E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাবা'র কোলে পরীক্ষা কেন্দ্রে অদম্য নাইছ

২০১৪ নভেম্বর ০৭ ২১:২৩:৪১
বাবা'র কোলে পরীক্ষা কেন্দ্রে অদম্য নাইছ

বগুড়া প্রতিনিধি : পা আছে, কিন্তু হেটে চলার শক্তি নেই। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি হলেও তার রয়েছে অদম্য শিক্ষা শক্তি। সহপাঠিদের সাথে বগুড়ার ধুনট এন.ইউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নিয়েছে নাইছ আকতার (১৩)।

হেঁটে চলার শক্তি না থাকায় কেন্দ্রে যেতে হয়েছে বাবা’র কোলে। তাকে ঘিরেই ছিলো কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি। অচল ডান হাত রেখে বা’হাতে দ্রুত গতিতে লিখেই তাক লাগিয়েছে বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইছ আকতার। বাবা চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামের নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক। মা আকতার জাহান গৃহিনী। এই দম্পত্তির ২০০১ সালে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধি সে। নজরুল ইসলাম ও আকতার জাহান দম্পত্তির এই কন্যা শিশু নিজের দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না। শক্তি না থাকায় ডান হাতটিও অচল। ওই দম্পত্তি তাদের এই শিশু’র নাম রাখেন নাইছ আকতার।

বিশ্বাস থেকেই প্রতিবন্ধি এই শিশুর মাধ্যমে সুন্দর কিছু বিকাশের স্বপ্ন ছিলো ওই দম্পত্তির। বেড়ে ওঠার সাথে লেখাপড়ার প্রতি তার আকর্ষন সৃষ্টি হয়। বাবা-মা’র কোলে করেই বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করেছে সে। চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে নাইছ আকতার।

বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেজাব উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী অনিয়মিত থাকে। কিন্তু প্রতিবন্ধি হলেও বাবা-মা’র কোলে চেপে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে নাইছ আকতার। শ্রেণিকক্ষে তার রোল ২২। প্রতিবন্ধি হলেও সে অত্যন্ত মেধাবী। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ। এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আশা করছি সে ভাল ফলাফল করবে।

অদম্য নাইছ জানায়, সবাই পায়ে হেটে চলাচল করে। সহপাঠিরা খেলাধূলা করতে পারে। নিজে নিজে চলতে না পারার কষ্ট নাইছের মনে। শারীরিক প্রতিবন্ধি হলেও সমাজের সব প্রতিবন্ধকতা মাড়াতে চায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে। মনের কোনে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন লালন করে নাইছ সব কষ্টসহ্য করেও নিয়মিত লেখাপড়া করছে। শুক্রবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নাইছ জানায়, বাবা-মায়ের কোলে চরে এক সময় রাস্তায় বেরুলে মানুষ বিদ্রুপের চোখে তাকিয়ে থাকতো। লেখাপড়া করার কারনে মানুষ এখন ভালবাসে। ভাল ফলাফল করে এবং উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সমাজের সকলের ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করতে চাই।নাইছ আকতারের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়ে প্রতিবন্ধি হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারনে আমাদের সব কষ্ট দুর হয়েছে। ভাল ফলাফল নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারলে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরণ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় অনেক চিকিৎসা করেও নাইছ কে সুস্থ্য করা সম্ভব হয় নি। প্রতিবন্ধি হওয়ার ফলে সরকার থেকে মাসিক ৪৫০টাকা শিক্ষা বৃত্তি দিয়েছে।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব মশিউর রহমান জানান, শুক্রবার জেএসসি পরীক্ষায় বাবা’র কোলে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইছ আকতার। পা থাকলেও হাটতে পারেনা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন অনুযায়ী তাকে প্রতিবন্ধি কোঠায় ২০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ডান হাতে শক্তি না থাকায় বা’হাত দিয়েই পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখে নাইছ। কিন্তু বা’হাতে দ্রুত লিখে সে যেন যাদু দেখিয়েছে।

মশিউর রহমান বলেন, নাইছের অদম্য ইচ্ছা তাকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

(এএসবি/অ/নভেম্বর ০৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test