E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বোরো মৌসুমেও সেচের পানি না পেয়ে বিপাকে চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা 

২০১৯ জানুয়ারি ২৭ ১৬:৩৪:৪৭
বোরো মৌসুমেও সেচের পানি না পেয়ে বিপাকে চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা 

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বোরো মৌসুমে আবাদের জন্য কৃষকেরা পানির জন্য ব্যাপক আগ্রহে চেয়ে থাকে জিকে ক্যানেলে সেচ প্রকল্পের উপর। ধানের দাম যেমন কম, সার, তেল, বীজসহ নানা ধরণের ফসলের সামগ্রী মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় অনেকেই জিকে ক্যানেলের সেচের উপরে নির্ভর করে কৃষকরা। 

ইতোমধ্যে বোরো ধানের আবাদের জন্য প্রয়োজনীয় চাষের পানি সংগ্রহ করছে সেলো ইঞ্জিন ও বৈদ্যুতিক মটর থেকে। এক সময় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা সেচ প্রকল্পের অধীনে কয়েক লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হতো। সেচের মাধ্যমে কুষ্টিয়াসহ ৫টি জেলার চাষীরা বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করতো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারণে জিকের অধীনে বিভিন্ন ছোট বড় ক্যানেল খনন কাজ না করায় ভরাট হয়ে গেছে ক্যানেলগুলো। ফলে পানির অভাবে থমকে গেছে চাষীদের মাঠের বোরো চাষসহ লক্ষাধিক একর ফসলের আবাদ। বর্তমানে বোরো মৌসুমেও চাষের জন্য সেচ প্রকল্পের পানি না পেয়ে বিপাকে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও যশোর জেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর ১ কিলোমিটার ভাটিতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের কাজকর্ম শুরু করে। ১ হাজার ৬শ' ৬৫ কিলোমিটার খাল দিয়ে বছরে দু'বার সেচ সুবিধা দেয়া হতো। সে সময় জিকের ক্যানেলে প্রায় সময়ই পানি থাকতো। কিন্তু পানি আগ্রাসনের কারণে একদিকে ভারতের ফারাক্কা পানি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে জিকের খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ঠিকমত পানি না থাকায় জিকের খালগুলো হারিয়েছে তার যৌবন। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা সেচ প্রকল্প বর্তমানে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এ প্রকল্পের ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল ও ১ হাজার ৪শ' ৬২ কিলোমিটার শাখা খাল পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে থমকে গেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার চাষীদের মাঠের বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ।

গত ২০১৫ সাল থেকে আমন ও বোরো মওসুমে আলমডাঙ্গা উপজেলা অঞ্চলে নির্বিঘ্ন ভাবে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমি ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। এই অঞ্চলে ধান, পাট, তামাক, পান, ভুট্টার ব্যাপক পরিমাণের চাষ হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা দেশের মধ্যে সর্বত্তম উচ্চতাময় অঞ্চল হওয়ায় এখানে চাষের জন্য ব্যাপক পানির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সঠিক তদারকি আর পূর্ণ খনন না করার জন্য এই সকল খাল চলে যাচ্ছে ভুক্তভোগীদের দখলে। এই অঞ্চলে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমিতে পূর্ণ খনন করে সেচ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করলেও নানা কারণে তা ব্যাহত হয়। ফলে জিকে সেচ প্রকল্পের অধীনে ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমি অনাবাদী থেকে যায়। ফলে কুষ্টিয়াসহ ৫ জেলার লাখ লাখ কৃষকের জীবন জীবিকাসহ ৫ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে । অনাবাদী থাকছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষি আবাদসহ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পানি শূন্য হয়ে পড়ায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছে কুষ্টিয়ার জিকে খাল সংলগ্ন মানুষ। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রধান খালসহ শাখাখালগুলো খনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে কৃষকদের পানির নিশ্চয়তাদান করবেন এটাই প্রত্যাশা আলমডাঙ্গাবাসীর।

(টিটি/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test