E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কোঁদালীছড়ায় আমনের বাম্পার ফলন, কৃষকের বাঁধভাঙা হাসি

২০১৮ নভেম্বর ১৯ ১৪:৫০:৫৫
কোঁদালীছড়ায় আমনের বাম্পার ফলন, কৃষকের বাঁধভাঙা হাসি

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : প্রায় এক যুগ ধরে বছরের পর বছর জুড়ে আমন কিংবা বুরো ধানের ফলন হয়নি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রীমঙ্গল সড়ক এবং কোদালীছড়ার কোল ঘেষে জগন্নাথপুরের ঐতিহ্যবাহী খাইঞ্জার হাওরে। প্রতি বছর ভাল ফলনের আশায় কৃষকরা আমনের চারা রোপন করলেও জলাবদ্ধতার কারণে কষ্টের অর্থ আর কঠিন শ্রমের ঘামঝরানো ফসল আমন ধান ঘরে তুলতে পারেননি। বছরের পর বছর বুক ভরা আশা নিয়ে চারা রোপন করলেও পরবর্তিতে খাল ভরাট থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারনে শুষ্ক মৌসুমে তা ঘরে উঠানো সম্ভব হয়না।

হাওরে কৃষি বিপর্যয়ের এই প্রেক্ষাপটে জগন্নাথপুর,গোমরাহ,গন্ধবপুরসহ আশপাশের গ্রামের সাধারণ কৃষকদের হতাশা দীর্ঘদিনের। গত প্রায় একযোগ যাবত এই হাওরে আমনের দেখা মেলেনি । একযুগ পূর্বেও প্রতি বছর বুরো ও আমনের বাম্পার ফলন হতো হাজারো কৃষক অধ্যুষিত ঐতিহ্যবাহী খাইঞ্জার হাওরে। হাওরের প্রাণ ও হাওরের কৃষি জমির অভ্যান্তরে পানি প্রবাহের একমাত্র খাল কোঁদালীছড়া খনন না হওয়ার কারনে এবং গত কয়েকবছর যাবত এই খালের নাব্যতা সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করায় খালটি বলতে গেলে একেবারে কৃষি জমির সাথে একাকার হয়ে যায়। প্রতি বছর কৃষকরা আশা নিয়ে আমন রোপন করলেও বর্ষার জলাবদ্ধতায় তা হতাশায় রূপ নেয়।

অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে এবছর পুরো হাওর জুড়ে আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় বাঁধভাঙ্গা আনন্দে এই হাওর এলাকার কৃষকরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় খাইঞ্জার হাওরে কোথাও কোন পতিত জমি নেই, পুরো হাওর জুড়ে শুধুই চোখ ধাঁধাঁনো সোনালী ফসল আমন তার চিরায়ত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়।

এখন চলছে শীতকালের পূর্ণ আমেজ। ঐতিহ্যগত ভাবে শীতকালে এই অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে ঘরে বিন্নি চালের খই, রসের পিঠা, সন্দেশ, (হান্দেশ) নুনেরবড়া, (লবনেরবড়া) চিতই পিঠা, পাটিসাপ্টা, (পাটিবলা) চইপিঠাসহ নানা ধরনের পিঠাপুলির প্রাণবন্ত উৎসব চলে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। তাই অগ্রাহয়ন মাসে এই হাওরে শুধুই কি আমনের ফলন ? না এই হাওরে কৃষকরা আমন ছাড়াও নানা স্বাদের পিঠাপুলির জন্য মজাদার বিন্নি ধান, স্বর্ণমুশরী, আসাম, কালিজিড়াসহ নানান জাতের ধান রোপন করে থাকেন।
আমনের মধ্যেও রয়েছে নানা প্রজাতির ধান, তার মধ্যে বি-১১, বি-৪১,বি-৫৪, বি-৫২, বি-৪৯ অন্যতম।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফলন ভাল হওয়ায় এবছর প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৫ মন আমন ধান পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা তাদের, তবে কোথাও কোথাও একটু কম বেশিও হতে পারে।

এবছর এই হাওরে স্বরণকালের সবচেয়ে বেশি কৃষি বিপ্লবের পিছনে স্থানীয় কৃষকরা দু’টি কারন মনে করছেন । ১টি কারন হল নানা কারনে কোঁদালীছড়া খনন কাজ পিছিয়ে গেলেও এবছর বৃষ্টিপাত কম থাকার কারনে জলাবদ্ধতা তেমন একটা ছিলনা, অপর কারনটা হল কোঁদালীছড়া খালের দীর্ঘ দুই কিলোমিটার খনন হওয়ার ফলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা।

হাওরের জলাবদ্ধতা ও কোঁদালীছড়া খালের নাব্যতা সঙ্কট মোকাবেলায় এ-বছর মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুর রহমান এর যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমানের নানা উদ্যেগের ফলে খাল পূঃর্ণ খনন করে নব্যতা সঙ্কট দূর করা হয়। তবে এসব প্রদক্ষেপের পিছনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ , সাংবাদিক, দূর্নীতিমুক্তকরন বাংলাদেশ ফোরামসহ দীর্ঘদিন যাবত কোঁদালীছড়ার ঐতিহ্য ও খাল রক্ষায় আন্দোলনকারী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কর্তৃক কোঁদালীছড়া রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় কৃষক রহমত মিয়া (৬০) জানান, কত কয়েক বছর যাবত হাওরে অগ্রাহয়ণ মাসে কৃষকরা আমন তুলতে পারেননি, এর কারন জলাবদ্ধতা। এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আর খাল খনন করার কারনে হাওরে জমে থাকা পানি দ্রুত চলে যাওয়ার ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।

তিনি বলেন, এক সময়ে এই কোঁদালীছড়া খালে বর্ষায় পলো বাওয়ার উৎসব হতো, তখন খাল অনেক প্রশস্ত্র ছিল, এসব এখন শুধুই স্মৃতি আর ইতিহাস। ধীরে ধীরে খালের দু পাড়ের অনেক অংশ বেদখল হওয়ায় খালটি ছোট হতে থাকে এবং ময়লা আবর্জনা বাড়তে থাকলে খালটি ভরে যায়। তিনি বলেন এবছর খালটি খননের কারনে হাওরে জমে থাকা জলাবদ্ধতা দূর হলে কৃষকরা উপকৃত হন, একারনে এবার এই হাওরে আমনের ভাল হয়েছে, কৃষকরাও অনেক খুশি। রহমত মিয়ার মত এই গ্রামের অন্য কৃষকরাও এবার আমনের বাম্পার ফলন হওয়া বেশ আনন্দে আছেন।

(একে/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test