E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে দীপ্তি ছড়াচ্ছেন ৩৭ নারী কর্মকর্তা

২০২২ মার্চ ১২ ১৮:৫৪:২৮
টাঙ্গাইলে দীপ্তি ছড়াচ্ছেন ৩৭ নারী কর্মকর্তা

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাচ্ছেন ৩৭ নারী কর্মকর্তা। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে সফল তারা। দক্ষতার সঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দৈনন্দিন কাজ করছেন। বাল্যবিয়ে ও যৌতুক ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের পাশাপাশি নিজ নিজ উপজেলাকে মাদক-দুর্নীতি-জঙ্গিমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রাখছেন এসব নারী। টাঙ্গাইলে  ১২টি উপজেলার সাতটিতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিস, কৃষি অফিস, নির্বাচন অফিসসহ শীর্ষ পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ছয় নারী দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিন নারী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদরে রানুয়ারা খাতুন, বাসাইলে নাহিদা পারভীন, ভূঞাপুরে ইশরাত জাহান, দেলদুয়ারে ফারহানা আলী, মধুপুরে শামীমা ইয়াসমীন, সখীপুরে ফারজানা আলম ও ঘাটাইলে মুনিয়া চৌধুরী ইউএনওর দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচ নারী। তারা হলেন বাসাইলে নাহিয়ান নুরেন, ঘাটাইলে ফারজানা ইয়াসমিন, গোপালপুরে সাদিয়া ইসলাম সীমা, ধনবাড়ীতে ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা ও সখীপুরে জাকিয়া সুলতানা।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ছয় নারী। তারা হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এসএ শাখা) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ এবং লাইব্রেরি শাখা) সুলতানা রাজিয়া, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আরএম শাখা, এনজিও শাখা, ফরম ও স্টেশনারি শাখা) বাবলী শবনম, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আইসিটি শাখা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, ফ্রন্টডেস্ক) সিনথিয়া হোসেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা, অভিযোগ ও তথ্য শাখা, প্রবাসী কল্যাণ শাখা) সাবরিন আক্তার।

এছাড়া জেলায় শিক্ষা প্রশাসনে রয়েছেন নয় নারী। তারা হলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম, গোপালপুরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা, দেলদুয়ারে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদ পারভীন, নাগরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমানা আরা বিথী, বাসাইল উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর পদে সেলিনা আকতার, দেলদুয়ারে সুরাইয়া ইসয়াসমিন, সখীপুরে হেলেনা পারভীন, ভূঞাপুরে রাজিয়া সুলতানা ও মধুপুরে খন্দকার জাকিয়া শামছি।

নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন দুই নারী। তারা হলেন মির্জাপুরে শরিফা বেগম ও ভূঞাপুরে নাজমা সুলতানা। কৃষি দফতরে রয়েছেন তিন নারী। তারা হলেন বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার, সখীপুরে নিয়ন্তা বর্মণ ও ঘাটাইলে বিলশাদ জাহান।

উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন দুই নারী। তারা হলেন বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারলী হামিদ ও ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহনাজ সুলতানা।

পুলিশ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করছেন তিন নারী। তারা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুসরাত এদীব লুনা, মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অ্যাডিশনাল এসপি মারুফা নাজনীন ও টাঙ্গাইলের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পলি দাস।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুসরাত এদীব লুনা বলেন, ‘কর্ম ক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়ে আছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা একধাপ এগিয়ে আছেন, যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে। আর চ্যালেঞ্জিং পেশা এখন নারীরাও গ্রহণ করছেন। এখন বাংলাদেশে প্রত্যেক স্তরেই নারী আছেন। পুলিশে, চিকিৎসায়, শিক্ষায়, সৈনিক ও সীমান্তরক্ষী হিসেবেও নারীরা আছেন। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছেন নারীরা। ব্যবসা ক্ষেত্রেও নারী আছেন। অনেক নারী উদ্যোক্তা, যারা সফলভাবে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করছেন। তারা সফল হচ্ছেন, কোনও সন্দেহ নেই। নারীরা মাত্র কয়েকটি সাধারণ পেশায় আছেন, এই কথা এখন কেউ বলতে পারবে না। চ্যালেঞ্জিং পেশা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছেন অসংখ্য নারী।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিংয়ের বিষয়গুলো কিন্তু বহুমুখী। একজন নারী পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাধীন, সেটা বুঝতে হবে। এখনও নারীরা পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীন নন। তাকে বিভিন্ন জিনিস চিন্তা করতে হয়। সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করতে হয়, পারিবারিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করতে হয় এবং পরিবারের অনুমতি নিতে হয়। সেটা হতে পারে বাবা, হতে পারে স্বামী কিংবা ভাই। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ পরিবারের অভিভাবকদের অনুমতি লাগে। যেখানে একজন পুরুষের পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব অনুমতি লাগে না। আবার একজন নারীর ক্ষেত্রে চিন্তা করা হয়, যে নারী আসলে কতটুকু সেই পেশাতে যোগ্য হয়ে উঠবেন। ফলে যিনি চাকরিদাতা তিনিও চিন্তা করেন, সব ক্ষেত্রে নারী দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন কিনা। আবার আরও কিছু বিষয় থাকে, আমাদের অনেক নারী মোটরসাইকেল চালাতে জানেন না, গাড়ি চালাতে জানেন না। অনেক পেশায় এটা প্রয়োজন হয়। সেসব পেশায় চাকরিদাতা নারীকর্মী নিয়োগ দিতে চান না। তারা এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন।’

(এসএম/এসপি/মার্চ ১২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test