E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেগুনি ধানের চমক দেখালেন দুলালী বেগম

২০১৮ এপ্রিল ১০ ১৭:৪৬:৪৭
বেগুনি ধানের চমক দেখালেন দুলালী বেগম

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের আইপিএম কৃষক ক্লাবের কৃষাণি দুলালী বেগম। তিনি ২০১৭ সালে গাজীপুর জেলার তার এক আত্মীয়র নিকট হতে নতুন উদ্ভাবনী ধানের কথা শুনে সামান্য বীজ সংগ্রহ করে বোরো মৌসুমে মাত্র এক শতক জমিতে কৌতুহল বশত এই ধান চাষ করেন। চাষের পর ধানের রঙ্গে ভিন্নতা দেখে তার কৌতুহল আরো বেড়ে যায় এবং উৎপাদিত ধান থেকে ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমে তিনি স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রতি গোছাতে একটি করে চারা দিয়ে প্রায় ২৫ শতক জমিতে ওই ধানের আবাদ করে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ধান গাছটি দেখতে পুরোপুরিই বেগুনি। পেনিকেল বা শীষটি সাধারণ উফশী ধানের মতই। গড়ে প্রতি গোছাতে ২৫টি কুশি পাওয়া গেছে, যেখানে পার্শ্ববর্তী উফশী ক্ষেতে গড়ে ২১টি গোছা রয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিন পর পেনিকেল সাইজ এবং প্রতিটি পেনিকেলে কতটি ধান থাকবে সেটি জানা যাবে। কুশির সংখ্যা যেহেতু তুলনামূলক বেশি সে কারণে ফলন বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের মতই ১৪০ দিন হতে পারে। বেগুনী ধানের চাষাবাদের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন শত-শত কৃষক এক নজর দেখতে আসছেন।

কৃষাণি দুলালী বেগম জানান, এই ধানের চারা রোপনের পর তিনি উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন।

কৃষি অফিসারগণ তাকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য উৎপাদনকৃত সবটুকু ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহে রাখার জন্য ইতোমধ্যেই বীজ সংরক্ষণের পাত্র প্রদান করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান, এই বেগুনি ধানকে চীনে নিষিদ্ধ ধান বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন চীনের রাজ পরিবারের মধ্যেই কেবল এ ধানের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এই ধানের ভাত খেলে দীর্ঘজীবী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করত। রাজ পরিবারের বাইরে এই ধানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাজা ছিল মৃত্যুদন্ড। বিভিন্ন উৎসবে সম্রাট যোদ্ধাদের সম্মানে একত্রে এ ধানের ভাত খেয়ে থাকত।

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মাত্রার এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের কারণে এ ধানের রং বেগুনি হয়। ব্লু-বেরির চেয়েও এই ধানে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান বেশি। এ ধান বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন-ই রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

তাছাড়া ডায়াবেটিস ও অ্যালজাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর। এটি বাংলাদেশে চাষাবাদের তেমন নজির না থাকায় এ বিষয়ে গবেষণা আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন কৃষি অফিসার।

(এসআইআর/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test