E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ওরা পাবে সাত ভাগের এক ভাগ

২০১৮ মার্চ ২০ ১৫:২১:৪৭
ওরা পাবে সাত ভাগের এক ভাগ

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ডাল তুলেও মুখে হাসি নেই মহিমা বেগমের। প্রায় ১১ ঘন্টা পরিশ্রম করার তার ভাগ্যে জুটেছে মাত্র আড়াই কেজি ডাল। যার বাজার মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। সাত ভাগের এক ভাগ চুক্তিতে এ ডাল পেয়েছেন তিনি। হাতে কাজ নেই, তাই স্বামী আনোয়ার হোসেনের সাথে ডাল তুলতে এসেছেন তিনি। সবাই এক সাথে আছেন, এতেই খুশি মহিমা বেগম।

সাগর ও নদীতে মাছ ধরা পড়েনা। বন্ধ রাস্তার মাটি কাটার কাজ। তাই তাদের মতো কলাপাড়ার শতশত নারী ও শিশু শ্রমিক এখন এই চুক্তিতে ডাল তুলতে নেমেছেন। কেউবা তরমুজ ক্ষেতে পানি দেওয়ার কাজ করছেন দৈনিক শ্রমে।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় প্রায় আটশ’ হেক্টর জমিতে ফেলন ডালের আবাদ হয়েছে। ক্ষেতে ডাল পাকতে শুরু করায় এখন চলছে পাকা ডাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

উপজেলার বালিয়াতলী, মিঠাগঞ্জ ও ধুলাসার ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ক্ষেতের ফেলন ডাল সংগ্রহে। এদেরই একজন তিন সন্তানের জননী মহিমা বেগম। তিনি বলেন, আগে রাস্তায় মাডি কাটতাম। এ্যাহনতো মাডি কাডা বন্ধ। অন্য কাজও নাই। হেইয়ার লাইগ্যা ডাইল তুলি। আইজ আড়াই কেজি ডাইল পাইছি। এইয়া বেইচ্চা পঞ্চাশ-ষাট টাহা পাইতে পারি। জানি এই টাহায় সংসার চলবে না। কিন্তু কাম নাই। তাই এইয়া ছাড়া উপায়ও নাই। তার মতো ক্ষেতে ডাল তুলছে, হেলেনা বেগম, আম্বিয়া খাতুন, জয়নব, জাহানারা, কোহিনুর ও আনোয়ার হোসেন।

১১ বছরের কিশোরী জয়নব। স্কুল খোলা কিন্তু স্কুলে না গিয়ে সে এখন ব্যস্ত ডাল সংগ্রহে। তার ভাষায়,“ ঘরে চাউল নাই। মোর তো আর আব্বা নাই। হেইয়ার লাইগ্যা মুই আর মা দুই ক্ষ্যাতে ডাইল তুলি। আইজ মুই দেড় কেজি ডাইল পাইছি। মায় পাইছে তিন কেজি। আরও ৩/৪ দিন মোরা ডাইল তুলমু। হেইয়ার পর স্কুলে যামু। এই সাত ভাগের একভাগ ডাল পেলেও খুশি শ্রমিকরা। কারন তাদের বিকল্প আর কোন কাজ নেই এই মৌসুমে।

জমির মালিক ফরিদ উদ্দিন জানায়, প্রায় সাত একর জমিতে ফেলন ডাল হইছে। ওরা নিজ উদ্যেগেই ডাল তুলছে। প্রতিদিন যা তুলতে পারবে তার সাত ভাগের একভাগ পাবে। এভাবেই এবার ডাল তুলছে সবাই। এতে তারাও লাভবান হচ্ছে আর তারও ঝামেলা নেই।

একাধিক শ্রমিক জানায়, এখন ঢাকায় কাজ করতে যেতে ইচ্ছে হয় না। কামও তেমন পাই না। তাই বাধ্য হয়ে এলাকায় কাজ করছেন। এখন যে অবস্থা এই ডাল তুলতে না পারলে তাদের না খেয়ে থাকতে হতো। কেননা মাটি কাটার মৌসুমও শেষ। তাই ডাল সংগ্রহ করাই এখন ভরসা।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, এবার ফেলন ডালের ফলন ভালো হয়েছে।

(এমকেআর/এসপি/মার্চ ২০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test