E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চলনবিলে কৃষকের স্বপ্ন জলে শ্রমিক সংকট

২০১৮ মে ০৪ ১৬:০০:১১
চলনবিলে কৃষকের স্বপ্ন জলে শ্রমিক সংকট

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত দেশের সর্বোবৃহৎ বিল চলনবিল। টানা কয়েক দিনের ভারি বষর্ণে চলনবিলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই ও নাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অঞ্চলের লক্ষাধিক কৃষক এখন ফসল ঘরে তোলা নিয়ে আতঙ্কিত।

উজানের ঢলের পানি নাগর নদীর সারদানগর বাঁধ দিয়ে চলনবিলে প্রবেশ করে প্রায় চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল, লালুয়ামাঝিড়া, মাকোরসোন, কামাসোন, ভেটুয়া সিংড়া উপজেলার আয়েশ, বিয়াস, কদমতলী, গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা, রুহাই, খুবজিপুর সহ অসংখ্য গ্রামের মাঠগুলোতে কোমড় পানিতে নেমে কৃষক পাকা বোরো ধান কাটছেন।

অতি কষ্টে সেই পানির মধ্যে দিয়েই ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আর এ জলাবদ্ধতার জন্য কৃষক দায়ী করছেন এলাকার প্রভাবশালীদের অপরিকল্পিত ভাবে নদী, খাল ভারাট করে বাড়ী নির্মান ও পুকুর খননকে।

চলনবিলের এলাকার তাড়াশ ও সিংড়া উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এ বছর চলনবিলে মিনিকেট, কাটারি ভোগ, বি-আর ২৮, বি-আর ২৯ জাতের বোরো ধান বাম্পার ফলনের সম্ভবনা থাকলেও ধান কাটার ভরা মৌসুমে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ডুবে গেছে চলনবিলের নিম্নঅঞ্চলের পাকা বোরো ধান।

এদিকে শ্রমিক সংকটে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে চলনবিলের কৃষকরা। ফলে অকালে ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। তাছাড়া শ্রমিকদের জন্য কৃষকদের গুণতে জন্য বাড়তি টাকা।

তাছাড়া নাটোরের সিংড়া উপজেলার আত্রাই এবং নাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক এখন আতঙ্কিত। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নাগর নদীর সারদানগর বাঁধ
দিয়ে চলনবিলের ফসলি জমিতে প্রতিনিয়ত পানি প্রবেশ করছে।

এতে সারদানগর এলাকার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকে তাড়াশ উপজেলার মাঠগুলোতে হাটু পর্যন্ত পানি থাকার ফলে কৃষকদের ধান কাটতে শ্রমিকদেরকে প্রতিমণ ধানে ২০ কেজি করে মজুরী দিতে হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরজমিনে সিংড়া উপজেলার সারদানগর, চৌগ্রাম, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,ভারি বর্ষণের পানি ফুসে উঠে চলনবিলের কৃষকের স্বপ্ন যেন এখন পানির নিচে।

এছাড়াও ঝড় বাতাসে চলনবিলাঞ্চলের আধা কাঁচা-পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়ায় বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে চলনবিল এলাকার কৃষকরা। সিংড়া উপজেলার চৌগ্রামের আতাহার আলী, আব্দুস সোবাহান বলেন, চলনবিলের অধিকাংশ কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। হঠাৎ টানা বর্ষণ ও ঢলের পানিতে তাদের ফসল ডুবে যাওয়ায় তাদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। এখন তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কিভাবে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন।

এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলছে এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় অচিরেই অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন এবং পানি প্রবাহের মুখে বাড়ি
নির্মান কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ উপজেলার কৃষকদের ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও জমির মধ্য পানি থাকায় শ্রমিক মজুরী দ্বীগুণ। এতে কৃষকেরা ক্ষতির সম্মখীন হবে।

সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা বলেন, তার ইউনিয়নের সারদানগর বাঁধ দিয়ে চলনবিলে পানি প্রবেশ করায় প্রায় শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়াও নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন চৌগ্রাম এলাকায় বেশকিছু ধান ডুবে এই এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাড়াশ উপজেলার ভাদাস গ্রামের আবুল কালাম জানান, প্রসাশনের উদাসীনতার কারনে এউপজেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কারন প্রভাবশালীরা বিগত ৫বছরে এ উপজেলায় খাল বন্ধ করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করছে।

অপরদিকে যত্রতত্রভাবে পুকুর খনন করায় পানি নিষ্কাশনের ব্রীজের মুখ বন্ধ করাসহ পানি প্রবাহের খাল বন্ধ করার ফলে পানি বের হতে না পেরেই ধানী জমিগুলো বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে। সেই কৃষকের স্বপ্নগুলো মরে যাচ্ছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও বাতাসে তার উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ শুয়ে পড়েছে। আর যারা নিচু খাল অথবা বোরো ধান চাষ করেছেন শুধু তাদের ধানই তলিয়ে গেছে। তবে এখন থেকে রোদের দেখা মিললে বৃষ্টির পানি শুকিয়ে কমে যাওয়ার ফলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত কম হবে।

(ওএস/এসপি/মে ০৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test