E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পদ্মার চরে সোনার ফসলে ঈশ্বরদীর কৃষি অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে

২০১৯ জানুয়ারি ২৬ ১৫:৩৩:১০
পদ্মার চরে সোনার ফসলে ঈশ্বরদীর কৃষি অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা) : পদ্মার বুকে জেগে উঠা সুবিশাল চরে এখন ফলছে সোনার ফসল। আর এই সোনার ফসলে ঈশ্বরদীর কৃষি অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। ঈশ্বরদীর পদ্মা তীরবর্তী গ্রাম ও নদীতে জেগে উঠা বিস্তির্ণ চর জুড়ে এখন ফলছে সোনা আর সোনা। নদীর বুক জুড়ে ধূ ধূ বালুচরের জমি একসময়ে পতিত থাকলেও এখন সেখানে বছর জুড়েই ফলছে নানা ফল-ফসলের সমারোহ।

ঈশ্বরদীর পদ্মা নদী তীরবর্তী লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের লক্ষ্মীকুন্ডা, দাদাপুর, কামালপুর, চরকুড়–লিয়া, শান্তিনগর, ডিগ্রীর চর,চরমাদিয়া,বাটিকামারা, রাজারসাম, জয়েনপুর, সাঁড়া ইউনিয়নের সাহেবনগর চর, মোল্লা পাড়া ও বিলবামনী, পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর, সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি, চরকুড়লিয়া ও মালোপাড়াসহ ১৫টি গ্রাম ও চরের জমি চাষাবাদ করে কৃষকরা এখন নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার সাথে সাথে ঈশ্বরদীর অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করেছে।

লক্ষীকুন্ডার চরের জমি নিয়ে এক সময় প্রতি বছর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলেও বিগত এক দশক বছর সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান থাকায় হাসি মূখে কৃষকরা মনের আনন্দে ফসল ফলাচ্ছে। সরেজমিন জানা যায়, লক্ষীকুন্ডার কামালপুর, দাদাপুর, চরকুড়–লিয়া, শান্তিনগর ও ডিগ্রী চরের জমি দখল নিয়ে দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে থেকে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল। জমি দখল-বেদখল নিয়ে কয়েক দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালে কামালপুর চরে জমিতে মশুর তোলা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া মামলা-মোকদ্দমায় অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। এরপর চরের জমি নিয়ে লক্ষীকুন্ডায় আর কোন সংঘর্ষ বাঁধেনি। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ জানান, এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ উদ্যোগ নেয়ায় চরের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে।

এলাকাবাসীরা জানান, দ্বন্দ্ব-বিবাদ ভুলে এখন তাঁরা কৃষি আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। বন্দোবস্ত নিয়ে প্রান্তিক কৃষকেরা সেই জমিতে লাউ, পেঁপে, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ধনিয়া পাতা সহ বিভিন্ন শাকসবজি ও আখ, মশুর, খেসারি, গমসহ নানা ফসলের পাশাপাশি পেয়ারা, লিচু, কলা ও বরইসহ বিভিন্ন ফলের বাগান ও খামার গড়ে তুলেছেন। চরাঞ্চলে কলার আবাদ এখন ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।

উৎপাদিত ফল ও ফসল বিক্রি করে প্রান্তিক কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। কয়েক হাজার কৃষক এই আবাদের সাথে জড়িত। চরের এই বিশাল মাঠ জুড়ে চোখে পড়ে শুধু সবজি, ফল আর ফসল । নানা রং ও স্বাদের সবজি ও ফসল কৃষকের কাছে সোনার মত দামি।

কামালপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, চরের জমিতে এখন সোনা ফলছে। তারা এখন মারামারি বিভেদ ভুলে চাষাবাদে মনযোগ দিয়েছেন। মারামারি নিরসনের জন্য তিনি এলাকার সংসদ সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। দাদাপুর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, চরের জমিতে চাষ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। বর্গা নেয়া জমিতে এবছর প্রচুর সবজির আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করছে এবং সংসারে আর কোন অভাব নেই।

সাহাপুরের ইউপি মেম্বার রুহুল আমিন জানান, চরের মানুষ কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। ফল-ফসলে চরের জমি ভরপুর। কৃষি ফসলকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর কয়েকটি পাইকারী সবজি বিক্রয়ের হাট গড়ে উঠেছে। তবে সবজির ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ।

সাহাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতলেবুর রহমান মিনহাজ জানান, সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষিতে বেশ সমৃদ্ধ। এই ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ব্যাপক সবজির আবাদ হয়। সবজি আবাদ করে কৃষকরা এখন স্বাবলম্বী ।

সর্বাধিক চরের জমি রয়েছে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের ভূমি অফিস সুত্রে জানা যায়, লক্ষীকুন্ডায় নদী ভাঙ্গনে জেগে উঠা চরের জমি রয়েছে ৬১২৮.১০ হাজার একর। এরমধ্যে ১০৪৪.২৭ একর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। নদীর জেগে উঠা জমির মালিকরা চাষাবাদের জন্য প্রান্তিক কৃষকদের বাৎসরিক ভাবে বন্দোবস্ত দিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, চরাঞ্চলের ফসল ঈশ্বরদীর কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখছে। চরের মাটি পলিযুক্ত হওয়ায় উৎপাদিত ফসলের রোগ বালাই কম হয় এবং সার-কীটনাশকও কম দিতে হয়। ফলন হয় খুব ভাল। উৎপাদিত ফসলের সুষ্ঠু বাজারজাত করণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পেয়ে অতিমাত্রায় লাভবান হবে। বাজার ব্যবস্থার বিষয়টি সরকারিভাবে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(এসকেকে/এসপি/জানুয়ারি ২৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test