠ ওপিঠ সন্ধান করেছেন।

“গল্পের জংশান পার হলে বদলে যায় পথ
বগিও সঙ্গী।
একালের প্রেম দেখে, শাহজাহান মৃত নখ
দাঁতে কাটে সলাজ নয়নে”

সময়ের মুখোমুখি হতে গিয়ে সাদাফ হাসনাইন মানজুর সাহসীকতাকে সঙ্গী করেছেন কবিতায়। ফলে উক্তি দ্বিরুক্তি সব কিছুই ব্যবহার করেছেন মুক্তির আশায়। যুক্তি অজ্ঞাতে বেদনাকে বহন করেন মানবিকভাবে। সত্য সুন্দর আনন্দ বহুমাত্রিক ভাষায় চেতনাকে সচল রেখেছেন।

“একজন অকবির মৃত্যু হলে, কবিরা
শ্রুশ্রƒষায় সুশ্রী হন নিজস্ব স্বভাবে।

কবি ও কবিতার প্রতি একাগ্রতা রয়েছে তার প্রিয় পঙ্ক্তিমালায়। সেখানে রাগ অনুরাগ, আনন্দ বিষাদ, প্রেম বিরহ। জোরালোভাবে কখনো বুদ্ধিবৃত্তি কখনোবা স্যাটায়ারে প্রকাশ করেন। যেখানে বিশ্বাস ও আবেগ এক সঙ্গে সক্রিয় ভাবে পাঠকের সামনে প্রশ্ন উত্তরে নাড়া দেয়।

সাদাফ হাসনাইন মানজুরের কবিতায় উপমা উৎপেক্ষার সম্মিলন ঘটে পরম চরম ব্যাপকতায়। ভালোবাসার অভ্যন্তরের সময় সমাজ রাষ্ট্রকে বিবেক বিবেচনায় অবাধ সতর্কতায় মানুষের বিবেকের কাছে উপস্থাপনা তাকে দিয়েছে পাঠক প্রিয়তা-

“নিজেকে নিজের কাছে কি করে আড়াল নেবো
মুখোশের ওপারে মুখ শত শত বাঁচে, কেই নয়
আমি শুধু জানি, কোন মুখ সত্য ধরে আছে।”

অজানা দুঃখের কা-ারী অপ্রকশিত সত্তাকে আলোকিত করেন মীথ পুরাণ ঐতিহ্য ইতিহাসের কাছে গিয়ে। মানুষই তিনি লালন করেছেন মানুষের মানবতায়। গভীর মনোযোগী-নিভৃতচারী দৃষ্টি ভঙ্গির সঙ্গতি অসঙ্গতি প্রকাশে সাদাফ হাসনাইন মানজুর প্রকৃত অর্থের সত্য খুঁজেছেন-

‘সন্দেহ দুরারোগ্য, সংসার যায় না তার সাথে’

শিরোনামহীন কবিতা গুলি প্রত্যেকটি মনে হয়েছে আলাদা ভাবনার সম্মিলন। কাব্যগ্রন্থের অভ্যন্তরে সাদাফ হাসনাইন মানজুর পদচারণা করেন বাস্তবের অধিবিদ্যায়। সফলতা অচলতা ও হৃদয়ের পরম আকুলতা প্রশ্ন উত্তরে নিজেই নিজেকে খুঁড়েছেন,

কাপ্তাই ছড়ানো সবুজ
বারো হাত শাড়ির আঁচল।
আমি বনে পলাতক পাখি
খুনসুটি, মাখা মাখি
আর কত কি?

ভালোবাসা ও বিশ্বাস এক সাথে হাটে। ভালোবাসা মমতা সমতা আবার বিপরীত ভাবে অপরাগতা ধারণ করেন আত্মবিশ্বাসী উপমায়। সব অজানার বাইরে আন্তরিক যোগাযোগ কবিতাটিকে জীবন্ত করেছে। ঐতিহ্যের প্রবহমানতায় সাদাফ হাসনাইন মানজুরের কবিতায় সুন্দর অসুন্দর অবাধ বিচরণ দেখা যায়। তার ভালোবাসায় থাকে হৃদায়াবৃত প্রেমের অবাধ ভূমি-

“অন্যকে পোড়াতে গিয়ে নিজেকে
পুড়িয়েছি অধিক”

সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কবি আক্ষেপ উপেক্ষা করে উৎকণ্ঠাকে গভীর আত্মীয়তা দিয়ে পাঠকের দৃষ্টিকে ছুঁতে চেয়েছেন নিশ্ছিদ্র প্রচলিত কাব্যধারার ছন্দ মাত্রা রহস্যময়তার বাইরে সাদাফ হাসনাইন মানজুর নিজের ভেতর জাগ্রত কল্যাণ গুলিÑমুক্তভাবে কবিতায় ব্যবহার করেছেন।

“তুমি মায়াবতী নিশ্চুপ, বুকে বাঁধো প্রেমের তাবিজ
শুধু আমি একটু ছুঁতে চাইলেই বাঁধাও গ-গোল।

বুদ্ধিমত্তায় পরিপূর্ণ অতীত ও চলমান ভবিষ্যতের আশায় নিজেকে বহুলাংশে প্রকাশের আগ্রহী দেখা যায়। নির্লিপ্ততা ও সততার জীবন বাজীতার সম্পৃক্ততা তাকে দিয়েছে সময়েই আলাদা রাস্তা। প্রকৃত অর্থে সাদাফ হাসনাইন মানজুরের কবিতা পরশ্রীকাতরতা ও রক্ষণশীলতা আবরণ উপেক্ষা করে প্রকৃত কবিতার একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। আবেগের রথে চড়ে-

“নারী কেবলই জঠর ছেঁড়া সন্তানের কাছে সৎ।
এ কথা জেনেই পুরুষ গিলোটিন মাথা রাখে প্রতিদিন।”

জাগতিক জীবন বোধ ও সুপ্ত মননের আত্ম প্রতিরোধ দুটোই কবি এক সঙ্গে কবিতায় উপাদান করেছেন অনেকটা সচেতন ভাবে। ব্যর্থতা ও সফলতা তাকে প্রকৃত কবির কাছে নিয়ে যায়। যদিও আন্তঃ নাগরিক যোগাযোগ উপভোগ করেন শিরোনামহীন পাঠকের হাতে কাব্যগ্রন্থে। আশাবাদ তাঁর কবিতায় কখনো উজ্জ্বল পঙক্তিতে কখনো উপমা উৎপেক্ষায় স্বার্থকতা পেয়েছে।

মাতৃ আবাদে সবুজ লাল পদ্ম ফোটাবি
হতে পারে আমার আদলে কিংবা তোর।

শব্দ ব্যবহরে নিজস্বতা, ভিন্ন বলার কৌশল ও ভিন্ন স্তর সুরকে লালন করেন নিরাবেগে। কঠোর ও কঠিন বিকাশে-

“সরল অংক গরল জীবন নিয়ে
মানুষ লেগে আছো। মানুষের পিছে”

নিরন্তর সহপাটি ও সতীর্থদের প্রেরণায় যুগের ঊর্ধ্বে যিনি নিভৃতচারী কবি সত্তাকে ৩০ বছর সচল রেখেছেন।

“মুখোশের বাহিরে কোন মুখ নেই পরিচিত
সব মুখ একে একে দেখা হয়ে গেলে
নিজেকে লুকিয়ে রাখি মুখোশের আড়ালে”

মানুষের কাছে মনের বার্তা গুলি পৌঁছে দিতে চান কবিতায়। ফলে তার কবিতা পাঠে পাঠক নিজেকে খুঁজে পাবে। নিরন্তর কবিতার প্রতি প্রেম ও আত্মীয়তা তাকে করেছে কাব্যপ্রেমিক। কবিও কবিতার খ্যাতি- গভীর স্পর্শকাতরতা ও ভাবাবেগ সাদাফ হাসনাইন মানজুর এর বিভিন্ন কবিতায় স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যাপকতা পেয়েছে
-

“চেতনারা ক্রচে ভর করে
নিয়মিত সার্কাস খেলে
দড়ির ওপর।
আমাদের স্বভাব যাবে না মরিলে”

চেতনাকে সদা জাগ্রত ও সজাগ রাখার প্রচেষ্টা দেখা যায় তার বাণী প্রধান পঙক্তিমালায়। সেখানে প্রকৃত কবিও কবিতাকে খুঁজে পাওয়া যায়।

শিরোনাম পাঠকের হাতে কাব্যগ্রন্থে সাদাফ হাসনাইন মানজুর পাঠকের কাছে যেতে চেয়েছেন মচর্যাপদ
মূল্য : ১৫০ টাকালাটবন্দি কাব্যগ্রন্থে। পাঠকের ভালোবাসায় ও ভালোবাসা আবেগাপ্লুত উচ্চারণ ও বিশ্বাস গুলির প্রকাশ পাঠক মাঝে নাড়া দিবে। সুন্দর প্রচ্ছদ ছাপা বাঁধাই সব মিলে গ্রন্থটি বিদগ্ধ পাঠকের ভালো লাগবে। কাব্যগ্রন্থটি সংগ্রহের মতো মেঘের আড়ালে থেকে
কাল আমি দেখেছি যে স্নিগ্ধ ছলাকলা।

শিরোনাম পাঠকের হাতে (কাব্যগ্রন্থ)
সাদাফ হাসনাইন মানজুর
প্রকাশকাল
ফেব্রুয়ারি ২০১৬ একুশে বইমেলা
প্রচ্ছদ :সুশোভন সাহা (কোলকাতা)
প্রকাশক : ১৫০টাকা

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test