E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জীবন সংগ্রামে সাফল্য অর্জনকারী তাড়াশের পাঁচ নারী

২০১৮ মে ০২ ১৬:৩৯:৫৪
জীবন সংগ্রামে সাফল্য অর্জনকারী তাড়াশের পাঁচ নারী

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সব প্রতিকূলতা জয় করে সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন তাড়াশের পাঁচ নারী। জীবনের জন্য সংগ্রাম করে নিজেদের শেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন তারা। পাঁচটি বিভাগে উপজেলা পর্যায়ে ২০১৭ সালে জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন পাঁচজন। 

এরা হলেন- সমাজ উন্নয়নে রোকসানা খাতুন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করা সংগ্রামী নারী সোমেদান, অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী ফরিদা খাতুন, শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ডা. উন্মেল ওয়ারা খান চৌধুরী ও সফল জননী নারী তাহিরা খাতুন।

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা রোকসানা খাতুন জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি মাষ্টার্স ডিগ্রী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনে সেবামূলক কাজে যোগদান করেন। সকল বাধা বিপত্তি কাটিয়ে প্রায় দুই যুগকাল যাবৎ শিক্ষা-স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা, প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে চলেছেন তিনি।

সংগ্রামী নারী সোমেদান বলেন, দারিদ্রতার কারণে অল্প বয়সে বিয়ে হয় তার। অতি দরিদ্র জেনেও স্বামী বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের টাকার জন্য মারপিট করতেন। শেষ পর্যন্ত অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। দুটি সন্তানেরও কোন খোঁজ খবরও রাখেননা। নিরুপায় হয়ে ব্রাক অফিসে বাবুর্চি হিসাবে কাজে যোগদান করেন। মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সুজন দশম শ্রেণিতে পড়ছেন। সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি এখন আত্মনির্ভরশীল।

অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী ফরিদা খাতুন জানান, ২০১৩ সালে মাধাইনগর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে যোগদান করেন তিনি। সামাজিক দৃষ্টিতে নারীর সীমাবদ্ধতা উপক্ষো করে এ কাজের পাশাপাশি নিজের একটি পুকুরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে ঋণ গ্রহণ করে মাছ চাষ শুরু করেন। এখানে কাজের সুযোগ হয়েছে ৩/৪ জন বেকার যুবকের। সব খরচ বাদ দিয়ে বাৎসরিক আয় হচ্ছে দের থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা।

শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ডা. উন্মেল ওয়ারা খান চৌধুরী বলেন, লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছা ছিল তার। ২০০৫ সালে ২৪তম বি.সি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন। মেডিকেল অফিসার হিসাবে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। এরপর পিজি হাসপাতাল, বি.সি.পি.এস কর্তৃক এফ.সি.পি.এস ডিগ্রী লাভ করেন। ২০১৩ সালে এফ.সি.পি.এস ফাইনাল পাঠ শেষ করেন।

২০১৫ সালে এপ্রিল মাসে কনসালটেন্ট পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হোন এবং গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবাসিক সার্জন হিসাবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত আছেন। ডাক্তারী পাশ করার কারণে এলাকার অনেক মেয়ে তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

সফল জননী নারী তাহিরা খাতুন জানান, কন্যা সন্তানদের লেখাপড়া করানোর কারণে পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনের কটুকথা শুনতে হয়েছে তাকে। পারিপার্শ্বিক নানা বিপত্তি কাটিয়ে দুই কন্যাকে সমাজে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রথম কন্যা মৌসুমী হক লোপা।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে ৩৫তম বি.সি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এসিষ্টেন চীফ হিসাবে ঢাকাতে কর্মরত আছেন। দ্বিতীয় কন্যা তাসনীম হক চুম্পা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৩য় বর্ষে লেখাপড়া করছেন। দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করায় সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জয়িতাদের নিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম বলেন, সারা জীবন সংগ্রাম করে এগিয়ে যাওয়া জয়িতারাই সত্যিকার বাংলাদেশের চিত্র। অনেক বাধা পেরিয়ে জয়িতারা এ অবস্থানে এসেছেন। অভিনন্দন তাদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম ফেরদৌস ইসলাম জানান, জীবন যুদ্ধে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার তাগিদে লড়াই করেছেন জয়িতারা। জীবনের জন্য সংগ্রাম করে নিজেদের শেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন তারা। #

(এমএসএম/এসপি/মে ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test