E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব

নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে কাঁকড়া চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা

২০১৭ ডিসেম্বর ২৯ ১৭:১৭:০১
নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে কাঁকড়া চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা

মো: ইমাম উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী প্রতিনিধি : সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে কাঁকড়া চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশে খাবার হিসেবে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা না থাকলেও বিশ্বের অনেক দেশে এটি সুস্বাদু খাবার হিসেবে সমাদৃত। কাঁকড়া রপ্তানি করে আসছে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। কাঁকড়া চাষের সুবিধা হচ্ছে, এতে পরিশ্রম কম, উৎপাদন ব্যয়ও তুলনামূলক কম। কাঁকড়ার বংশবৃদ্ধিও ঘটে দ্রত। উপকূলীয় এলাকায় কাঁকড়া চাষ করে অনেকেই এর সুফল পাচ্ছেন।

বতর্মানে কেবল দক্ষিণাঞ্চল থেকেই কাঁকড়া রপ্তানির মাধ্যমে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। সারা দেশ থেকে এ রপ্তানি-আয়ের পরিমাণ বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া সেখানকার কৃষি উৎপাদন এখন ঝুঁকির মধ্যে। এতে স্থানীয় লোকজনের অনেকে আরও গরিব হচ্ছে। কাঁকড়ার চাষ এসব গরিব মানুষের বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে ।

কাঁকড়ার চাষের উৎস: দেশে দুই ধরনের কাঁকড়া পাওয়া যায়। একটি লোনাপানির, অন্যটি মিঠাপানির। মিঠাপানির কাঁকড়া তুলনামূলক কম। লোনাপানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ যত বেশি থাকবে, কাঁকড়ার উৎপাদনও তত বেশি হবে। দক্ষিণাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, বিস্তিৃত চিংড়িঘের ও বনাঞ্চলে লোনাপানিতে কাঁকড়া মেলে।

এদের গড় আযু এক থেকে দেড় বছর। চিংড়ি ঘেরে বড় হওয়া কাঁকড়ার ৯০ শতাংশই নষ্ট হয়না। প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া কাঁকড়ার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আহরণ করা সম্ভব হয়। কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩ হাজার জেলে প্রাকৃতিক উৎসগুলো থেকে কাঁকড়া ধরে জীবন যাপন করছেন।

উপজেলার চিংড়িঘের ব্যবসায়ী বাবলু দাস, সুভাষ সাহা, ত্রিহরি দাস, মাধব সাহা, বরুন সাহা, রাখাল দাস জানান, সুবর্ণচর উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে কোন প্রশিক্ষন ও আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁকড়া চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা । প্রতিবছর এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভাবে যে পরিমাণ কাঁকড়ার পোনা জন্মে, প্রতিবছরের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুযয়ারি এবং জুন থেকে জুলাই হচ্ছে কাঁকড়ার প্রজননকাল। প্রজননের সময় উপকূলীয় অঞ্চল ও বিস্তিৃত এলাকার জলাশয় ও তীরে প্রচুর কাঁকড়ার পোনা দেখা যায়।

কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি’র সভাপতি বাবলু দাস বলেন, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে কেবল সুবর্ণচর উপজেলার ভিবিন্ন মোকাম (বাজার) ৩০০ মেট্রিক টন কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এর মূল্য প্রায় ১০কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এই রপ্তানি বেড়ে ৪০০শ’ মেট্রিক টনে দাঁডিয়েছে।

বাংলাদেশ কাঁকড়া রপ্তানিকারক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে মাত্র ২৩ হাজার টাকা মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে প্রথম রপ্তানি করা হয়। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়েছে।

কাঁকড়া চাষে ঝুকে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ: কাঁকড়া চাষ এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে মূল্যবান সম্পদ। কাঁকড়া চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য ঘেরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁকড়া চাষ শুরু হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রক্রিয়াজাত করণে সহায়তা পেলে কাঁকড়া রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব।

প্রতিবছর দেশের মৎস্য ঘের, নদী-নালা, খাল-বিল, প্রভৃতি স্থানে প্রচুর পরিমানে কাঁকড়া পাওয়া যায়। সূত্র মতে, দেশে ১২ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। এদের মধ্যে মাইলা ও শীলা উন্নত মানের। হংকং, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, বার্মা, শ্রীলংকা, কোরিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চিংড়ি চাষের পাশাপাশি কাঁকড়ার চাষও ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে। তুলনা মূলক ভাবে মৎস্য চাষে লাভ না হওয়ায় নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক মৎস্য চাষীরা কাঁকড়া চাষে ঝুকে পড়ছে।

আবার অনেকে মৎস্য চাষে আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিবছর এ অঞ্চলের কাঁকড়া চাষীরা হাজার হাজার মন কাঁকড়া বিক্রি করে প্রচুর পরিমানে অর্থ উপার্জন করছে। কাঁকড়ার লাভজনক চাষ দেখে অনেক বেকার যুবকরা এ চাষে মনোযোগী ও উৎসাহি হওয়া সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সংকট ও সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে সম্ভ্যবনাময়ী হওয়া সত্বেও ছিটকে পড়ছে অনেকেই।

সরকারীভাবে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে উপকুলীয় অঞ্চলের বেকার যুবকদের কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি সম্ভব। বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে নদীর কাকড়ার চাহিদা ও দাম বেশী। শীত মৌসুমে স্ত্রী কাকড়া ১৮০ গ্রাম গ্রেড ধরে কেজি প্রতি ৯০০ এবং পুরুষ কাকড়া ৫০০ গ্রাম গ্রেট ধরে কেজি প্রতি ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর মুল্যও বেশী। উল্লেখিত দেশ সমুহসহ ভারতে কাকড়া রপ্তানি করা হচ্ছে। কারণ ওই সব দেশে কাকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সুবর্ণচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পিযুষ প্রভাকর জানান, সুবর্ণচর উপজেলায় কাঁকড়া ও কুচিয়া প্রকল্প না থাকায়, সাধারনত কাঁকড়া চাষীগন বঞ্জিত হচ্ছে, আগামীদিনে কাঁকড়া চাষীদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো এবং নতুন কোন প্রকল্প আসলে কাঁকড়া চাষীদের আওতাভ’ক্ত করা হবে ।

(আইএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test