E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

অকাল বর্ষণ ও শ্রমিক সংকট

ইরি-বোরো ধান নিয়ে দিশেহারা গৌরীপুরের কৃষকরা

২০১৮ মে ১১ ১৬:২৪:৫৩
ইরি-বোরো ধান নিয়ে দিশেহারা গৌরীপুরের কৃষকরা

শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : অকাল বর্ষণ, শ্রমিক সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় চলতি ইরিবোরো মৌসুমে পাকা ধান ঠিকমত ঘরে তোলতে পারছে না কৃষক। প্রবল বর্ষণের ফলে কোথায়ও পানির নিচে একেবারে তলিয়ে গেছে ধান, আবার কোথাও ধানের সামান্য আগা দেখা যায়। যে ধান কৃষক ঘরে এনেছেন সেই ধানেও পচন ধরেছে। ধান কাটার খরচই মিলছে না। ফসলি জমিতে পাকাধানের এ অবস্থা দেখে ও পঁচা ধানের গন্ধে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কৃষকরা। 

অকাল বর্ষণ, বজ্রপাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে প্রবল শ্রমিক সংকট। প্রতি কাঠা (১০শতাংশ) জমির ধান কাটাতে শ্রমিককে মজুরি দিতে হচেছ ১হাজার ৫শ টাকা। ধান মাড়াই খরচ ৪শ টাকা। ধান হয়েছে প্রায় ৪/৫মন। রোদ না থাকায় কাচা ধান শুকাতে পারছে না। ঘরে চারা গজিয়ে যাচ্ছে ও পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রামগোপালপুর ইউনিয়নের কৈট্টাপুরি বিলে কৃষক সামছ উদ্দিন ডুবন্ত ধান যতোটুকু সম্ভব কেটে কলাগাছের ভেলায় করে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে আনতে খরচ পড়ছে প্রতি এক একরে ১৪হাজার টাকা।

তিনি জানান, আধাপাকা ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানের শীষটুকুও দেখা যায় না। এ ধান পানির নিচে রেখে ঘুম আসে না। কাঁচি দিয়ে কেটে আনার চেস্টা করছি। বর্ধনপাড়া গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান হাঁটুপানিতে ধান কাটচ্ছেন। বাড়ির উঠানে দাঁড়াতেই ভেসে আসছে পঁচা ধানের গন্ধ।

উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের ভালকি বিলে প্রায় ১০একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বোকাইনগর ইউনিয়নেও অনুরূপ অবস্থা। কৃষকের ঘরে ধান নষ্ট হচ্ছে। সহনাটী ইউনিয়নের জলবুরুঙ্গা, ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালী বিল, অচিন্তপুর ইউনিয়নের সুরিয়া ও মাওহা ইউনিয়নের প্রায় সহস্রাধিক কৃষকের ধান পানির নিচে হাবুডুব খাচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও বাজারে ধানের মূল্য কম থাকায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. মো. সাদিকুর রহমান জানান, এ উপজেলা চলতি বোরো মৌসুমে ২১হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিনে উপশী জাতের ও হাইব্রিড জাতের ১হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদিত জমিতে ধানের অনুপাতে চাল উৎপাদন হবে হাইব্রিড ৫ হাজার ৪০ মেট্টিকটন, উপশী জাতের ১৯হাজার ৮১০ মেট্টিক টন। কৃষি বিভাগের জরিপ অনুযায়ী বোরো মৌসুমের ৮০ শতাংশ ধানই কাটা হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন সমস্যা হবে না।

তিনি আরো জানান, ধান পানিতে তলিয়ে গেলেও কৃষক কেটে নিয়ে আসছেন। কোন বিলেই শতভাগ তলিয়ে যায়নি। তারপরও যেসকল বিলে কৃষক খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতি গৌরীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান জানান, অকাল বৃষ্টির ফলে নিম্নাঞ্চলের ক্ষেতের ধান তলিয়ে গেছে, তাছাড়া কেটে আনা ধান শুকাতে পারছে না। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছে কৃষক। উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারে ধানের মূল্য কম থাকায় কৃষক আবারও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কৃষকের এ ক্ষতি থেকে বাঁচাতে প্রণোদনা দেয়া দাবি জানান।

(এসআইএম/এসপি/মে ১১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test