E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেড়ে উঠছে গাছ

সার ওষুধের দামে হতাশ বাউফলের তরমুজ চাষি

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১৭ ১৭:৩৬:৩৪
সার ওষুধের দামে হতাশ বাউফলের তরমুজ চাষি

এম এ বশার, বাউফল (পটুয়াখালী) : বেড়ে উঠছে গাছ। মাদার আশপাশে বাইতেও শুরু করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যেই ফুলে ফুলে ভরে যাবে তরমুজের মাঠ। গাছ বেড়ে উঠলেও সার-ওষুধের দামে পটুয়াখালীর বাউফলের চররায়সাহেব, মমিনপুর, চরওয়াডেল ও কছবিয়ার চরের তরমুজ চাষিরা হতাশ। শুরুতে বৈরীবৃষ্টি, ঘনকুয়াশার মতো প্রতিকুল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের অসহযোগিতার অভিযোগ চাষিদের।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বাউফলের বিভিন্ন চরে এ বছর ১২৫হেক্টরে তরমুজ, বাংগি ৫০ হেক্টর ও ৪০ হেক্টরে খিরা চাষ হয়েছে। বোরো আবাদ বৃদ্ধি আর অতিজোয়ারের কারণে ক্ষেত শুকাতে দেঁড়ি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কমেছে বাংগি, তরমুজ ও খিরার।

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে তরমুজের আবাদ। শৌলা ও চর ওয়াডেলে পাশের জেলা ভোলা থেকে এসেও কয়েক চাষি তরমুজ চাষ করছেন এ বছর। চর কচ্ছবিয়ায় মোট ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন বাকলা তাঁতেরকাঠি গ্রামের ফিরোজ চৌধুরী। স্থা

নীয় নুরাইনপুর বন্দরের বীজ ব্যাবসায়ী ছোবহান হুজুরের কাছ থেকে ও কালাইয়ার হাট থেকে ড্রাগন, বিগফ্যামেলী ও ব্লাকমাস্টার জাতের বীজ সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন মাদায়। ইতোমধ্যে তরমুজ গাছ বাইতে শুরু করেছে মাদার চারপাশে। আর ক’দিন বাদেই ফুলে-ফুলে ভরে উঠে ক্ষেত। শুরু করবে ফল পড়তে। বীজ সংগ্রহে আগেরমতো সিন্ডিকেটের কারসাজি না থাকলেও প্যাকেট প্রতি ১০০ টাকা দাম বেশি ছিল উল্লেখ করেন তিনি।

আগের বছর জোয়ারের পানির হানায় খুব একটা লাভের মুখ না দেখলেও এবছর প্রায় এক একরে ক্ষীরাসহ মোট ১৫ একরে তরমুজের চাষ করেছেন তিনি।

ফিরোজ চৌধুরী জানান, ধান চাষে এখন আর লাভের নিশ্চয়তা নেই। জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে দিন দিন কৃষিতে বিপদ-আপদ বাড়ছে। শেষ অগ্রহায়নে ভরা-জোয়ারে ক্ষেত তলিয়ে ধান কাটতে দেঁড়ি হওয়ায় তরমুজ চাষও এবার পিছিয়ে গেছে এক ধাপ। এখন চাষের ভর মৌসুম। গাছ বাইতে শুরু করেছে। এ সময় রিং করে তরমুজের মাদায় সার-ওসুধ দেওয়ার সময়।

রোগ-বালাই তেমন একটা না থাকলেও সার-ওষুধের দামে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। একই চরে তরমুজ চাষের দীর্ঘ ১০-১২ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছেন পাশের ভোলা জেলার চরকলমির চাষি বাবুল খা। জমি লীজ নিয়ে ইউনাইটেডের বিগফ্যামেলি, জাগুয়ার, ব্লাক মাস্টার ও ড্রাগন জাতের তরমুজের চাষ করেছেন তিনি।

পাশের ভোলা জেলা থেকে এসে এই চরে তরমুজ চাষের কারণ হিসেবে তিনি জানান ভিন্ন কথা। একই জমিতে বারবার কীটনাশক আর সার-ওষুধ ব্যাবহারের কারণে ওই এলাকার জমিতে আগেরমতো এখন আর তরমুজের ভাল ফলন মেলে না। আছে অতিজোয়ার আর লবন পানির হানার আতঙ্ক। ক্ষেতে কৃষি অফিসের লোকজনের দেখা না পাওয়ায় বাবুল খার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন এই চরের অপর তরমুজ চাষিরা। তাঁতেরকাঠি গ্রামের রাধু মৃধা দুই একর জমিতে করেছেন ব্লাকমাস্টার ও ড্রাগন জাতের রমুজের চাষ।

তিনি জানান, প্রতি মাদায় ১২ গ্রাম এমওপি, ৫-৭ গ্রাম ইউরিয়া, ১শ’ ৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৫ গ্রাম ড্যাবসহ গ্রোজিন, সিনজেনটার ক্যারাটে, ম্যাগমা, থিউবিট, ভর্টিমেঘ ও স্কোরের মতো কীটনাশক ব্যাবহার করতে হয়। আর এসব মিলে মাদা প্রতি ইতিমধ্যে ৫০-৬০ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে।

একই চরের তরমুজ চাষি শহিদ ফরাজি জানান, আগের বছর ড্যাব ১ হাজার ১শ’ ৫ টাকা, ইউরিয়া ৭শ’ ৫০ টাকায় কেনা গেলেও এবছর ড্যাব ১ হাজার ৫শ’ টাকা, ইউরিয়া ৮শ’ ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খরচ যাই হোক অতিজোয়ার কিংবা শীলা-বৃষ্টির মতো বৈরী আবহাওয়া না হলে তরমুজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।

সারের দাম বৃদ্ধির কথা তুলে কৃষি অধিদপ্তরের লোকজন চরে এসে কোন ধরণের খোঁজ-খবর কিংবা পরামর্শ দেন না অভিযোগ চাষি রাদু মৃধার।

এ ব্যাপারে চলতি দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (পাশের দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা) বনি আমিন খানের মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরাফাত সানি কৃষকের কাছ থেকে সারের দাম বৃদ্ধির কোন অভিযোগ পাননি জানিয়ে বলেন, ‘ডিলারদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে চাষিদের কাছে বিক্রি করে থাকতে পারে। তবে কোন ডিলার সারের দাম বেশি রাখলে খোঁজ নিয়ে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’

তরমুজ চাষিদের খোঁজ-খবর নেওয়া হবে জানিয়ে বলেন, ‘চাষিদের কোন রকমের সমস্যার কথা শুনলেই অফিসের লোকজন মাঠে ছুটে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শীলাবৃষ্টি কিংবা নোনাপানি আঘাত না হানলে চাষিরা এবার বাঙ্গি, ক্ষীরা ও তরমুজের বাম্পার ফলন পাবেন।’

(এমএবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test