E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পোকার আক্রমনে দিশেহারা বাউফলের তরমুজ চাষিরা

২০১৮ মার্চ ১৭ ১৬:০৫:০০
পোকার আক্রমনে দিশেহারা বাউফলের তরমুজ চাষিরা

এমএ বশার, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পোকা দমনে মিমপেক্সের স্পাইক, ওয়ান্ডার কিংবা সিনজেনটার একতারা, রিভাস, ক্যারাটে, সবিক্রন, ভার্টিমেঘ, ভলিয়াম, প্রোটোজিমের মতো কীটনাশকের ব্যাবহারেও কাজ হচ্ছে না। বৈরী বৃষ্টির কারণে ক্ষেত তৈরীতে কিছুটা দেড়ি হয় কৃষকের। এখন সবুজ ছাওয়া ক্ষেতে ফুলে ফুলে ভরে গিয়ে ফল আসা শুরু করলে পোকার আক্রমনে দিশেহারা পটুয়াখালীর বাউফলের বিভিন্ন চরের তরমুজ চাষি।

বিশিষ্টজনের ধারণা উপরন্ত মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক আর হরমোনের ব্যাবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে সাধারন ও সংশ্লিষ্টদের। চর কচ্ছবিয়ায় মোট ১৫ একর জমিতে ড্রাগন ও বাদশা জাতের তরমুজ চাষ করেছেন বাকলা তাঁতেরকাঠি গ্রামের ফিরোজ চৌধুরী।

ইতোমধ্যে তার ক্ষেতের তরমুজ গাছে ফল আসা শুরু হয়েছে। কোন কোন মাদায় আবার ২-৩ কেজি ওজনের তরমুজেরও দেখা মিলছে। আর ক’দিন বাদেই নয়নাভিরাম তরমুজে ভরে উঠবে পুরো ক্ষেত। শুরু হবে বেঁচা-বিক্রি। কিন্তু প্রথম দফায় রিং করে মাদায় সার-ওসুধ দিতে গিয়ে বাজারে সারের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা সামলে উঠলেও এবার গাছে ফল আসার মুহুর্তে পোকার আক্রমনে দিশেহারা তিনি।

বল্লা পোকা, মাছি পোকা, লতা পোকাসহ ছাইয়া পোকার আক্রমনের কথা জানায় সে। বল্লা পোকার আক্রমনে ছোট অবস্থায় তরমুজের পাছার দিক মরে বিকলাঙ্গ, বেকে যাওয়া, বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থসহ পঁচতে দেখা যায়। মাছি পোকায় তরমুজের পাতা ঘিরে ধরাসহ ফলের ওপর লতা পোকার চোষণের চিহ্ন চোখে পড়ে। চোখে পড়ে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্তুপ করে রাখা বিকলাঙ্গ, বেকে যাওয়া, বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থস ছোট ছোট তরমুজ।

পোকার আক্রমনে দিশেহারা পাশের উপজেলার চরকাজল থেকে আসা একই চরের তরমুজ চাষি বাবুল খান। এই চরে এসে তরমুজ চাষের দীর্ঘ ১০-১২ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। জমি লীজ নিয়ে বাদশা, ড্রাগন, ইউনাইটেডের বিগফ্যামেলি জাতের তরমুজের চাষ করেছেন তিনি।

পাশের উপজেলার চরকাজল থেকে এসে তরমুজ চাষের কারণ হিসেবে নিজ এলাকায় একই জমিতে বারবার কীটনাশক আর সার-ওষুধ ব্যাবহারে আগেরমতো তরমুজের ভাল ফলন মেলে না উল্লেখ করলেও এই চরেও এবার পোকার আক্রমনে নাস্তানাবুদ হয়েছেন জানান তিনি।

তিনি জানান, বাজার থেকে সিনজেনটার একতারা- ৫ গ্রাম/ ২৫ ডাব্লিউ জি) ৪৫ টাকা, প্রোটোজিম-(৫০০- এমএল/২০এমএসসি) ৯শ’ টাকা, রিভাস- (৫০০-এমএল) ১ হাজার ৭শ’ ৫০ টাকা, ক্যারাটে- (৫০০-এমএল/২.৫ ইসি) ৫শ’ টাকা, সবিক্রন- (৫০০-এমএল/৪২৫ ইসি) ১ হাজার ২শ’ টাকা, ভার্টিমেঘ- (৫০০-এমএল/১৮ ইসি) ৩শ’ ৫০ টাকা, ভলিয়াম- (৫০-এমএল/৩০০ ইসি) ৩শ’ ২৫ টাকা ছাড়াও মিমপেক্সের স্পাইক- (৫ গ্রাম/২৫ ডাব্লিউ জি) ৪০ টাকা ও ওয়ান্ডার- (১০ গ্রাম/ ৫ ডাব্লিঊ জি) ৭৫ টাকায় কিনে ব্যাবহার করলেও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষেতের পোকার আক্রমন।

আগের মতো সিন্ডিকেটের কারসাজিতে না পড়লেও এবার প্যাকেট প্রতি ১০০ টাকা বেশি দামে বীজ সংগ্রহ করতে হয়েছে তার। তাছাড়া গত বছরের মতো জোয়ারের পানির হানায় খুব একটা লাভের মুখ না দেখলেও শেষ পর্যন্ত পোকার আক্রমন ঠেকানো গেলে আর বিপদাপদ না হলে তরমুজ চাষে লাভের আশা করছেন তিনি।

পোকা তাড়াতে তরমুজ ক্ষেতে স্প্রে করতে দেখা যায় একই চরের চাষি তাঁতেরকাঠি গ্রামের রাধু মৃধাকে।দুই একর জমিতে বাদশা ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন তিনি।

তিনি জানান, প্রতি মাদায় ১২ গ্রাম এমওপি, ৫-৭ গ্রাম ইউরিয়া, ১শ’ ৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৫ গ্রাম ড্যাবসহ গ্রোজিন, সিনজেনটার ক্যারাটে, ম্যাগমা, থিউবিট, ভর্টিমেঘ ও স্কোরের মতো কীটনাশক ব্যাবহার করেছেন তার ক্ষেতে। গাছের দোড়ায় দস্তার দানা দেওয়ার সময় এখন। আগের বছর বস্তাপ্রতি ড্যাব ১ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা, ইউরিয়া ৭শ’ ৫০ টাকায় কেনা গেলেও এবার চাষের শুরুতে ড্যাব ১ হাজার ৫শ’ টাকা, ইউরিয়া ৮শ’ ২০ টাকায় কিনতে হয়েছে। আর এখন ওই দামেও মিলছে না সার। ড্যাব ১ হাজার ৭ শ’ আর ৯ শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে ইউরিয়া। আবার নতুন করে শুরু হয়েছে পোকার উপদ্রব। বাজারের কেনা বিষ কিংবা কোন কিছুতেই যেন কমছে না পোকার আক্রমন।

রাদু মৃধা বলেন, ‘কোম্পানির মাইনষের কতায় গাছ চাঙ্গা করনের লইগ্যা একতারা, প্রোটোজিম, রিভাস, ক্যারাটে, সবিক্রন, ভার্টিমেঘ, ভলিয়াম, স্পাইক, ওয়ান্ডার আরো কত কিটনাশক ছিডাইছি। হ্যাতে কোন উপকার অয় নাই।’ তরমুজে পোকার অক্রমনের কথা জানান, পাশের চরের চাষি স্বপন চৌধুরী, শহিদ ফরাজিসহ চরওয়াডেল ও চর শৌলার কয়েকজন।

পৌর সদরের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অহিদুজ্জামান সুপন বলেন, ‘সুবিধা নিতে কোম্পানির লোকজন তরমুজে কীটনাশক আর হরমোনের ব্যাবহারের কথা বলতে পারেন। এতে তরমুজ গাছের কোন উপকার নেই উপরন্তু স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে সাধারন ও সংশ্লিষ্ট উভয়েরই। প্রাকৃতি কৃষিতে এগিয়ে আসতে হবে সবার। পোকামাকড় দমনসহ প্রাকৃতি উপায়ে বালাইনাশক তৈরী ও তার ব্যাবহার শিখতে হবে। ’

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বাউফলের বিভিন্ন চরে এ বছর ১২৫ হেক্টরে তরমুজ, বাংগি ৫০ হেক্টর ও ৪০ হেক্টরে খিরা চাষ হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে তরমুজের আবাদ।

এ ব্যাপারে চলতি দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (পাশের দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা) বনি আমিন খানের মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন সানী বলেন, ‘মাঠে খোঁজ-খবর নিয়ে চাষিদের পোকার আক্রমনের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষীরার ফলন ভাল হয়েছে। শীলাবৃষ্টি কিংবা নোনাপানি আঘাত না হানলে চাষিরা তরমুজেরও বাম্পার ফলন পাবেন।’

(এসএবি/এসপি/মার্চ ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test