E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে রসুন নিয়ে বিপাকে কৃষক

২০১৮ এপ্রিল ০৬ ১৬:৩২:৪৫
দিনাজপুরে রসুন নিয়ে বিপাকে কৃষক

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের এবার রসুনের ভালো ফলন হলেও দাম নিয়ে বিপাকে পরেছেন কৃষকরা। খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার রবি মৌসুমের প্রধান কয়েকটি ফসলের মধ্যে সাদা সোনা নামে খ্যাত এই রসুন চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এবার এ সাদা সোনা চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এ রসুন চাষ করে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও এবার তা নিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। বন্যার ধকল কাটিয়ে তোলা এ সাদা সোনা রসুন এখন যেনো তাদের “মরার উপর খাড়ার ঘা” এ পরিনত হয়েছে।

সাদা সোনার খনির হিসেবে খ্যাত এই খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলায় ব্যাপকভাবে এবার রসুন চাষ করা হয়েছে। রসুনের পরেই রয়েছে ভুট্টার স্থান। দু’উপজেলার মোট জমির তিনভাগের একভাগ জমিতে রসুন চাষ করা হলে আরেক ভাগে চাষ করা হয় ভুট্টা। অপর অংশে করা হয় বোরোর চাষ। কিন্তু বোরোর ফলন এবং দাম কম পাওয়ায় চাষীরা দীর্ঘদিন থেকে রসুন এবং ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গত মৌসুমে ভুট্টার দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা প্রতিবারের ন্যায় এবারও রবি মৌসুমে অর্থকরি ফসল হিসেবে অতি যত্নের সাথে এ সাদা সোনার চাষ করেছে। তবে এবার উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ রসুন চাষেরও একটা নজির দেখা মিলেছে।

বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য দু’উপজেলার কৃষক-শ্রমিক, চাকুরিজীবিসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ বর্গা নিয়ে কিংবা নিজের জমিতে চাষ করেছে সাদা সোনা খ্যাত রসুনের চাষ। কিন্তু এ রসুন যে গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে তা চাষীরা কখনও ভাবতে পারেনি। যে সাদা সোনা একসময় খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার চাষীদের স্বাবলম্বী করেছে আজ তা চাষ করে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। তারা জানে না এই বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে।

শুক্রবার সরেজমিনে খানসামা উপজেলার কাচিনীয়া, গোয়ালডিহি, উত্তমপাড়া, দেউলগাঁও, রামনগর, জোয়ার, জুগীরঘোপা, কায়েমপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, জমি থেকে বিনা চাষে লাগানো রসুন তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষানীরা। তবে এ বছর রসুনে ফলন বাম্পার হলেও বিক্রয় করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।উপজেলার হাট-বাজারগুলো এখন রসুনের বিক্রেতা ও পাইকার দিয়ে ছেয়ে গেছে।

রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে বড় বড় রসুনের পাইকারের উপস্থিতিতে হাটগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে রসুনের বড় হাট কাচিনিয়া। এরপরই পাকেরহাট, খানসামা সদর, কালীর বাজার ও ডাংগারহাটে। উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার এবং গ্রামীণ শহর পাকেরহাটে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। অপরদিকে রসুনের হাট নামে খ্যাত কাচিনিয়া বাজারের হাট সপ্তাহে দুইদিন রবিবার-বুধবার হলেও শুধুমাত্র রসুন বেচা-কেনার জন্য ৪ দিন হাট বসে।

কাচিনিয়া বাজারের ইজারাদার রবিউল আলম তুহিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতি হাটবার এ বাজারে প্রায় ২০০ টন রসুন বেচা-কেনা হয়। এখান থেকে বাংলাদেশের সিলেট, শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, ঢাকা সহ বিভিন্নজেলায় রসুন চালান হয়।

শুক্রবার পাকেরহাটের রসুনের বাজারে ছিল উপচে পড়া ভীড়। রসুন রাখার মতো জায়গা নেই। হাটে কথা হয় রসুন বিক্রেতা ভেড়ভেড়ী গ্রামের বিপিন রায়ের সাথে। সে হাটে ১ মণ রসুন বিক্রি করতে এনেছিল। মোটা মোটা দানা হওয়া সত্বেও ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। অন্যদিকে কযেকজন চাষি ছোট দানার রসুন রবিউল নামের পাইকারের কাছে ৪ টাকা করে বিক্রি করে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এবার রসুন চাষ হয়েছ। উপজেলার গাড়পাড়া, কাচিনিয়া, আগ্রা, ভাবকি, গোয়ালডিহি, হাসিমপুর, বালাপাড়া, ভেড়ভেড়ী, আঙ্গারপাড়া গ্রামে ব্যাপকভাবে রসুনের চাষ করা হয়েছে। তবে গোটা উপজেলায় এখন রসুনের হাওয়া বইছে। গড়ে প্রত্যেক পরিবার কম-বেশি রসুন চাষ করেছে।

রাণীরবন্দর গোছাহার হতে এসে গোয়ালডিহিতে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় মোঃ সবুজ ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এবার রসুন চাষ করেন। তার রসুনের ফলনও অনেক ভাল হয়েছে। বিঘায় ৪০-৫০ মণ রসুন হয়েছে তার। তবে প্রতি বিঘায় জমি চুক্তি, রসুনের বীজ, হাল-চাষ, কীটনাশক-রাসায়নিক সার, সেচ ও স্প্রে সহ যে খরচ হয়েছে তা ২ বিঘা জমির রসুন বিক্রি করেও উঠতেছে না। অধিক লাভের আশায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

উত্তমপাড়ার রমজানের ছেলে আমির উদ্দীন অন্যের জমি চুক্তিতে প্রায় ৫০ শতক জমিতে রসুন চাষ করেছেন। ৫০ শতকে বিঘা জমির রবি মৌসুমের চুক্তি মূল্য পনেরো হাজার টাকা। জমি চুক্তি, হাল-চাষ, কীটনাশক-রাসায়নিক সার, বীজ, সেচ ও স্প্রে সহ খরচ পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মতো। সেখানে রসুন হবে প্রায় ৪৫-৫০ মণ। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে ৪০ কেজি বিক্রি হচ্ছে চারশো টাকা এবং ঐ ৫০ শতকে আনুমানিক বিক্রি হবে ২০ হাজার টাকা। এতে (৫০ শতাংশে) ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
বিশিষ্ট রসুন ব্যবসায়ী মোঃ মোকছেদুর রহমান জানান, বর্তমানে রসুনের দাম তুলনামুলক কম হওয়ায় দৈনিক হাটে ১৫/২০ টন রসুন আমদানি করতেছি। তবে এ সময় সরকার যদি ভারত ও চীন হতে রসুন আমদানী বন্ধ করে তাহলেই রসুনের দাম বাড়তে পারে।

রসুনের বাজার দরের বিষয়ে মের্সাস শাপলা ট্রের্ডাস এর মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন, এ বছর রসুনের দাম নাই বললেই চলে। এ বছর প্রতি মণ ভালো রসুন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে কিনছি। আর রসুনের মান একটু খারাপ হলে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে কিনছি। তবে কিছুদিনের মধ্যে দাম বাড়তেও পারে।

এ ব্যাপারে খানসামা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, খানসামা উপজেলায় এ বছর রসুনের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে দাম সঠিক পাচ্ছে না কৃষকেরা। এ জন্য কৃষকদের বর্তমানে রসুন বিক্রি না করে সংরক্ষণের কথা বলেন।

(এসএএস/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test