E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হবিগঞ্জে ধানের বাম্পার ফলন ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ

২০১৮ এপ্রিল ৩০ ২২:০৯:৩৪
হবিগঞ্জে ধানের বাম্পার ফলন ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃৃষক-কৃৃষানী পুরোদমে ধান তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু কষ্টে উৎপাদিত জমির ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। 

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর অকাল বন্যার পানিতে হবিগঞ্জ জেলার বোরো ধানের ভান্ডার খ্যাত বানিয়াচঙ্গ, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবলের নিচু এলাকার হাওর অঞ্চলের কৃষকদের জমিগুলো তলিয়ে যায়। যার ফলে এ জেলার কৃষকরা গত বছর কাংখিত ধান উৎপাদন করতে পারেননি।

এবার জেলার ১ লাখ ১৫ হাজার জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও কৃষকরা জেলার ১ লাখ ২১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেন। জেলার বানিয়াচং- উপজেলার সুবিদপুর ও মক্রমপুর ইউনিয়নের ১৩০হেক্টর জমি শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অধিকাংশ এলাকার জমিতে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।

এবার বোরো থেকে জেলায় চাউল উৎপাদন হবে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জেলায় ২ থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাউলের চাহিদা থাকবে। অতিরিক্ত আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাউল মার্কেটে বিক্রি করা যাবে। তবে জমিগুলোর ফসল কাটতে প্রথমে কৃষকরা ধান কাটা শ্রমিক সংকটে পড়েন। শ্রমিক সংকট নিরসন করে কৃষকরা জমির ধান কাটলেও শ্রমিকের মজুরী দেয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ধান বিক্রি করতে গিয়ে কাঁচা ধানগুলো বাজারে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা মণ ও শুকনো ধান ৬শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন সরকার ধান চাউলের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করলেও কৃষকরা ধান চাউলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। কৃষকরা ধান চাউলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

বানিয়াচঙ্গ উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের কৃষক কাজল সরকার জানান, শিলাবৃষ্টিতে তাদের জমির ফলানো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এখনও প্রয়োজনীয় কাজে ধান বিক্রি করতে গেলে প্রতি মণ কাঁচা ধান ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। শুকনো ধান ৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হয়। এতে জমির চাষের খরচ হিসেব করলে আমাদের কোন লাভ থাকে না। অথচ সরকার বাহাদুর কৃষকদের ন্যায্যমূল্যের ধানের দাম নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমরা কখনও ন্যায্যমূল্য পাইনি। ন্যায্যমূল্যের ধানগুলো প্রভাবশালীরা গুদামে দিয়ে দেন।

বানিয়াচঙ্গের সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের কৃষক আলকাছ মিয়া জানান, তিনি এবার ৫০ কের জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। জমিগুলো চাষ করতে যে খরচ হয়েছে, বর্তমান বাজার মূল্যে ধান বিক্রি করলে আমাদের কোন লাভ থাকবে না। আমরা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে আহ্বান জানাবো কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রয় করতে পারেন সে ব্যবস্থা করার জন্য। অপরদিকে পাইকারী ধান ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন গ্রাম অঞ্চল থেকে ধান সংগ্রহ করলেও তারা সেগুলো বিক্রি করতে পারছেন না।

আতুকুড়া বাজারের পাইকারী ধান চাউল ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জানান, সরকার প্রতি মণ শুকনো ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে। আমরা কৃষকের ধানগুলো সাড়ে ৪শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা দরে ক্রয় করে মিল ব্যবসায়ীদের কাছে ৫৩০ টাকা দরেও বিক্রি করতে পারছি না। এছাড়া এখন শুকনো কোন ধান ক্রয় করা যাচ্ছে না। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুছ সালাম জানান, সরকার বোরো ধানের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করেছে। প্রতি কেজি ধানের মূল্য দেয়া হয়েছে ২৬ টাকা, সিদ্ধ চাউলের মূল্য ৩৮ টাকা ও আতপ চাউলের মূল্য ৩৭ টাকা। তিনি বলেন-কৃষকদের তালিকা তৈরী করে নীতিমালা অনুযায়ী কিছুদিনের মধ্যে ধান চাউল সংগ্রহ শুরু করা হবে। তবে এখনও কৃষকদের কোন ধরণের তালিকা তৈরী হয়নি। তিনি বলেন- আমরা আশা করি শ্রীঘ্রই ন্যায্য মূল্যে সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এবার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকেই ধান সংগ্রহ করবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

এদিকে গত দু’দিনের বৃষ্টিতে হাওরে কৃষকদের ধান কাটায় অনেকটা ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। শনিবার রাত থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত দিনব্যাপী হাওর অঞ্চলের কৃষকরা জমিগুলোর ধান কাটতে পারেননি এবং কৃষকদের খলার মধ্যে জমে থাকা ধান শুকাতে পারেননি। অপরদিকে নদীগুলো থেকে হাওরে প্রবেশের খাল দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে হাওরের জমিগুলোতে পানি বাড়ছে।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর বাল্লা সীমান্তে দু’দিনে ৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ৩ দিনে আরও ২ মিটার পানি বৃদ্ধি পাবে। তবে এ পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। তিনি দাবি করেন এখনও হাওরে কোন ধরণের পানি প্রবেশ করেনি। তিনি নিচু এলাকার জমিগুলোর ধান দ্রুত কাটার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

(এমইউএ/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test