E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 

 

ঈশ্বরদীতে ভালো দাম পেয়ে খুশি ঢ্যাঁড়স চাষিরা 

২০১৮ এপ্রিল ০৮ ১৬:১৫:১২
ঈশ্বরদীতে ভালো দাম পেয়ে খুশি ঢ্যাঁড়স চাষিরা 

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : এবারে ঈশ্বরদীতে ঢ্যাঁড়সের বাম্পার ফলন হয়েছে। উচ্চফলনশীল ও দেশীয় জাতের এসব ঢ্যাঁড়স স্থানীয় হাট-বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা বিক্রি করছেন । মৌসুমের শুরুতে ঢ্যাঁড়সের দাম ভালো পেয়ে চাষিরা খুশি । আউশ ধানের পরিবর্তে ঢ্যাঁড়স চাষ লাভজনক হওয়ায় বিগত এক দশক ধরে ঈশ্বরদীতে ঢ্যাঁড়সের আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। পতিত জমিতেও আবাদ হচ্ছে ঢ্যাঁড়স। ঢ্যাঁড়স চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পাইকারী বাজারে প্রতিমণ (৪০ কেজি) ঢ্যাঁড়স এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ হতে ৯০০ টাকায়। এই হিসেবে ২০ হতে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর ৭টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৭০৫ একর জমিতে ঢ্যাঁড়স চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর আবাদ হয় ৩ হাজার ৩৮৩ একরে। অর্থাৎ ৩২২ একর জমিতে এবারে ঢ্যাঁড়সের আবাদ বেশি হচ্ছে।

দেশি ছাড়াও ৪ জাতের উচ্চ ফলনশীল ঢ্যাঁড়স উৎপাদন হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে করস, পরশ প্লাস, সুমি ও নলক জাতের। ঈশ্বরদীর মুলাডুলি, ছলিমপুর, দাশুড়িয়া ইউনিয়নে এ জাতের ঢ্যাঁড়স আবাদ বেশি। এখানকার মাটি ঢ্যাঁড়স চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এই এলাকায় ঢ্যাঁড়সের আবাদ বেড়েই চলেছে। আউশ ধান আবাদ করে চাষিরা কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় তাঁরা এখন ঢ্যাঁড়স আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। করস ও পরশ প্লাস জাতের ঢ্যাঁড়স মৌসুম শুরু হয় মার্চের শেষে। এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৩০ মণ ঢ্যাঁড়স হয়। মৌসুমের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত চাষিরা এক বিঘা জমি হতে ৫০-৬০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়স চাষে খরচ পড়ে ১৫ - ২০ হাজার টাকা।

চাষিরা আরো জানান, অন্যান্য সবজির তুলনায় ঢ্যাঁড়সে কীট-পতঙ্গের আক্রমণ কিছুটা কম। শ্রমিক ও সারের খরচও অপেক্ষাকৃত কম। বাড়ির নারীরাও এসে সহজে ঢ্যাঁড়স তুলতে পারেন। এতে শ্রমমূল্য সাশ্রয় হয়। স্থানীয় মোকামে আনার পর ব্যাপারীরা নগদ টাকায় ঢ্যাঁড়স ক্রয় করেন। ফলে চাষিদের ঢ্যাঁড়স বিক্রি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। উপজেলার মুলাডুলিতে রয়েছে ঢ্যাঁড়সের সবচেয়ে বড় মোকাম। রবিবার সরেজমিনে মুলাডুলি সবজির আড়তে যেয়ে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনাসহ ১০-১২টি জেলায় পাইকাররা মুলাডুলি হতে ট্রাক বোঝাই করে ঢ্যাঁড়স চালান করছেন।

চাষিরা জানান, গত বছরও ঢ্যাঁড়সের দাম ভালো ছিল। এবারও তাঁরা ভালো দামে ঢ্যাঁড়স বিক্রি করছেন। মুলাডুলির গ্রামের ঢ্যাঁড়স চাষি হাতেম আলী জানান, এবারে ঢ্যাঁড়সের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২০ বিঘা জমিতে তিনি ঢ্যাঁড়স লাগিয়েছেন। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ঢ্যাঁড়সের দামও ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় সমস্ত ঢ্যাঁড়স বিক্রি করে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে তিনি জানিয়েছেন। মুলাডুলি আরেক কৃষক রুস্তম শেখ জানান, তিনি এবারে ১০ বিঘায় ঢ্যাঁড়স লাগিয়েছেন। ফলন ভালো হয়েছে। হাট-বাজারে ঢ্যাঁড়সের ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মুলাডুলি সবজির আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ৪ সপ্তাহ থেকে এই মোকামে ঢ্যাঁড়সের আমদানি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান ও বস্তা বোঝাই করে চাষিরা বিক্রির জন্য মুলাডুলিতে ঢ্যাঁড়স নিয়ে আসছেন। আড়তদার সমিতির অর্থ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবু জানান, মৌসুম শুরু হয়েছে। শুরুতেই চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতিমণ ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, সম্ভাবনাময় ও লাভজনক হওয়ায় এখানে ঢ্যাঁড়সের আবাদ বাড়ছে। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ঢ্যাঁড়সের আবাদ ওঠানামা করে। তবে লিচু ও শিমের পরই বিপুল পরিমাণ জমিতে ঢ্যাঁড়সের আবাদ করা হয়। এলাকার পাঁচ সহস্রাধিক কৃষক ঢ্যাঁড়স চাষের সাথে সরাসরি জড়িত। বিগত৩-৪ সপ্তাহ ধরে হাট-বাজারে উচ্চ ফলনশীল জাতের ঢ্যাঁড়স আসা শুরু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারে আবাদী জমির পরিমাণ এবং লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ঢ্যাঁড়স উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা পোষণ করেছেন।

(এসকেকে/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test